সময় নষ্ট করা একদম পছন্দ না মিরাজের

শুধু জয় নয় - মিরাজ প্রতিপক্ষের শিড়দাঁড়ায় শীতল রক্তের প্রবাহ দেখতে পছন্দ করেন। তিনি বিপক্ষের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়ে জিততে চান। এমন জয় যত বেশি আসবে, ততই অধিনায়ক হিসেবে উপরে উঠতে পারবেন।

সময় নষ্ট করা একদম পছন্দ না অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের। যে কোনো মূল্যে তিনি আক্রমণ করবেনই। পেস দিয়ে যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন তিনি চতুর্থ ইনিংসে মাত্র পঞ্চম ওভারেই স্পিন আক্রমণ শুরু করলেন।

আক্রমণে এসেই আঘাত হানলেন তাইজুল ইসলাম। ইনিংস শেষ করলেন পাঁচ উইকেট নিয়ে। পেস দিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করা বাংলাদেশ দল ম্যাচ জিতে গেল স্পিনের বিষে।

পুরো ম্যাচ জুড়ে তো বটেই, আসলে মিরাজ পুরো সিরিজ জুড়েই অনেক নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন। কোনোটাতে সফল হয়েছেন। কোনোটাতে হননি। কিন্তু, বারবার পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করা, আগ্রাসন দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভড়কে দেওয়াতে তিনি বিন্দু মাত্র ছাড় দেননি।

প্রথম টেস্টে অ্যান্টিগায় এক উইকেট হাতে রেখেই তিনি ইনিংস ঘোষণা করে ফেললেন। অথচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ১০০’র বেশি রানে এগিয়ে। হিসাব পরিস্কার। সকালের উইকেটের ময়েশ্চার কাজে লাগাতে হবে।

সেই উৎসাহেই তাসকিন ছয় উইকেট পেয়ে যান। হ্যাঁ, ম্যাচ বাংলাদেশ তারপরও হারে। তবে, মিরাজের ওই সিদ্ধান্ত দিনের বড় একটা সময়ের জন্য বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিল। অধিনায়ক হিসেবে এমন সাহসী সিদ্ধান্ত রোজ রোজ পাওয়া যায় না।

ম্যাচ বের করা গেলে, মিরাজের এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসের পাতায় লিখে ফেলা যেত। তবে, দ্বিতীয় ম্যাচে মিরাজ কোনো আক্ষেপ রাখেননি। দলীয় আর ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে নিজের আক্রমণের বলে জিতে নিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট। ২০০৯ সালের পর দেশকে ক্যারিবিয়ান মাঠে টেস্ট জিতিয়েছেন।

ধ্বংস্তুপে দাঁড়িয়ে তিনিই প্রথম তাইজুলকে সাথে নিয়ে ব্যাট হাতে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সপ্তম উইকেটে ৪১ রানের জুটি এই সংক্ষিপ্ত ম্যাচে খুবই জরুরী। ক্যারিবিয়ানদের মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মিরাজকে, বাংলাদেশকে।

মিরাজের নেতৃত্বে কাউন্টার অ্যাটাকে আদৌ আর লাগাম দেয়নি বাংলাদেশ। মিরাজ নিজেই ৩৯ বলে ৪২ রান করে ছিলেন আক্রমণে কাণ্ডারি। শেষটা রাঙিয়ে দেন জাকের আলী। আর চতুর্থ ইনিংসে বোলারদের মিরাজ ব্যবহার করেছেন চতুরতার সাথে। মিরাজ সময় নষ্ট করেন না, পঞ্চম দিনের ঝামেলায় তিনি দলকে ফেলতেই চাননি।

নাজমুল হোসেন শান্ত নেতৃত্বে আগ্রহ হারিয়েছেন। আর সেই জায়গাটা অন্তত দু’টো ফরম্যাটে যে মিরাজই নিবেন – সেটা তো ওপেন সিক্রেট। মিরাজও নিজের সামর্থ্য দেখালেন একদম প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে।

ম্যাচের শেষটা টানেন একটা বার্তা দিয়ে। শেষ ওভারে ক্যারিবিয়ানদের শেষ দুই ব্যাটারের সামনে ছেড়ে দেন নাহিদ রানাকে। তাইজুল তখন একের পর এক উইকেট পাচ্ছেন। তখন কেন রানাকে আনা? আনতে হবে, কারণ শুধু জয় নয় – মিরাজ প্রতিপক্ষের শিড়দাঁড়ায় শীতল রক্তের প্রবাহ দেখতে পছন্দ করেন।

তিনি বিপক্ষের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়ে জিততে চান। এমন জয় যত বেশি আসবে, ততই অধিনায়ক হিসেবে উপরে উঠতে পারবেন।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link