প্রত্যাবর্তনের রঙ লাল

ওরিগি বলে ধারাভাষ্যকারের গগন বিদারী চিৎকার আর আলেক্সান্ডার আরনল্ডের করা কুইক কর্নার কিক কি আদৌও ভুলেছে ফুটবল সমর্থকেরা। লিভারপুলের ঘরের মাঠ অ্যান্ডফিল্ডে সেবার কি দারুণ, অভাবনীয় কামব্যাক দেখেছিল পুরো বিশ্ব৷ গতকাল রাতেও এমন এক অসাধারণ কামব্যাক দিয়েছে অল রেডরা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানকে ঘরের মাঠে আতিথিয়েতা দেয় ইংলিশ জায়েন্ট লিভারপুল। নিজেদের মাঠে, সমর্থকে ভরা স্টেডিয়ামে স্বভাবতই ফেভারিট অল রেডরা।

স্বাভাবিক ঘরের মাঠের সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাইবে লিভারপুল। ৬২ শতাংশ বল দখন অন্তত লিভারপুলের আধিপত্যরই প্রমাণ। শুরু থেকেই আক্রমণ চালাতে থাকা লিভারপুল গোল পেয়ে যায় ম্যাচের নবম মিনিটেই। সেই কুইক কর্ণার করার কারিগরি আলেক্সান্ডার আরনল্ড এবারে নিজেই করে বসলেন গোল।

ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে ডান পাশ থেকে সজোড়ে কিক করলে তা মিলান খেলোয়াড় ফিকাও তোমরির পায়ে লেগে বল জড়িয়ে যায় জালে। আনন্দে ফেটে পড়ে পুরো অ্যান্ডফিল্ড। সমর্থকরা ধরেই নিয়েছিলেন খুব সহজে জিতে যাবেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচ৷ কিন্তু খেলা তো তখনো বাকি, নাটক তো তখনো ক্লাইম্যাক্সে যাওয়া বাকি।

আক্রমণ অব্যাহত রাখে লিভারপুল। বরং স্রোতের বিপরীতে ম্যাচের ৪২ মিনিটে মিলানের ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার আনতে রেবিচ গোল করে বসেন তারই সতীর্থ রাফায়েল রিয়াওয়ের বাড়ানো বলে। ১-১ সমতা।

ঠিক তার দুই মিনিটের মাথায় গোল করেন ব্রাহিম ডিয়াজ। থিও হার্নানদেজের গোল অভিমুখের শট ঠেকিয়ে দেন লিভারপুল ফুলব্যাক রবার্টসন। সেই বলেই পা লাগিয়ে গোললাইন অতিরক্রম করান ব্রাহিম৷ ১-২ তে পিছিয়ে বিরতিতে যায় লিভারপুল।

বিরতি থেকে ফিরে আক্রমণের হার আরো বাড়িয়ে দেয় জার্মান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের শীর্ষরা। গোলের দেখা পেতে বেশি একটা অপেক্ষা করতে হয়নি। দলের প্রাণভোমরা মোহাম্মদ সালাহ ম্যাচের ৪৮ মিনিটে সমতায় ফেরান। ওরিগির করা বুদ্ধিদীপ্ত চিপ বলে বাম পায়ের আলতো ছোয়ায় মিলান গোলকিপার মাইক মাইগনানকে বোকা বানান সালাহ। অ্যানফিল্ডে আবারও উত্তেজনা। সমতা ২-২ এর।

কামব্যাক প্রয়োজন আর দলের ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন কিছু করবেন না তা কি করে হয়? তিনি করলেন। তিনি জয় ছিনিয়ে আনলেন। ক্যাপ্টেন লেড দ্য টিম ফ্রম দ্য ফ্রন্ট। কর্ণার কিকের বল মিলান খেলোয়াড়দের মাথায় লেগে ঠিক ডি-বক্সের বাইরে এসে পড়ে। সেখানে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা হেন্ডারসন ডানপায়ের ভলিতে ম্যাচের ৬৯ মিনিটে আদায় করে নেন দলের হয়ে তৃতীয় গোল এবং জয়সূচক।

ম্যাচের প্রতিটি সেক্টরে ডমিনেট করেও স্রোতের বিপরীতে গোল খেয়ে বসা টিম, মধ্য বিরতিতে কি এমন টোটকা পেলো গুরু ক্লপের কাছ থেকে তা এক রহস্যের বিষয়। এমন টোটকাই প্রয়োজন ম্যাচ জিততে, এমন টোটকাই প্রয়োজন সমর্থকদের মন জিততে, আর পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরু করতে। ইয়ুর্গেন ক্লপ একজন ম্যাজিশিয়ান।

লিভারপুল ইজ ক্যামব্যাক কিং – কথাটা লিভারপুল আগেও প্রমাণ করেছে। সেটাও এই ইউরোপিয়ান ফুটবলের সেরা মঞ্চ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই, খোদ বার্সেলোনার বিপক্ষে। এবার গ্রুপ পর্যায়েই আভাস মিলল, ফুরিয়ে যায়নি লিভারপুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link