কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। পাকিস্তান দলে এই মুহূর্তে শান মাসুদের পৌষ মাসে সর্বনাশায় দিন গুণছেন ফখর জামান। অবশ্য নিজের টানা ব্যর্থতার জেরেই দল থেকে ছিটকে গেছেন ৭১ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা এই টপ অর্ডার ব্যাটার। তাঁর জায়গায় এসেছেন বহুদিন ধরে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পারফর্ম করা ব্যাটার শান মাসুদ।
একজন টেস্ট ব্যাটার থেকে পুরোদস্তুর টি-টোয়েন্টি ব্যাটার – শান মাসুদের বেলায় এমন পঙক্তি জুড়ে দিলে একটুও ভুল হয় না। পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলেছেন ২৫ টা। খুব সফল না হলেও, মন্থর গতিতে ইনিংস ধরে রাখতে পারতেন অনেকক্ষণ।
যেভাবে তিনি টেস্টে ব্যাটিংটা করতেন তাতে লঙ্গার ভার্শন ক্রিকেটের বাইরে গিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মাতাবেন এমন ভাবনা করাও ছিল নিতান্তই বোকামি। তবে সে সব ভাবনায় নিজে আটকে থাকেননি শান মাসুদ। সময়ের সাথে নিজেকে পরিণত করেছেন। সমসাময়িক ক্রিকেটে নিজিকে মিলিয়ে নিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটাও ভালভাবে রপ্ত করেছেন।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ড সফরটা খুবই বাজেভাবে কাটে শান মাসুদের। পুরো সফরের ৪ ইনিংসে মাত্র ৩৯ রান। মোটাদাগে ব্যর্থ হওয়া যাকে বলে। স্বভাবতই দল থেকে বাদ পড়লেন তিনি৷ তবে ঐ বাদ পড়াটাই ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য পাথেয় হয়ে দাঁড়ায় শান মাসুদের জন্য। বাদ পড়ার পর নির্দিষ্টভাবে ব্যাটিং নিয়ে প্রচুর কাজ করলেন, বিভিন্ন শটের দুর্বলতা মুছতে অনুশীলন করলেন অবিরত।
সাথে স্ট্রোক মেকিংয়েও আলাদা করে নজর দিলেন। ফলও মিলল হাতেনাতে। লিস্ট এ ক্রিকেটের সে মৌসুমে প্রায় ৫৮ গড়ে রান করে সুযোগ পেলেন পিএসএলে। মুলতান সুলতানের হয়ে সেবার প্রথমবারের মতো পিএসএল খেললেন তিনি।
আর এই পিএসএল খেলার কারণেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দারুণ উন্নতি করা শুরু করেন শান মাসুদ। মুলতান সুলতানের হয়ে ৪ আসরে ব্যাটিং গড়টাও যেমন ঠিক রেখেছেন, তেমনি স্ট্রাইক রেটের দিকেও দিয়েছেন সমান নজর। ৩২ গড়ের পাশাপাশি ১৩৬ স্ট্রাইকরেট দেখলেই সেটি বুঝা যায়। এ ছাড়া ৩৪ ম্যাচে খেলেছেন ৭ টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একজন টপ অর্ডারের কাছ থেকে যেমন বড় ইনিংস দেখার প্রত্যাশা থাকে ঠিক তেমন প্রত্যাশা এর আগেই মিটিয়েছেন শান মাসুদ।
ব্যাটিং টেম্পারমেন্টের ক্ষেত্রে পিএসএলের গুরুত্ব নিজেও স্বীকার করেন শান মাসুদ। এক সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, পিএসএলে খেলার কারণে আমি আমার নিজের প্লেয়িং রোল সম্পর্কে আরো ভাল ভাবে জেনেছি। এখানে আমি ভিন্ন ভিন্ন পার্টনারের সাথে ব্যাটিং করেছি। যেমন রাইলি রশো, জেমস ভিন্স, টিম ডেভিড, মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো ব্যাটারদের সাথে ব্যাট করার কারণে আমি আরো অনেক জেনেছি, ম্যাচ সিচুয়েশন বুঝেছি- যেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
শান মাসুদকে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে পিএসএল ছাড়াও ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সও বেশ বিবেচনায় এসেছে। এবারের টি টোয়েন্টি ব্লাস্টে ১৪ ম্যাচে করেছেন ৫৪৭ রান। অবশ্য টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে খেলার জন্য শান মাসুদ সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ থাকতে পারেন তাঁর সাবেক কোচ মিকি আর্থারের কাছে।
শান মাসুদের ব্যাটিং টেকনিকে মিকি আর্থার বরাবরই মুগ্ধ ছিলেন। যদিও অনেকের মতো তিনিও শান কে টেস্ট ব্যাটসম্যান ভেবেছিলেন। কিন্তু অনুশীলনে তাঁর স্ট্রোক মেকিং এবিলিটি দেখে বেশ মুগ্ধ হন মিকি আর্থার। আর এই মিকি আর্থারের পরামর্শেই শান মাসুদকে দলে ভেড়ায় ডার্বিশায়ার।
মিকি আর্থারের মতে, শান মাসুদের এই সাফল্যের পিছনে আছে শানের প্রচণ্ড শ্রম আর ব্যাটিং পারফেকশনের জন্য চরম লেভেলের ওয়ার্ক এথিকস। শান আগে সুইপ শটে দুর্বল ছিল। কিন্তু প্রচুর অনুশীলনের মাধ্যমে সে এটাকে পারফেক্ট শটে নিয়ে গেছে।
বিশ্বকাপে শিষ্য শান মাসুদের পারফর্মেন্সের ব্যাপারেও আশাবাদী মিকি আর্থার। তিনি বলেন, ও ইংল্যান্ডে এসে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ওপেনিং করেছে। তবে ও তিনেও ভাল খেলবে আশা করি। কারণ এই জায়গাটার জন্য ও অনেক শ্রম দিয়েছে। পাকিস্তান দলে ওর সুযোগ অনেক আগেই প্রাপ্য ছিল। এর আগেই পাকিস্তান দলে আমি আমি বাবর, রিজওয়ান, ফখরের পরে ৪ নম্বরে ওকে চেয়েছিলাম।
৩২ বছর বয়সী শান মাসুদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা শূণ্য। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হবে এই বিশ্বকাপ দিয়েই। সে যাত্রা কতটা রঙিন হবে তা সময়ই বলে দিবে। তবে শূন্য থেকে শিখরে যাওয়ার জন্য যে দৃঢ় প্রত্যয়ী তাঁকে আবার থামাবে কে।