মেম্ফিস ডিপাই: বার্সেলোনার নতুন নেইমার?

ট্রান্সফার মার্কেটে যখন কেউ নামেইনি ঠিকমতো তখন থেকেই আগুন ধরানো শুরু করে দিয়েছিল বার্সেলোনা। বার্তামেউ নিজের জায়গা ছাড়ার পর বেশ হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল কাতালুনিয়ার ক্লাবটি। কিন্তু সেই সমস্যার ত্রাতা হয়ে এসেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা। এসেই দলবদলের উপর দলবদল, একের পর এক স্টার খেলোয়াড়ের আগমণ, তাও কোনো পয়সা ছাড়াই!

এত সব ট্রান্সফারের মধ্যে আলাদা করে যে ট্রান্সফারটা আলো কেড়েছে তা হলো মেম্ফিস ডিপাই। বার্সেলোনার রাডারে তিনি ছিলেন অনেকদিন ধরেই। কিন্তু পয়সার কারণেই তার দিকে হাত বাড়ানো সম্ভব ছিল না। এক মৌসুম আগেও সুযারেজ চলে যাওয়ার পর তাকে কেনার চেষ্টা করেছিল বার্সা। কিন্তু লিঁওর মার্কেট তখন আগুন।

তাই ফ্রি হতে না হতেই মেম্ফিসকে দলে ভিড়িয়েছে বার্সেলোনা। আর সেই সাথে তার উপর জমেছে বাড়তি এক চাপ। সেই চাপের নাম, ‘নতুন নেইমার’।

৪ বছর হয়ে গিয়েছে বার্সেলোনা ছেড়েছেন নেইমার। ২২২ মিলিয়নের বদলে তাকে দলে ভেড়ানো পিএসজি এখনও তাদের কাঙ্খিত সাফল্যের দেখা পায়নি। এমনকি বার্সেলোনাও ঠিক একই জায়গাতেই বসে আছে। লিগ জেতা কখনোই তাদের কাছে বড় কোনো বিষয় ছিল না।

কিন্তু নেইমারকে আনা হয়েছিল ঠিক যে কারণে সেই কারণটাই করে দেখিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। বার্সেলোনার সেই এমএসএন ত্রয়ীর কথা কে ভুলতে পারে? লুইস এনরিকে তাদের নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন ইউরোপে। এমন কোনো দল নেই যারা প্রতিরোধ গড়তে পেরেছিল তাদের সামনে।

নেইমার চলে যাওয়ার পর থেকে সেই জুটিটা বড্ড অস্পষ্ট। সুয়ারেজ-মেসি মিলেছেন বটে, কিন্তু সেই ফর্মে আর যেতে পারেননি। মিসিং পিস হয়ে নেইমার আজীবনই ছিলেন। বার্সেলোনা সাথে সাথে প্যানিক বাইও করেছে। কুতিনহো ভিড়েছেন, ডেম্বেলে ভিড়েছেন; এমনকি খোদ গ্রিজম্যান এসেও দলের সেই জায়গাটা পূরণ করতে পারেননি। চ্যাম্পিয়নস লিগটা লিওনেল মেসির জন্য স্বপ্নই রয়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে মেম্ফিস ডিপাই জীবনের শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে বড় হয়েছেন। ছোট থাকতে বাবা তাদের রেখে পাড়ি জমিয়েছেন অন্য এক নারীর সাথে। সেই থেকে তার খোঁজ কেউ জানে না। নিজের মতন করে জীবনধারণ করেছেন তিনি।

সেখান থেকেই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা। আর লাইমলাইটে আসা ২০১৪ বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই গোল এক এসিস্ট করে তাক লাগিয়ে দেন বিশ্বকে। পরের মৌসুমে নেদারল্যান্ড লিগের টপ স্কোরার হয়ে বুঝিয়ে দেন, বিশ্বকাপ কোনো ফ্লুক ছিল না।

২১ বছর বয়সী ডিপাইকে কিনতে ঝাপিয়ে পরে ইংলিশ লিগের দলগুলো। আর্সেনাল, লিভারপুল, টটেনহ্যাম, ইউনাইটেড’ এমন কেউ নেই যারা আগ্রহ দেখায়নি সেসময়। কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল প্রিয় কোচের সাথে আবার একীভূত হওয়া। তাই সবাইকে পাশ কাটিয়ে ইউনাইটেডের সাথেই চুক্তিবদ্ধ হলেন তিনি। সেটাই ছিল তার সবচেয়ে বড় ভুল।

পিএসভি থেকে রেড ডেভিল হওয়া কোনো খেলোয়াড়ই ব্যর্থ মনোরথে ইউনাইটেড ছাড়েনি। হ্যাপ স্ট্যাম, পার্ক-জি সুং, নেস্টারলয়ের পর ছিলেন ডিপাই। কিন্তু তার ক্যারিয়ারটাই আর সাজানো হয়নি। ইউনাইটেডে নতুন উইঙ্গার মানে একটাই নাম, ‘নতুন রোনালদো’ সেই সাথে কাঁধে তুলে দেওয়া ৭ নম্বর জার্সি।

পুরো বিশ্ব যখন তাকিয়ে ছিল তার রোনালদো হওয়ার অপেক্ষায়, তখন তিনি হতে চাইছিলেন একজন ডিপাই। সেটা হওয়ার সুযোগই দেয়নি বিশ্ব। এতটাই যে দুই বছরে মাঠে নেমেছেন মাত্র ৫৩ বার, আর গোল করেছেন মাত্র ৭টি!

এমন একটা সময় ছিল মাঠে নামতে না পেরে ফুটবলের থেকে ভালোবাসাটাই উঠে যাচ্ছিল তার। সেই সাথে কটু কথা তো শুনতে হয়েছেই কতজনের কাছ থেকে। সে কারণে ফুটবল ছেড়ে পাকাপাকিভাবে গানের জহতে ডুব দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

তখনই তাঁকে আবার ফুটবলে নিয়ে আসে লিঁও। ফ্রেঞ্চ লিগে গিয়ে নিজেকে যেন নতুন করে ফিরে পান মেম্ফিস। ফিরে পান ফর্ম, সেই আগের গতি, আগের খেলা। বয়সটা এখনও তার মাত্র ২৭। বিশ্ব ফুটবলকে যে তার আরো অনেককিছু দোয়ার বাকি সেটাই যেন বুঝতে শুরু করেন লিঁওতে গিয়ে।

এবার আসা যাক বার্সেলোনা দিকে। মার্টিন ব্রেথওয়েট আর ওসমান ডেম্বেলের চাইতে বেশ কোয়ালিফুল খেলোয়াড় মেম্ফিস। সেই সাথে যুক্ত হয়েছেন সার্জিও আগুয়েরো। মেসি-আগুয়েরো-মেম্ফিস, ত্রয়ীটা মন্দ হবে না। সেই সাথে গ্রিজম্যান তো আছেনই। গত মৌসুমে গ্রিজম্যানের বল প্লেয়িং খেলোয়াড় হিসেবে

দূর্বলতা চোখে লেগেছে। মেম্ফিস সেখানে উঠেই এসেছেন বল প্লেয়িং উইঙ্গার হয়ে। ফলে তার কাজটাই হবে মেসিকে সাহায্য করা। রোনাল্ড কোম্যানের অধীনে নতুন নেদারল্যান্ডসের কাণ্ডারি ছিলেন মেম্ফিস। যে কারণে বার্সেলোনার তার মানিয়ে নিতে তেমন সমস্যা হবে না।

ইতোমধ্যে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে নিজের সেরাটা দেখিয়েছেনও। গোল করেছেন, করিয়েছেন। দলে সাথে মানিয়ে নিতে শুরু করেছেন এর মধ্যেই। বার্সেলোনার ‘নতুন নেইমার’ না হয়ে বার্সেলোনার মেম্ফিস হতে পারাটাই এখন তার সামনে সবচেয়ে বড় বাঁধা। পারবেন তো সেই বাঁধা কাটাতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link