ইশান্ত শর্মার করা ফুল লেংথের বল। দারুণ এক কাভার ড্রাইভে লিটন দাস তা বাউন্ডারিতে পাঠালেন অবলীলায়। আইপিএল অভিষেকের প্রথম বলেই বাউন্ডারি! বিশ্বের সেরা ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলতে নেমে ঐ এক শটেই স্নায়ুচাপ কমে আসার কথা লিটনের। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাসী শুরু পরে আর ধরে রাখতে পারেননি এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
পরের ওভারেই মুকেশ কুমারের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল লেগের দিকে টেনে খেলতে গিয়ে আউট হন লিটন। ফলত, ৪ বলে ৪ রানে থেমে যায় তাঁর প্রথম আইপিএল ইনিংস। ব্যাট হাতে এমন ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে লিটন আবার উইকেটের পিছনে এ দিন চূড়ান্ত হতাশায় ভাসিয়েছেন দলকে। ললিত যাদব আর অক্ষর প্যাটেলকে স্ট্যাম্পিং করার সহজ সুযোগ মিস করেছেন।
সেই দুটো মিস না হলে কলকাতা ম্যাচটা জিততে পারতো কিনা সেটা ভিন্ন আলাপ। তবে নিজের আইপিএল অভিষেকের দিনে বেশ নড়বড়েই ছিলেন লিটন। শুরুতেই চার মেরে আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু করলেও বাকিটা সময় জুড়ে বেশ স্নায়ুচাপেই ছিলেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। সেটা দৃশ্যত হয়েছে পুরো ম্যাচেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত এক বছর ধরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকার পুরস্কার স্বরূপ আইপিএলে দল পেয়েছিলেন লিটন। ক্রিকেটের সেরা ফ্রাঞ্চাইজি লিগ বলে কথা! লিটন দাসও তাই স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন। লিটনের সেই উচ্ছ্বাস জলোচ্ছ্বাসের মতো রূপ নিয়েছিল, যখন দেখা গেল কলকাতার প্লেয়িং ইলেভেন আছেন লিটন দাস। তবে আইপিএল অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখার মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি লিটন। ব্যাটার কিংবা উইকেটরক্ষক – কোনো ভূমিকাতেই নিজের স্বরূপ মেলে ধরতে পারেননি তিনি।
দেশ পেরিয়ে বিশ্ব মঞ্চের জমকালো আসরে গিয়েই লিটনের হতশ্রী পারফরম্যান্স। মোটে একটা ম্যাচ, এত ছোট স্যাম্পল সাইজ দিয়ে বিবেচনা কিংবা চূড়ান্ত মন্তব্যে পৌছানোই উচিৎ না। তারপরও যতটা আঁচ করা যায়, বাইরের দেশের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার অনভ্যস্তাতেই মূলত লিটন সেভাবে নিজেকে রাঙাতে পারেননি। অবশ্য আরেকটি ব্যাখ্যাও দাঁড় করানো যায়— জাস্ট আ ব্যাড ডে এট অফিস।
দেশের হয়ে এর চেয়েও বাজে দিন কাটিয়েছেন লিটন। তাই কলকাতার হয়ে লিটনের প্রথম ম্যাচের পর তাঁকে নতুন করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কিছু নেই। তবে এ ক্ষেত্রে একটা নতুন ভাবনার উদয় হয়। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিশ্বায়নে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কি আসলেই এ সকল টুর্নামেন্ট থেকে এখনও দূরে থাকা উচিৎ?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটা পরিসংখ্যান সামনে আনা উচিৎ। সেটি হলো, ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল যে ৪৪ জন ক্রিকেটার খেলেছিলেন, তাদের মধ্যে ৩৮ ক্রিকেটারেরই আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা ছিল।
অর্থাৎ আইপিএলের অভিজ্ঞতাটা প্রভাব ফেলছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। আইপিএলের প্রতি দলে মাত্র চারজন করে বিদেশি খেলার সুযোগ পান। আর সেই চার জনের উপর দলগুলো থেকে শুরু করে ক্রিকেট অনুরাগীদের প্রত্যাশা থাকে প্রায় আকাশসমান।
তো এমন চাপ ডিঙিয়েই বিদেশি ক্রিকেটাররা নিজেদের স্নায়ুবিক শক্তিতে আরো রসদ জোগাতে পারেন, আরো দৃঢ় হতে পারেন। আর সেটিই একটা সময় পর, বড় মঞ্চে চাপের ম্যাচে সহায়ক ভূমিকায় আবর্তিত হয়।
কিন্তু বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলার সুযোগই পান কজন? টানা পারফর্ম করার কারণে বহু বছর পর সাকিব, মুস্তাফিজের পর কেউ একজন এবারের আইপিএলে সুযোগ পেয়েছেন। যদিও অভিষেকে নিজেকে রাঙাতে পারেননি লিটন।
অবশ্য সুযোগ এখনো ফুরিয়ে যায়নি। পরের ম্যাচেও একাদশে থাকার কথা লিটনের। তবে সমস্যা হলো, আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য আগামী ১ মে’র আগেই দেশে ফিরতে হবে লিটনকে। সে হিসেবে আইপিএল নিজেকে প্রমাণে মঞ্চ হিসেবে আর বড়জোর দুই একটা ম্যাচে সুযোগ মিলতে পারে লিটনের।
আর এখানেই লিটনকে নামতে হবে বড় পরীক্ষায়। কারণ আগামী আসর পর্যন্ত নিজেকে কলকাতার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হলে একটা ম্যাচে পারফর্ম করতেই হবে তাঁকে। কারণ সামনের কয়েকটা ম্যাচই আইপিএলে লিটনের ভবিষ্যৎ নির্ধারন করে দিবে।
লিটনের সামর্থ্য আছে। দারুণ সব ইনিংসে প্রতিপক্ষে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার অনবদ্য ক্ষমতা রয়েছে। আইপিএল মঞ্চেও সেই দৃশ্যায়নের পুনরাবৃত্তি ঘটনার সক্ষমতা আছে। শুধু প্রয়োজন, নিজেকে টিকিয়ে রাখার এ লড়াইকে অসম কোনো চাপ না ভাবা। এই চাপ জয় করলেই লিটন এগিয়ে যাবেন, একই সাথে এগিয়ে যাবে কলকাতা নাইট রাইডার্সও।