পাকিস্তানের ম্যাচ উইনার

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল পাকিস্তান। এবারের বিশ্বকাপে পুরেও ক্রিকেট দুনিয়াকেই যেনো এক বিস্ময় উপহার দিয়েছে এই পাকিস্তান। বাবর আজমের এই পাকিস্তান অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের পাঁচটি ম্যাচই জিতে নিজেদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে তাঁরা। এছাড়া আরব আমিরাতে খেলা গত ১৬ ম্যাচেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান।

বিশ্বকাপে পাকিস্তানের এই সাফল্য যেনো এক রহস্য। তবে সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা হচ্ছে পাকিস্তান এবার একটি দল হয়ে খেলতে পারছে। ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টে দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহম্মদ রিজওয়ান আছে দারুণ ফর্মে। এছাড়া মিডল অর্ডারে শোয়েব মালিক কিংবা মোহম্মদ হাফিজ নিজেদের অভিজ্ঞতার পুরোটা কাজে লাগাচ্ছেন এছাড়া। শেষে আসিফ আলীও নিজের কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়েছেন।

এছাড়া বোলিং ডিপার্টমেন্টেও সেই দলগত পারফর্মেন্সের প্রতিচ্ছ্ববি। পেস বোলিং আক্রমণটা নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। এছাড়া হারিস রউফও আফ্রিদির সাথে তাল মিলিয়ে বোলিং করে যাচ্ছেন। এছাড়া হাসান আলীও নিজের সেরাটাই দিচ্ছেন। স্পিন আক্রমণেও মোহম্মদ হাফিজের সাথে আছেন শাদাব খানরা। সবমিলিয়ে ব্যাটিং, বোলিং ফিল্ডিং তিন ডিপার্টমেন্টেই দলের প্রতিটা খেলোয়াড় নিজেদের সেরাটা নিঙরে দিচ্ছেন, দলের জয়ে অবদান রাখছেন।

যেমন সুপার টুয়েলভে যেই পাঁচটা ম্যাচ পাকিস্তান জিতেছে তাঁর প্রতিটি জয়ই এসেছে আলাদা আলাদা ক্রিকেটারের হাত ধরে। পাঁচ ম্যাচে আমরা দেখেছি পাঁচ জন আলাদা ম্যান অব দ্য ম্যাচ। অর্থাৎ দলে ম্যাচ উইনারের সংখ্যাই পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখছে। অভিজ্ঞ কিংবা তরুণ সবাই দলের জন্য ম্যাচ জিতিয়ে আনতে পারেন।

ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা পাকিস্তানের জন্য অনেক বেশি চাপের ছিল। ওই ম্যাচে ভালো একটা শুরু খুব প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। পাকিস্তানের হয়ে সেই কাজটাই করে দিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। ম্যাচের শুরুতেই তুলেন নেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের উইকেট। এরপর নেন বিরাট কোহলির উইকেটও। সেখানেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় পাকিস্তান।

যদিও সেই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন বাবর আজম ও মোহম্মদ রিজওয়ান। দুইজন অপরাজিত থেকে ম্যাচ বের করে নিয়ে এসেছেন। দলকে এনে দিয়েছেন দশ উইকেটের বিশাল জয়। তবে শুরুতেই ভারতের আত্মবিশ্বাসে আঘাতটা হানতে পেরেছিলেন আফ্রিদি। ফলে ভারতের তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে তিনিই হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

ওদিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটায় পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে পৌছে দিয়েছিলেন আসিফ আলী। মাত্র ১২ বলে করেছিলেন ২৭ রান। তবে সেই ম্যাচের নায়ক ছিলেন আবার আরেক পেসার হারিস রউফ। আগে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এই পেসার। মাত্র ২২ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এরমধ্যে মার্টিন গাপটিলের ও ডেভন কনওয়ের উইকেটও ছিল।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য আসিফ আলী শুধু দলকে জয়ের বন্দরেই পৌছে দেননি। হয়ে উঠেছিলেন পুরো পাকিস্তানের হিরো। টানা দুই ম্যাচে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। এই ম্যাচে অবশ্য অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেন তিনি। মাত্র ৭ বলে করেন ২৫ রান। এক ওভারে ৪ টা ছয় মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

ওদিকে নামিবিয়ার বিপক্ষেও যথারীতি সফল পাকিস্তানের দুই ওপেনার। বাবর আজম খেলেন ৪৯ বলে ৭০ রানের ইনিংস ও রিজওয়ান ৫০ বলে করেন ৭৯ রান। তাঁদের দুইজনের এই জুটিতে ১৮৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। এই ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন ওপেনার মোহম্মদ রিজওয়ান।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আবার শারজাতে নিজের অভিজ্ঞতার পুরোটা ঢেলে দেন শোয়েব মালিক। মাত্র ১৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে রেকর্ডই করে বসেন তিনি। তাঁর এই ইনিংসে এই ম্যাচেও ১৮৯ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। ওদিকে বোলাররাও নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন।

ওদিকে বাবর আজমও এই ম্যাচে করেছেন ৬৬ রান। ফলে শোয়েব মালিক ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হলেও দলের বাকিরাও নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করছেন। এছাড়া পুরো বিশ্বকাপের দারুণ ছন্দে আছেন অধিনায়ক বাবর আজম। মোটামুটি প্রতি ম্যাচেই দলকে এনে দিচ্ছেন ভালো শুরু।

এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। পাঁচ ম্যাচে ৬৬.০০ গড়ে করেছেন ২৬৪ রান। এছাড়া মোহম্মদ হাফিজ, হাসান আলীরাও নিজেদের দায়িত্বটুকু পুরোপুরি পালন করছেন। ফলে কোন নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের উপর দল নির্ভরশীল হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত এটিই বোধহয় পাকিস্তানের সাফল্যের সবচেয়ে বড় রহস্য।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link