গলায় তবু কলার তোলা রোয়াব

ইংল্যান্ডের তৎকালীন দলে মাইক আথারটন, নাসির হুসেইনরা পর্যদুস্ত করছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া অবধি সব দলকে। এই সময়েই মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বে ভারতীয় দল গেল ইংল্যান্ড সফরে, তিন ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ ভারত হেরে গেলেও এই টুর্নামেন্ট প্রত্যক্ষ করল ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তির স্বপ্নের উত্থান।

ক্রিকেটের তীর্থ ইংল্যান্ডের বাইশ গজে আটের দশক থেকেই যেন খরা চলছিল ভারতীয় ক্রিকেটে। উপমহাদেশীয় কোন দেশই যেন এজব্যাস্টন কিংবা লর্ডসের সবুজ পিচে সুইং আর গতিতে পেরে উঠছিল না ব্রিটিশদের সাথে।

ইংল্যান্ডের তৎকালীন দলে মাইক আথারটন, নাসির হুসেইনরা পর্যদুস্ত করছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া অবধি সব দলকে। এই সময়েই মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বে ভারতীয় দল গেল ইংল্যান্ড সফরে, তিন ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ ভারত হেরে গেলেও এই টুর্নামেন্ট প্রত্যক্ষ করল ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তির স্বপ্নের উত্থান।

সময়টা ছিল ১৯৯৬ সাল। ইংল্যান্ডের সাথে প্রথম টেস্টে এজব্যাস্টনে অভিষেক হয় তরুণ পেসার ভেংকটেশ প্রসাদের। ছয় উইকেট নিয়ে প্রসাদের দুরন্ত পারফরমেন্সের পরেও ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য প্রথম ম্যাচ হেরে গেল ভারত। অধিনায়ক আজহার দলের ব্যাটিংকে মজবুত করতে দ্বিতীয় টেস্টে দলে নিয়ে এলেন দুই তরুণকে – সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়।

দ্বিতীয় টেস্টে লর্ডসের ঐতিহাসিক গালিচায় আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হল ভারতীয় ক্রিকেটের এই দুই স্তম্ভের। টসে জিতে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠান আজহার।সবুজ সুইং নির্ভর পিচে প্রথম ইনিংসে ৩৪৪ রান তোলে ইংল্যান্ড। উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে অভ্যস্ত ভারতীয় ব্যাটিং-এর কাছে প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়া ছিল কার্যত অসম্ভব।

ইংল্যান্ডের লুইস, কর্ক, মুরালিদের দুর্ধর্ষ বোলিং আক্রমণের সামনে শুরুটাও বেশ নড়বড়েই হল ভারতের। ওপেনার বিক্রম রাঠৌর-এর উইকেট খুইয়ে চাপে পড়ল ভারত। এরপরই লর্ডসে নিজের জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে ক্রিজে আসেন ধ্রুপদী বাঁ-হাতি সৌরভ।

অদ্ভুতভাবে সকলকে চমকে দিয়ে ইংল্যান্ডের গতির বিরুদ্ধে পাল্টা মার শুরু করলেন তিনি। অফ সাইডে স্কোয়্যার আর মিড অফের মাঝখান দিয়ে দুরন্ত কভার ড্রাইভে ব্রিটিশ বোলারদের বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে শুরু করলেন ভারতীয় ক্রিকেটের দ্য গড অফ অফসাইড। কিন্তু সৌরভের অভাব ছিল যোগ্য সঙ্গদের।

নন স্ট্রাইকারে একের পর এক উইকেট খুইয়ে যখন ফের বেকায়দায় ভারত তখনি ক্রিজে এলেন রাহুল দ্রাবিড়। ভারতীয় ক্রিকেটের দ্য ওয়াল হয়ে ওথা দ্রাবিড় প্রথম ম্যাচেই যেন জানান দিলেন নিজের ঐশ্বরিক প্রতিভার। সৌরভের সঙ্গে জুটি বেঁধে রান করতে শুরু করলেন তিনি, ম্যাচের তৃতীয় দিনে নিজের শতরান পূর্ণ করলেন সৌরভ।

সঙ্গে নাম লেখালেন অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার সোনালি তালিকায়, দ্রাবিড় করলেন গুরুত্বপূর্ণ ৯৫ রান। এই দুজনের ব্যাটিং-এর সৌজন্যে লিড নিল ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড নির্ধারিত সময়ে ২৭৮ রান তুলে ডিক্লেয়ার দিলেও ম্যাচ অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়।

হয়ত সেদিন ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি ভারত কিন্তু এই লর্ডস টেস্ট জন্ম দিয়েছিল দুই মহাতারকার যারা আগামী দেড় দশক ধরে বিশ্বের মঞ্চে সসম্মানে মেলে ধরেছিল ভারতের জাতীয় পতাকাকে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় ক্রিকেটের কলার তোলা রোয়াবের শুরু যে সেই দিন থেকেই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...