‘প্রায়’ অলরাউন্ডার মিরাজের সন্ধানে

পরবর্তী সাকিব আল হাসান কে হবেন – এমন প্রশ্নে চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায় বাংলাদেশ কেন, পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই তো দ্বিতীয় কোন ‘আল হাসান’ নেই। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই একদিন সাকিবকে সরে যেতে হবে, সেদিন তাঁর রেখে যাওয়া চেয়ারে কাউকে তো বসতেই হবে; সাকিব হতে না পারুক অন্তত নিজের মত করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের অভাব পূরণ করতে হবে।

সাকিব আল হাসানের উত্তরসূরি হিসেবে যে নামটা সবচেয়ে বেশি শোনা যায় সেটা হয়তো মোটামুটি সবারই জানা আছে – মেহেদি হাসান মিরাজ। বয়স ভিত্তিক দল পেরিয়ে গত কয়েক বছরে জাতীয় দলেও নিজের জায়গাটা পোক্ত করেছেন মিরাজ। বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় সেরা অলরাউন্ডার বললেও বলা যায় তাঁকে, অন্তত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের অলরাউন্ডার র‍্যাংকিং সে কথাই বলে।

বয়স ভিত্তিক দলগুলোতে ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ, সেই সাথে পার্টটাইমার হিসেবে হাত ঘোরাতেন। কিন্তু লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়াতেই বনে যান বোলার। সময়ের সাথে সাথে অবশ্য ব্যাট হাতে টুকটাক রান করে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।

কিন্তু বোলিংয়ে অবদান রাখতে গিয়ে নিজের ব্যাটিং পরিচয়ই ভুলতে বসেছিলেন মেহেদি মিরাজ, টিম ম্যানেজম্যান্টও পারেনি ব্যাটার মিরাজকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে। মাঝে মাঝে দুই একটা বলার মত ইনিংস খেললেও ব্যাট হাতে ভরসা করার মত কেউ ছিলেন এই ডানহাতি।

তবে ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত মেহেদি হাসান মিরাজ থেমে যাননি; ২০২২ সাল থেকে মিরাজ ধারাবাহিকভাবে তাঁর ব্যাটিং প্রতিভা মাঠে দেখাতে শুরু করেন। সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু; পঞ্চাশ রানের আগেই ৬ উইকেট হারানোর পর আফিফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে  রেকর্ড জুটি গড়েন তিনি। দুজনের অনবদ্য জুটিতে ৪ উইকেটের স্মরণীয় জয় পায় টিম টাইগার্স আর মিরাজ নিজে অপরাজিত ছিলেন ৮১ রানে।

সেদিনের পারফরম্যান্স নেহায়েৎ কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয় তাঁর প্রমাণ দিতেও দেরি হয়নি এই তারকার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতেই দলের বিপর্যয়ে প্রতিরোধ গড়েছিলেন তিনি।

তবে মেহেদি হাসান মিরাজের সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপ দেখা গিয়েছে বছরের শেষদিকে; ভারতকে একাই সিরিজ হারিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যান মিরাজ। প্রথম ম্যাচে মুস্তাফিজকে সাথে নিয়ে অসম্ভব সংগ্রহ তাড়া করে ম্যাচ জয় কিংবা দ্বিতীয় ম্যাচে আট নম্বরে নেমে করা সেই সেঞ্চুরি – ভোলা যাবে না কোন ঘটনাই।

সব মিলিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২২ ওয়ানডে ম্যাচে ১৬ বার ব্যাট হাতে নেমেছেন ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। এসময় চল্লিশের কাছাকাছি গড়ে করেছেন ৪৩২ রান। স্ট্রাইক রেটও সন্তোষজনক বটে, ৮৩.২৭। বল হাতেও নিজের দায়িত্বে ছাড় দেননি তিনি, পকেটে পুরেছেন ত্রিশ খানা উইকেট।

এমন অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের পুরস্কারও মিলেছে; ওয়ানডে অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে উঠে এসেছিলেন তিন নম্বরে। এছাড়া জায়গা পেয়েছেন আইসিসির মনোনীত বছরের সেরা ওয়ানডে একাদশে। বর্তমান র‍্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে থাকা মিরাজকে তাই পুরোদস্তুর অলরাউন্ডারই ভাবছে বাংলাদেশ।

যদিও মেহেদি হাসান মিরাজ এখানেই থামতে চান না। তিনি মনে করেন পারফেক্ট অলরাউন্ডার হওয়ার জন্য তাঁর এখনও কিছু পথ হাঁটা বাকি। তাই তো সমানতালে দুই বিভাগেই পারফর্ম করা মিরাজ এখনো কাজ করছেন নিজের উন্নতিতে আর সাম্প্রতিক সময়ের স্মরণীয় পারফরম্যান্সগুলো তাঁকে দিচ্ছে আত্মবিশ্বাস।

আপাতত লক্ষ্যটা সাধারণ; ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। ভারতের বিপক্ষে যেভাবে ব্যাট করেছেন মেহেদি মিরাজ সেটা আরো কিছুটা সময় ধরে রাখতে পারলে নিজেকে পুরোপুরি অলরাউন্ডার দাবি করতে পারবেন তিনি। পরিশ্রমের সাথে সঠিক পরিকল্পনা-ই মিরাজকে পৌঁছে দিবে আরাধ্য সেই গন্তব্যে; তিনি নিজেও হয়তো তাই বিশ্বাস করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link