এ যেনো তীরে গিয়ে তরী ডোবার গল্প।
চলতি দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম শ্রীলঙ্কা টেস্টের নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১ রানের জন্য টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল শতক মিস করলেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ফাফ ডু প্লেসিস। ওয়াইন্দু হাসারঙ্গার বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ১৯৯ রানে ফেরত যান ফাফ। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের দিনে মাত্র ১ আক্ষেপে সাবেক এই প্রোটিয়া অধিনায়ক।
অবশ্য এই আক্ষেপের তালিকায় ফাফ একাই নন। তিনি ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন আরো দশজন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ফাফ দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হন। তার আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ডিন এলগার এই আক্ষেপের স্বাদ পান।
১৯৮৪ সালে পাকিস্তানি ওপেনার মুদাসসার নাজার টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বপ্রথম ১৯৯ রানে আউট হন। ভারতের বিপক্ষে প্রায় ৫৫২ মিনিট ব্যাটিং করেন তিনি। ৪০৮ বলে ২৪ চারের সাহায্যে ১৯৯ করেন তিনি। শিবলাল যাদবের বলে উইকেটে পিছনে কিরিমানির হাতে ক্যাচ দিয়ে টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১৯৯ রানের আক্ষেপে পোড়েন তিনি।
তার ঠিক দু’বছর পরই ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই আক্ষেপের রেকর্ডে নাম লেখান সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। ১৬ চার ও ১ ছয়ে রাত্নায়েকের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে এই তালিকার দ্বিতীয় নাম তুলেন তিনি।
১৯৯৭ সালে এই তালিকায় একই বছর যুক্ত হন দু’জন। এশেজ টেস্টে ইংলিশদের বিপক্ষে ১৯৯ রানে আউট হন অজি ওপেনার ম্যাথিউ এলিয়ট। ২৬ চার ও ৩ ছয়ে ৩৫১ বলে ১৯৯ রানের ইনিংসের পর দ্বিশতক থেকে ১ রান দূরে থাকতেই ড্যারেন গচের বলে বোল্ড হয়ে ফেরত যান তিনি। সে ম্যাচে ড্যারেন ৫ উইকেট শিকার করলেও অজিরা জয় পায় ইনিংস ও ৬১ রানে।
একই বছর কলম্বোতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৯ রানের ইনিংস খেলেন সনাথ জয়সুরিয়া। ২১ চার ও ২ ছয়ে ১৯৯ রানে আবে কুরুভিলার বলে বোল্ড হয়ে ১ রানে আক্ষেপে মাঠ ছাড়েন তিনি।
তার দুই বছর পরই ১৯৯৯ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯৯ রানের ইনিংস খেলেন তৎকালীন অজি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। তবে সেই টেস্টে ১ উইকেটের দূর্দান্ত জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নেহেমিয়া পেরির বলে ১৯৯ রানে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে আউট হন স্টিভ।
এরপর ২০০৬ সালে লাহোরে ভারতের বিপক্ষে ব্যক্তিগত ১৯৯ রানে রান আউট হন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান ইউনিস খান। ওই ইনিংসে পাকিস্তানের চার ব্যাটসম্যান শতকের দেখা পান। দ্বিশতকের পথে দ্রুত রান নিতে গিয়ে রান আউটের শিকার হন ইউনিস।
২০০৮ সালে লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ১৯৯ রানের আক্ষেপের রেকর্ডে ভাগ বসান ইয়ান বেল। ১৯৯ রানে পল হ্যারিসের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে দ্বিশতক থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতে ফেরত যান তিনি। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই আক্ষেপের রেকর্ডে নাম লেখান বেল।
এরপর দীর্ঘ ৭ বছর পর ২০১৫ সালে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১৯৯ রানে আউট হন অজি ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ। জেরোম টেইলরের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ১ রানের জন্য দ্বিশতকের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেননি স্মিথ। সেই ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট লাভ করেন জেরোম টেইলর।
ঠিক পরের বছরই ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে ৫ম টেস্টে ওপেনিংয়ে নেমে ১৯৯ রানের ইনিংস খেলেন কেএল রাহুল। আদিল রাশিদের বলে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৯৯ রানের আক্ষেপের মাতা নুইয়ে বিদায় নেন রাহুল।
সবশেষ ২০১৭ সালে এই আক্ষেপের তালিকায় দশম খেলোয়াড় হিসেবে নাম লেখান দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ডিন এলগার। পচেফস্ট্রমে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৯ রানে আউট হন এলগার। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৯৯ রানে বিদায় নেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি সিরিজে ফাফ ডু প্লেসির করা ১৯৯ রানের ইনিংসটি টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ১১ তম ১৯৯ রানের ইনিংস। এই আক্ষেপের ক্লাবে দ্বিতীয় আফ্রিকান ও ১১ তম খেলোয়াড় হিসেবে নাম লেখান প্লেসিস।
এই ১১ জনের মধ্যে ৬ জন ক্রিকেটার পরবর্তীতে অবশ্য দেখা পেয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরির। তবে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, ম্যাথিউ এলিয়ট, কেএল রাহুল, ডিন এলগার ও ফাফ ডু প্লেসিসরা রয়ে গেলেন আক্ষেপের তীব্র যন্ত্রনায়। রাহুল, ডিন এলগার ও ফাফ ডু প্লেসিসের সুযোগ রয়েছে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে আরো বড় মাইলফলক স্পর্শ করার। তবে সেই ‘আক্ষেপের ১’ এ হয়তো আজীবন পুড়বেন এলিয়ট ও আজহারউদ্দিনরা।