‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’ – ব্যর্থ মানুষদের জন্য খুব অনুপ্রেরণামূলক একটা বাক্য। তবে মুখে বলা যতটা সহজ, কাজে পরিণত করা ঠিক ততটাই কঠিন। একবার ব্যর্থ হবার পর পরেরবার কাজটা করতে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই আগের বারের মতো মনের জোড়টা থাকে না।
এর মাঝেও কোন কোন মানুষ আলাদা ধাঁচের হয়, তারা তাদের অস্বাভাবিক মনের জোড় দিয়ে বার বার ব্যর্থ হলেও আবার বিপুল উদ্দ্যোমে ফেরত আসে। এরকম একজন মানুষের গল্পই আজ শোনা যাক।
ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য সর্বোচ্চ সফলতার একটা যদি সেঞ্চুরী হয়, তাহলে ব্যার্থতার মাঝে একটা হচ্ছে শূন্য রানে আউট হওয়া। কোন ব্যাটসম্যান যদি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয় তাহলে তার আত্মবিশ্বাসে একটু বাধা লাগারই কথা। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে যেহেতু ইনিংস দুটো কাজেই কোন ব্যাটসম্যান এক ইনিংসে শূন্য রানে আউট হলেও পরের ইনিংসে ভালো করার জন্য আরেকটা সুযোগ পেতে পারে।
কিন্তু কোন ব্যাটসম্যান যদি দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয় তাহলে তার আত্মবিশ্বাস তলানীতে নেমে যাওয়ার কথা। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই পর্যন্ত ৪২ জন ব্যাটসম্যান এই দূর্ভাগ্যের সম্মুখীন হয়েছে।
তাঁদেরই একজন হলেন মারভান আতাপাত্তু। এমন শোচনীয় শুরুর পর লঙ্কান এই ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাস কোথায় পৌছেছিল সেটা জানা যায় নি তবে নির্বাচকদের তার প্রতি বিশ্বাস একেবারেই কমে গিয়েছিল। একারণেই প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয় সুযোগ পান ২০ মাস পর।
এবার আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি করলেন, দুই ইনিংসে আউট হলেন যথাক্রমে ০ আর ১ রান করে। ফলশ্রুতিতে আবার দল থেকে বাদ। তৃতীয় সুযোগ পেলেন আবার ১৮ মাস পর। সুযোগটা কোথায় কাজে লাগাবেন তা না করে আবার দুই ইনিংসেই শূন্য।
চতুর্থ টেস্টে সুযোগ পেলেন ৩ বছর পর। তখন তার রান ৬ ইনিংসে ০.১৭ গড়ে ১ রান। না এবার আর আগের বারের মতো ব্যর্থ হননি।
প্রথম নয় টেস্টে মাত্র ৪৮ রান করার পরও কালক্রমে দলে নিজের জায়গা পাকা করেছেন। ওয়ানডে আর টেস্টে শতরান করেছেন যথাক্রমে ১১ টি আর ১৬ টি করে। অবসর নেওয়ার আগে টেস্টে ৩৯.০২ গড়ে ৫৫০৪ রান আর ওয়ানডেতে ৩৭.৫৭ গড়ে ৮৫২৯ রানও করে ফেলেছেন।
আতাপাত্তু টেস্টে ছয়টি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক। লঙ্কানদের মধ্যে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি এই কীর্তি গড়েন তিনি। দিনের শুরুটা দেখে, বাকিটা দিনের ভবিষ্যদ্বানী করা যে সব সময় ঠিক না – তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন সাবেক এই লঙ্কান অধিনায়ক।
নিপাট এই ভদ্রলোকের ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও বিতর্ক ছুঁয়ে গেছে। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝপথেই নির্বাচকদের ‘জোকার’ বলে প্রথম বিতর্কের সূচনা করেন। সেটাই লঙ্কান ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। যদিও, দলে ঠাঁই সেবারও হত না। দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী গামিনি লোকুগের হস্তক্ষেপে সেই যাত্রায় টিকে যান। তবে, সেখানেই শেষ।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করার পর অনেক কিছুই করেছেন আতাপাত্তু। বিতর্কিত ও নিষিদ্ধ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) খেলেছেন দিল্লী জায়ান্টস ও আইসিএল বিশ্ব একাদশের হয়ে। জাতীয় দলের কোচও হয়েছিলেন। সেখান থেকেও ব্যর্থতার দায় নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর বিদায় হয়। ক্যারিয়ারের কোনো বিদায়ই তাঁর জন্য মনে রাখার উপলক্ষ্য নয়!