ক্যারিয়ারটা যখন শুরু তার, তখন কেবলই বোলার তিনি। মাঝে মধ্যে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে তাকে। তবে একটা ধারণা ছিল। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরবর্তী মধ্যমণি হয়ে উঠবেন। সেই ধারণাই যেন আরও খানিকটা ঘনীভূত করছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এবারের বিশ্বকাপ দলে তার জায়গা না পাওয়া হতো বিস্ময়কর। তিনি জায়গা পেয়েছেন স্বভাবজাত নিয়মে। আর সেই সুযোগটা পূর্ণ ব্যবহার করবারই প্রতিশ্রুতি ক্রমাগত দিয়ে যাচ্ছেন অলরাউন্ডার মিরাজ। এদফা ব্যাট হাতেও দারুণ সব ইনিংসের পসরা সাজাবার খায়েশ তার।
এশিয়া কাপের মঞ্চেই তাকে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলো। তিনি দারুণ খেললেন। শতকও এলো তার ব্যাট থেকে। কৌশলগত পরিবর্তনে যেকোন দিন তিনি বনে যেতে পারেন বাংলাদেশের তুরুপের তাস। সেই আভাসই যেন ক্রমশ জোড়ালো হচ্ছে।
বিশ্বকাপের দুই প্রস্তুতি ম্যাচেই দুর্দান্তভাবেই চালালেন তার ব্যাট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বেশ বড় ব্যবধানের জয়ে, শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন তিনি। ম্যাচটা শেষ করে ফিরেছেন ব্যক্তিগত ৬৭ রানে। একই ধারা অব্যাহত থাকলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বৃষ্টির পর দ্রুত রান তোলার তাড়া ছিল। তাতে খুব বেশি বড় হয়নি মিরাজের ইনিংস। ৭৪ রানে থেমেছে তার ইনিংস।
তুখোড় সব বোলার, গতি আর বাউন্সের কাছে পরাস্ত হতে হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। তবে ভিন্নতা ছিল কেবল মিরাজের ইনিংসে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিং করেছেন তিন নম্বরে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন আবার চার নম্বরে। তবুও আসলে মিরাজ স্থির, নিজের কাজে।
বাউন্স সামলেছেন, গতির সাথেও ঠিকঠাক নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। তাছাড়া আদিল রশিদের ঘূর্ণি বিপক্ষে বেশ দায়িত্ব নিয়েই খেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। উপহার দিয়েছেন আরও এক দায়িত্বশীল ইনিংসের। প্রস্তুতি ম্যাচে বৃষ্টি বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৭৩ বলে ৬০ রান।
মিরাজ ক্রমশ দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হচ্ছেন। সাকিব আল হাসানের একদিন ফুরিয়ে যাবে সময়। সেই সময়টায় দায়িত্ব নেওয়ার জন্যে পুরোদস্তুর প্রস্তুত মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে এর আগেই এবারের বিশ্বকাপে তিনি বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিতে পরিণত হয়ে উঠছেন।
ওপেনিং থেকে শুরু করে লোয়ার মিডেল কিংবা মিডেল অর্ডার। সবখানেই ব্যাট করতে রীতিমত পারদর্শী তিনি। তাকে চাইলেই যেকোন পজিশনে মিরাজকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো সম্ভব। এই বিষয়টিই আসলে ড্রেসিং রুমে স্বস্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
তবে স্রেফ ব্যাট হাতেই যে মিরাজ কার্যকর তা কিন্তু নয়। তিনি বল হাতেও যেকোন সময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতেও পটু। ব্যাটে-বলে সমানতালে পারফর্ম করতে পারা ক্রিকেটারদের কদর গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই। মিরাজ জানেন তার সামর্থ্য দলকে কঠিন সব মুহূর্তেও খানিকটা এগিয়ে রাখতে পারে। তাইতো চেষ্টার কোন কমতি রাখছেন না তিনি।
যখনই সুযোগ পাচ্ছেন মেলে ধরছেন নিজের ভেতরে থাকা সবটুকু প্রতিভা। এমন উজ্জ্বল দিন অবশ্য প্রতিদিন আসবে না। মিরাজ হয়ত প্রতিদিনই বাংলাদেশের জয়ের নায়ক হবেন না। তবে তিনি সেই সামর্থ্যের বার্তা দিয়ে রাখছেন। এবারের বিশ্বকাপটায় ভাল কিছু করবার একটা আশা জাগিয়ে তুলছেন। এখন স্রেফ ভাগ্যের সহয়তাই প্রয়োজন।