দ্য ‘ফিনিশড’ ফিনিশার

প্রথম দিকে তাও তিনি টিম ম্যান ছিলেন। ব্যাটিংয়ে না হলেও কখনও বোলিং দিয়ে, দারুণ সব গ্রাউন্ড ফিল্ডিং দিয়ে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। গেল তিন কি চারটা বছর সেটাও পারছেন না। অথচ, সেই রিয়াদের বিদায় নিয়ে কত দিনের অপেক্ষা, কত রকমের জল্পনা-কল্পনা।

জায়গাটা নিয়ে যতক্ষণ না প্রশ্ন ওঠে, ততক্ষণ কেউই ছাড়তে চান না। এ যেন বাংলাদেশের নিয়মিত চিত্র। ক্রিকেটে তো বটেই। সুসময়ে নয়, বিদায়ের জন্য দু:সময়টাই বেছে নেন সবাই। এবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও সেই পথেই হাঁটলেন।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যখন তিনি একেবারেই বেমানান, তখন সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের শেষ ম্যাচে দেড়শো রানের ইনিংস খেলে মাথা উঁচু করে বিদায় নিয়েছিলেন। টি-টোয়েন্টিতেও মাঠ থেকেই হয়তো শেষটা করবেন ভারতে। হাত নাড়বেন, কিন্তু সেই হাত নাড়ায় কারও চোখ ছলছল করবে না, বরং একটা দর্শক মহল হাফ ছেড়ে বাঁচবে।

৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি তারুণ্যের খেলা টি-টোয়েন্টিটা খেলে গেছেন। ৪০ বছর বয়সে গিয়ে খেলবেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাঠামোতে অকল্পনীয় এক ঘটনা।

মাশরাফি বিন মুর্তজা এক টি-টোয়েন্টি ছাড়া আর কোনো ফরম্যাটকে আদৌ বিদায় বলেননি। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল কিংবা মুশফিকুর রহিম – সবাই বিদায় বলেছেন টি-টোয়েন্টিকে, সেটাও হাজারো সমালোচনার পর।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও সেই একই দোষে দুষ্ট। অন্তত শেষ চারটা বছর তিনি স্রেফ নামের জোরে টিকে থেকেছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। এর মধ্যে ২০২৩ সালটা তিনি খেলেননি। এর বাদে ২০২১, ২০২২ আর ২০২৪ – এই তিনটি বছরে তিনি ২০ ওভারের ফরম্যাটে রান করেছেন ২৩, ১৮ ও ২২ গড়ে।

এখানেই শেষ নয়। তিনি শেষ ছয় বছরে হাফ-সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোটে পাঁচটা। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এটাকে গোণায় ধরার কোনো কারণ নেই। এখানে যখন শুনবেন, তিনি গোটা ক্যারিয়ারেই মোটে আটটা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি পেয়েছেন, তাহলে তাঁর বিদায়ে আসলে হা-হুতাশ করাটাও অর্থহীন। ১৭ বছরের ক্যারিয়ার। মানে গড়ে প্রতি দুই বছরেরও বেশি সময়ে তিনি একটা করে হাফ- সেঞ্চুরি পেয়েছেন।

অথচ, ক্যারিয়ারজুড়ে এখন অবধি খেলেছেন ১৩৯ টা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। সেখানে রান এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারও ছুঁতে পারেনি। স্ট্রাইক রেটটাও সব মিলিয়ে ১২০-ও না। তিনি নীরবে থাকা আড়ালের সেনানী। টি-টোয়েন্টিতে পুরো ক্যারিয়ারেই নীরবেই ছিলেন। সেই নীরবতা বাংলাদেশের বিপদও ডেকে এনেছে অনেকবার। ‘ফিনিশার’ নাম নিয়ে তিনি বাংলাদেশের সম্ভাবনা ‘ফিনিশ’ করে দিয়েছেন অনেকবার।

প্রথম আসতে পারবে, ফিনিশার রোলে খেললে তো তাঁর নিয়মিত হাফ-সেঞ্চুরি করার মত পর্যাপ্ত সুযোগ আসার কথা নয়। কিন্তু, এই যুক্তি মাথায় রাখলে তো তাঁর স্ট্রাইক রেট আরও বেশি থাকা উচিৎ। কিন্তু, পাঁচ, ছয় ও সাত নম্বরে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল যথাক্রমে ১১৩, ১২০ ও ১২৬। এই রিয়াদকে আসলে মনে রাখা কেন জরুরী?

প্রথম দিকে তাও তিনি টিম ম্যান ছিলেন। ব্যাটিংয়ে না হলেও কখনও বোলিং দিয়ে, দারুণ সব গ্রাউন্ড ফিল্ডিং দিয়ে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। গেল তিন কি চারটা বছর সেটাও পারছেন না। অথচ, সেই রিয়াদের বিদায় নিয়ে কত দিনের অপেক্ষা, কত রকমের জল্পনা-কল্পনা। এই সময়টা সত্যিকারের মাঠের ক্রিকেটে ব্যয় করলে, সত্যিকারের একজন ফিনিশার খুঁজে পাওয়া যেত!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link