কম বয়সের দশ

অনেক ক্রিকেটারই নিজের প্রতিভা দিয়ে খুব কম বয়সেই জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। পড়াশোনার গণ্ডি পেরোনোর আগেই ২২ গজে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলছে! এমন অসীম প্রতিভাবান অনেক ক্রিকেটারই তার প্রতিভা বিকাশিত করতে পারেননি। কেউ কেউ নিজের ক্যারিয়ার করেছেন দীর্ঘ! অনেকেই হারিয়ে গেছেন অজানা এক অন্ধকারে। অল্প বয়সে জাতীয় দলের চাপটা নিতে না পেরে অনেকেই ঝরে পড়েছেন অকালেই।

অনেক ক্রিকেটারই নিজের প্রতিভা দিয়ে খুব কম বয়সেই জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। পড়াশোনার গণ্ডি পেরোনোর আগেই ২২ গজে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলছে! এমন অসীম প্রতিভাবান অনেক ক্রিকেটারই তার প্রতিভা বিকাশিত করতে পারেননি। কেউ কেউ নিজের ক্যারিয়ার করেছেন দীর্ঘ! অনেকেই হারিয়ে গেছেন অজানা এক অন্ধকারে। অল্প বয়সে জাতীয় দলের চাপটা নিতে না পেরে অনেকেই ঝরে পড়েছেন অকালেই।

সবচেয়ে কম বয়সে আন্তুর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্তদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন। এদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে মহাতারকা বনে গেছেন, কেউ কেউ আবার ছিটকে গেছেন।

  • শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)

১৯৮৯ সালের নভেম্বরে ১৬ বছর ২০৫ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন শচীন টেন্ডুলকার। এরপর তার ২৪ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে অজস্র রেকর্ড নিজের নামে করেছেন। নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। ওয়ানডেতে ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার রেকর্ড! কি না করেছেন এই মানুষটা তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে।

২০০ টেস্টে ১৫ হাজারেরও বেশি রান! ৫১টি সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯ সেঞ্চুরি আর ১৮ হাজার রানের মালিক এই কিংবদন্তি।

  • খালিদ হাসান (পাকিস্তান)

লাহোরে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানি লেগ স্পিনার খালিদ হাসান ১৯৫৪ সালে ন্যটিংহামে মাত্র ১৬ বছর ৩৫২ দিনে অভিষিক্ত হন। মাত্র ১৬ বছর ৩৫৬ দিন বয়সেই তিনি ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলেন! হ্যাঁ, ক্যারিয়ারে মাত্র এক টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছিল খালিদের।

ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেনিস কম্পটন খালিদের লেগ স্পিনে বেধড়ক মার মারেন। খালিদের বলে আউট হবার আগে সেই ইনিংসে ২৭৮ রান করেছিলেন কম্পটন। ওই ইনিংসে গডফ্রে ইভান্সকেও আউট করেন খালিদ। ২১ ওভারে ১১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। এরপর আর টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি তিনি। এরপর আরো পাঁচ বছর তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন যেখানে খুব বেশি সাফল্যের মুখ দেখেননি তিনি।

  • নাসিম উল গনি (পাকিস্তান)

নাসিম উল গনি ছিলেন পাকিস্তানের হয়ে খেলা একজন বাঁ-হাতি স্পিনার, যিনি মিডিয়াম পেসও করতেন। ১৯৫৮ সালে ব্রিজ টাউনে ১৬ বছর ২৪৮ দিন বয়সে অভিষিক্ত হন তিনি। তার অভিষেক টেস্টে হানিফ মোহাম্মদ ৩৩৭ রান করেন! নাসিম তাঁর অভিষেক ম্যাচে কোনো উইকেটই শিকার করতে পারেননি।

যদিও সেই সিরিজে পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। প্রথম দুই সিরিজে ৩০ উইকেট শিকার করার পর তিনি খেই হারিয়ে ফেলেন। এরপর হাফ দশক ক্রিকেটে মাত্র ২১ টেস্ট খেলে ২২ উইকেট শিকার করেন তিনি! ১৯৬২ সালে লর্ডসে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে ১০১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি।

  • মুশতাক মোহাম্মদ (পাকিস্তান)

১৯৫৯ সালে লাহোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬ বছর ১২৪ দিন বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন মুশতাক আহমেদ। ১৭ বছর ৭৮ দিনে সেঞ্চুরি করে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। ২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের হয়ে ৫৭ টি টেস্ট খেলেছেন তিনি।

এর মধ্যে ১৯ টেস্টে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ৩৯.১৭ গড়ে ৩৬৪৩ রান নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন তিনি। যার মধ্যে ১০ সেঞ্চুরির সাথে বল হাতে শিকার করেছেন ৭৯ উইকেট। তার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ ছিল ১৯৭৭ সালে। পোর্ট অব স্পেনে দুই ইনিংসে ১২১ ও ৫৬ রানের পাশাপাশি ২৮ রানে পাঁচ ও ৬৯ রানে নেন ৩ উইকেট। ওই ম্যাচে ২৬৬ রানের ঐতিহাসিক জয় পায় পাকিস্তান।

ন্যটিংহামশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। এই ফরম্যাটে ৭২টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ৩১০৯১ রান আর ৯৩৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন এই অলরাউন্ডার। রিভার্স সুইপের জনকও বলা হয় তাঁকে। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি।

  • আফতাব বেলুচ (পাকিস্তান)

সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার আফতাব বেলুচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায় মাত্র ১৬ বছর ২২১ দিনে অভিষিক্ত হন। সেই ম্যাচে ২৫ রান করার পরই বাদ পড়েন। পরবর্তীতে ১৯৭৩-৭৪ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে সিন্ধের হয়ে বালুচিস্তানের বিপক্ষে ৪২৮ রানের ইনিংস খেলে আবার জাতীউ দলে ফেরেন। এরপর ইংল্যান্ড সফরের দলে জায়গা পেলেও কোনো ম্যাচে সুযোগ পাননি তিনি। ওই সফরে তার সাথে ঘটা একটা কাকতালীয় ব্যাপার ছিল হোটেলে তাঁর রুম নাম্বারও ছিল ৪২৮!

এরপর ১৯৭৫ সালে লাহোরে এক টেস্টে সুযোগ পান তিনি। সেখানে সাত নম্বরে নেমে অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস খেলেন। তবে এরপর আর দলে সুযোগ পাননি তিনি।

  • আকিব জাভেদ (পাকিস্তান)

শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের ঠিক নয় মাস আগে অভিষিক্ত হন পাকিস্তানি পেসার আকিব জাভেদ। ১৬ বছর ১৮৯ দিন বয়সে অভিষেক হয় আকিব জাভেদের। অভিষেক ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৩৪ ওভারে ১০৩ রান দিয়ে কোনো উইকেট নিতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরান খানের সাথে নতুন বলে বোলিং করলেও উইকেট নিতে ব্যর্থ হন তিনি।

৯ বছরে ২২ টেস্টে ৫৪ উইকেট সংগ্রহ করেন তিনি। ওয়ানডেতে ১৬৩ ম্যাচে ১৮২ উইকেট শিকার করেন আকিব। তিনি ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে মাত্র ১৯ বছর বয়সে হ্যাট্রিক করেন। ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাট্রিকের রেকর্ডটি তাঁর।

  • হাসান রাজা (পাকিস্তান)

মাত্র ১৪ বছর ২২৭ দিনে পাকিস্তানের জার্সি গায়ে অভিষিক্ত হন হাসান রাজা। ১৯৯৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে নিজের বোলিং দিয়ে নির্বাচকদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি রাজা। এরপর এক বছর বিরতি দিয়ে আবারো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সুযোগ পান তিনি! এবারো ব্যর্থ হয়ে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।

এরপর ২০০২ সালে তৃতীয় বারের মত তাকে দলে ডাকা হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শারজাহতে দুই ইনিংসে তিনি ৫৪ এবং ৬৮ রান করেন। এরপর আবারো হতাশাজনক ব্যাটিং পারফরম্যান্সে বাদ পড়েন। এভাবেই আশা যাওয়ার মধ্যে দিয়েই তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়।

  • তালহা জুবায়ের (বাংলাদেশ)

২০০২ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬ বছর ২২৩ দিন বয়সে অভিষিক্ত হন বাংলাদেশি এই পেসার। মাত্র ২০ রানেই মারভাব আথাপাত্তু আর ব্যক্তিগত শূন্য রানেই মাহেলা জয়বর্ধনকে ফেরান তালহা। তাঁর আঘাতে মাত্র ৫৫ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে লঙ্কানরা। তালহা ওই ইনিংসে ২১ ওভারে ১২০ রানে শিকার করেন ২ উইকেট।

এরপর ইনজুরিতে প্রায় এক বছর দলের বাইরে ছিলেন তালহা। ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে চট্রগ্রাম টেস্টে ফিরেন তিনি। ওই টেস্টে গৌতম গম্ভীর ও রাহুল দ্রাবিড়ের কাছে বেধড়ক মার খাবার পরই তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়।

  • এনামুল হক জুনিয়র (বাংলাদেশ)

মাত্র ১৬ বছর ৩২০ দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন বাংলাদেশি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক টেস্টে ১২ উইকেট শিকার করে নজর কাঁড়েন তিনি। আট বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ১৫ টেস্ট আর ১০টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। এই ১৫ টেস্টে ৪৪ আর ১০ ওয়ানডেতে ১৪ উইকেট শিকার করেছেন এনামুল।

  • মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)

অল্প বয়সে অভিষিক্ত হওয়া বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের মধ্যে মুশফিকুর রহিম একজন। যিনি কিনা তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে লম্বা করতে পেরেছেন। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে যাকে ডাকা হয় ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। ১৬ বছর ২৬৭ দিন বয়সে লর্ডসে অভিষিক্ত হন মুশফিক! প্রস্তুতি ম্যাচে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ১১৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জাতীয় দলে জায়গা পান মুশফিক।

ভারতের বিপক্ষে চট্রগ্রামে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারার পর তাকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অন্যতম ভরসার নাম মুশফিকুর রহিম।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...