হরভজন ‘ভাজ্জি’ সিং সব ধরনের ক্রিকেট খেলা থেকে অবসরে গেলেন। একটা ক্রিকেটীয় যুগের পূর্ণ সমাপ্তি বলা চলে। প্রায় অর্ধেক যুগ আগে শেষ আন্তর্জাতিক খেলা কিংবা শেষ কয়েক বছরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার (আইপিএল) কয়েকটি ম্যাচ খেলা ‘টার্বুনেটর’ বর্তমান প্রজন্মের তেমন কেউ কেটা কেউ নন যে তাঁকে নিয়ে ততটা সবাই উদ্বেলিত হবেন, হওয়ার কথাও নয়।
কিন্তু আমরা যারা যখন থেকে ক্রিকেট দেখা শুরু করেছি তথা ওনার ক্যারিয়ারের প্রায় প্রারম্ভ হতে ওনাকে দেখেছি, জানি ওই সময়ের অনেকের মতোই ‘ভাজ্জি’ও আমাদের কাছে কতটা আবেগের, ভালোবাসার। তাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এনার জন্য কিছুটা আবেগতাড়িত হচ্ছিই।
১৯৯৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলবার পরেই অভিষেক, দলে জায়গা পাকা না করতে পারা, ম্যাচ গড়াপেটায় ভারতীয় ক্রিকেট সহ গোটা ক্রিকেট বিশ্ব তোলপাড়, দাদার অধিনায়কত্বে আবার ফেরা এবং নিজেকে অন্য উচ্চতায় তুলে ধরা, দেশকে সাফল্য এনে দেওয়ার অন্যতম কারিগর রূপে নিজেকে মেলে ধরা, সাফল্যের সাথে নানা বিতর্ক, মজারু, আমুদে – ক্রিকেট মাঠে ও মাঠের বাইরে সারাজীবন উঠাপড়ার সাথে সাথে এক অদ্ভূত চরিত্র হিসেবে নিজেকে জাহির করেছেন। আর তাতেই আমরা তার সাথে একাত্ম হয়েছি, কখনো খারাপ লেগেছে, রাগও হয়েছে, কিন্তু ভালোবাসা অটুট থেকেছে।
আজকের দিনে ভারত বিশ্ব ক্রিকেটে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তার জন্য এই শতাব্দীর প্রথম দশকে ব্যাটিংয়ের পঞ্চপাণ্ডব শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, বীরেন্দ্র শেবাগ – যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটাই গুরুত্বপূর্ণ অনিল কুম্বলে আর হরভজন সিংয়ের জুটি। আর এই জুটি হয়তো হতোই না, ২০০১ সালে সেই ঐতিহাসিক ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের কুম্বলের চোট না হলে, দলে নিয়মিত না হতে পেরে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা হরভজন সুযোগ পেয়েই অস্ট্রেলিয়ার বিজয়রথ থামানোর অন্যতম কারিগর হয়ে। ঘরের মাটিতে ভালো পেসারের অভাব এরা মনেই হতে দেননি, হয়ে উঠেছেন একে অপরের পরিপূরক।
প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ার, ৩৬৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ, ৭১১টি আন্তর্জাতিক উইকেট, টেস্টে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৮ নম্বরে নেমে টানা ২ ইনিংসে শতরান সহ ৩৫৬৯ আন্তর্জাতিক রান, দুটো বিশ্বকাপ, ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ার শুরু করে নিজের সময়কাল পর্যন্ত নিজের দেশের তথা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অফস্পিনার হয়ে উঠা, দুসরা-তিসরাই ব্যাটসম্যানদের অতিষ্ঠ করে তোলা – আজকের অবসর নেওয়ার দিনে তিনি নিজের পরিসংখ্যানে খুশিই হবেন।
সবাইকে একদিন থামতে হয়, তাকেও হয়েছে। কিন্তু মনেপ্রাণে একটা সময় আরও একটু আমাদের ঘূর্ণীর মায়াজালে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সম্ভব হয়নি। এবার হয়তো অন্য কোনো রূপে ক্রিকেটকে সেবা করুন, ক্রিকেট ভবিষ্যতদের পাথেয় হবেন – এটাই কামনা। মজায় থাকুন, আনন্দে থাকুন। অবসর জীবন সুখের হোক প্রিয় ‘টার্বুনেটর’-এর।