আমার প্রথম টেস্ট ম্যাচ পুরোটা দেখা, ভারতীয় টাইম জোনে, ১৯৯৩ সালে – ভারত ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ, ইডেন গার্ডেন্সে। তার আগে যা দেখেছি, ওই ঝলক; কপিল দেবের ১২৯, শচীন টেন্ডুলকারের ১১১ এইসব। সত্যি কথা বলতে, টেস্ট ক্রিকেটের নিয়ম কানুনই জানতাম না সেভাবে।
তাও সবার মুখে শুনে শুনে ১৯৮৩ সালের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক কপিল আর বিস্ময় বালক শচীন টেন্ডুলকারের নাম (তখনও লিটল মাস্টার শচীন হননি) শোনা হয়ে গেছে। খেলা দেখতে বসলাম, ভারত টস জিতে ব্যাটিং নিলো, সিধু, বিনোদ কাম্বলি ও মনোজ প্রভাকর অল্প রানের মধ্যে ফিরে গেলে শচীনের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন এই হায়দ্রাবাদি স্টাইলিশ ‘রিস্টি’ ব্যাটসম্যান – মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন।
শচীনের সঙ্গে এলো শতরানের পার্টনারশিপ, কিন্তু সেদিন শচীন বিশেষ কিছু করতে পারেননি, ধীরগতির ৫০ করে আউট হয়ে যান; অন্যদিকে, কিন্তু স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন এই ব্যাটসম্যান, কব্জির মোচড়ে অফের বল অনে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেওয়া প্রথম সেদিনই দেখি।
প্রথম দিনের খেলার শেষে সেঞ্চুরি করে অপরাজিত এবং দ্বিতীয় দিনে দলীয় ৩৬২ রানের মাথায় দলের অষ্টম উইকেট হিসেবে যখন তাঁর পতন, ততক্ষণে নামের পাশে ১৮২ রান, মাত্র ১৯৭ বলে, ওয়ানডে-চিত ইনিংস। দলীয় ৯৩ রানের মাথায় নেমে যখন ৩৬২ রানে আউট হন, এর মধ্যে দলের করা ২৬৯ রানের মধ্যে ১৮২-ই এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে!
দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকে আর নামতে হয়নি, ইংল্যান্ড ফলো অন করে সামান্যই টার্গেট দিতে পেরেছিল যা দুই উইকেট হারিয়ে তুলে নেয় ভারত। সেদিন থেকে কয়েক বছর আমার ফেভারিট ভারতীয় ক্রিকেটার হয়ে যান যিনি, তাঁর নাম মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন।
পরবর্তীকালে কিছু অক্রিকেটীয় নিন্দনীয় কাজে জড়িয়ে পড়ে আমার চূড়ান্ত অপছন্দের তালিকায় চলে গেলেও, ধারাবাহিকভাবে তাঁর ব্যাট কখনো ভ্যান গঘের তুলি বা কখনো রানা প্রতাপের তলোয়ার হয়ে ঝলসে উঠেছে বারবার।বিশেষ করে ইডেন গার্ডেন্সে খেলা হলে তো কথাই নেই। ইডেনে ৭ টেস্টে ৫ সেঞ্চুরি সহ ১০৭ এর উপর গড়ে ৮৬০ রান করেছেন তিনি!
এর থেকে ভালো রেকর্ড ইডেনে আছে একমাত্র ভিভিএস লক্ষ্মণের। হয়তো এই ১৮২ তাঁর প্রথম পাঁচ বা দশটি ইনিংসের মধ্যে আসবে না, তবুও এই ইনিংসটি আমার মনে থেকে যাবে চিরকাল। ফলো অন কাকে বলে না জানা এক বালকের ক্রিকেট দেখার শুরুর দিনগুলি রঙিন করে দিয়েছিলেন তিনি, এটা কোনোদিন মিথ্যে হবে না।
ইডেনের জাদুকর মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনাকে চিরকাল সম্মান করবো।