এক ম্যাচেই ২৪ ছক্কা! যেন এক ছক্কাসমুদ্রেই পরিণত হয়েছিল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। রশিদ খান এ দিন একাই গুণে গুণে মেরেছেন ১০ টা ছক্কা। তার আগে সুরিয়াকুমার সেঞ্চুরিতে আবার ২১৮ রানের রানপাহাড়ে বসেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। আর তাই রশিদ খানের ‘মিস্টার সিক্সার’ হয়ে ওঠার দিনেও শেষ পর্যন্ত মুম্বাইয়ের দেওয়া সে লক্ষ্য টপকাতে পারেনি গুজরাট টাইটান্স। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা হেরেছে ২৭ রানে।
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস রানতাড়ায় ভয়ংকর— এমন কিছুর শঙ্কাতেই বোধহয় টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গুজরাটের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু গুজরাট অধিনায়কের সেই ট্যাক্টিক্যাল সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত মাঠে খাটেনি। ইনিংসের শুরু থেকেই গুজরাটের বোলারদের উপর চড়াও হতে শুরু করেন মু্ম্বাইয়ের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা আর ইশাণ কিষান।
এই দুই ব্যাটারের ঝড়ো শুরুতে ৬ ওভারের ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতেই স্কোরকার্ডে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস জমা করে ৬১ রান। যদিও পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরই আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানের তোপের মুখে পড়ে এ দুই ব্যাটারই সাজ ঘরে ফিরে যান ৷
অবশ্য তাতে মুম্বাইয়ে রান গতিতে কোনো বাঁধা ঘটাতে পারেনি। বরং গুজরাটের জন্য এ দিন ত্রাস হয়ে দাঁড়ান সুরিয়াকুমার যাদব। তিনে নামা এ ব্যাটারের একার ব্যাটিং তাণ্ডব সামলাতে গিয়েই এ দিন রীতি নাভিশ্বাস উঠে যায় গুজরাটের বোলারদের। সুরিয়াকে যদিও নেহাল ওয়াধেরা আর বিষ্ণু বিনোদ কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন। তবে গুজরাটের বিপক্ষে এ ম্যাচে পুরো লাইমলাইটটায় নিজের করে নিয়েছিলেন সুরিয়াকুমার যাদব।
এবারের আসরে পাওয়া আগের ফিফটি গুলোর চেয়ে অবশ্য এ দিন কিছুটা ধীর গতিতেই নিজের ব্যক্তিগত অর্ধ-শতক ছুঁয়েছিলেন। তবে ৩২ বলে ৫০ টপকানো সুরিয়াকুমার এর পরেই দেখান নিজের আসল খেল। পরের ১৭ বলে তিনি যোগ করেন আরো পঞ্চাশ। আর এতেই ৪৯ বলে আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের দেখা পান সুরিয়াকুমার যাদব। ১০৩ রানে দুর্দান্ত এ ইনিংস তিনি সাজিয়েছেন ১১ টি চার আর ৬ টি ছক্কার মারে।
আর সুরিয়ার এমন দুরন্ত শতকেই ২০০ পেরোনো স্কোর পায় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এ নিয়ে এবারের আইপিএলে সর্বমোট ৫ বার ২০০+ স্কোরের কীর্তি গড়লো তাঁরা। আর এই কীর্তি গড়ার দিনেই নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ২১৮ রানের রান পাহাড়ে বসে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
মুম্বাইয়ের দেওয়া এ পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে গুজরাট টাইটান্স। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারই এ দিন ফিরে যান এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়ে।
চারে নেমে বিজয় শঙ্কর কিছুটা ঝড়ের আভাস দিয়েছিলেন। তবে পিয়ুষ চাওলা বোলিং প্রান্তে এসে সেই ঝড় থামিয়ে দেন। মুম্বাইয়ের এ লেগির বলে বোল্ড হয়ে বিজয় শঙ্কর ফিরে যান ব্যক্তিগত ২৯ রানে। ২৬ রানে ৩, এরপর ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারানো গুজরাট মূলত সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়।
যদিও মাঝে ডেভিড মিলার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। ২৬ বলে ৪১ রানের ইনিংসে কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন বটে। তবে তা ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। তবে গুজরাটের ব্যাটিং লাইনআপ তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ার দিনে একাই লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন রশিদ খান।
বল হাতে ৪ উইকেট তুলে নেওয়া পর এ দিন ব্যাট হাতেও রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন আফগান এ অলরাউন্ডার। একের পর এক ছক্কা মাতিয়ে তোলেন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম।
তবে রশিদ খান যখন ব্যাটিংয়ে এসেছিলেন তখন ম্যাচ থেকে এক প্রকার দূরেই সরে গিয়েছিল গুজরাট। তাই রশিদের মুহূর্তের ছক্কাবৃষ্টিও পরাজয় এড়াতে পারেনি গুজরাটের। ৩ চার আর ১০ ছক্কায় সাজানো ৩২ বলে ৭৯ রানের ইনিংসও এ দিন ম্লান হয়ে পড়ে।
রশিদের ঐ ঝড়ো ব্যাটিং দিন শেষে গুজরাটের পরাজয়ের ব্যবধানই কিছুটা কমিয়েছে। শুরুর ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচটা আর নিজেদের করে নেওয়া হয়নি তাদের। নির্ধারিত ২০ ওভারে শেষে তাদের ইনিংস লক্ষ্য থেকে ২৮ রান দূরে, ১৯১ রানে।মুম্বাই য়ের এ দিন ৩১ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন আকাশ মাধওয়াল।
২৭ রানের দুর্দান্ত এ জয়ে রাজস্থান রয়্যালসকে টপকে পয়েন্ট টেবিলে তিনে উঠে আসলো মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। আর মুম্বাইয়ের কাছে এমন পরাজয়ের পরও অবশ্য গুজরাট টাইটান্সের তেমন ক্ষতি হয়নি। ১২ ম্যাচে ৮ জয় নিয়ে এখন পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষেই থাকছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।