বামহাতি অফ স্পিনার পাকিস্তানে সোনার হরিণের মতই। এই দেশে ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতারদের মত তারকা পেসারের জন্ম হয়েছে; লেগ স্পিনার আর সাকলায়েন মুশতাকের মত মিস্ট্রি স্পিনার দেখেছে ভক্ত-সমর্থকরা। কিন্তু বামহাতি অফ স্পিনার খুব একটা দেখা যায়নি। টেস্টে ক্রিকেট শুধুমাত্র একজন বামহাতি স্পিনার ৫০ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন; আবার ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট নেই কোন পাকিস্তানি বাঁ-হাতি স্পিনারের।
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের এই ঘাটতি মেটাতেই হয়তো আগমন ঘটেছে মোহাম্মদ নওয়াজের। রঙিন পোশাকে পাকিস্তান দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। চলতি এশিয়া কাপের দুই ম্যাচে তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচটা জেতাতে না পারলেও শেষ ওভারে সাহসী বোলিং করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচে তিনি আবার পুরোদস্তর ব্যাটার। ২০ বলে করেন ৪২ রান।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম মোকাবেলায় তাঁর বোলিং জয় আনেনি। তবে, পরের ম্যাচে ব্যাট দিয়ে তিনি ঠিকই জেতালেন পাকিস্তানকে।
পাকিস্তানের উঠতি কিশোর তরুণদের আদর্শ মূলত পেসাররা। মোহাম্মদ নওয়াজও তার ব্যতিক্রম নয়। রাওয়ালপিন্ডির এই ক্রিকেটার ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন শোয়েব আখতার হওয়ার। রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসের দেখাদেখি ফাস্ট বোলার হিসেবেই ক্রিকেট খেলা শুরু করেন নওয়াজ। যদিও বলে ততটা গতি ছিল না তাঁর।
মোহাম্মদ নওয়াজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পরিবর্তন নিয়ে আসে সতীর্থের ইনজুরি। অনূর্ধ্ব ১৪ দলের একটি খেলায় দলের স্পিনার মাঠের বাইরে থাকায় অধিনায়কের অনুরোধে স্পিন বোলিং করেন নওয়াজ। আর সেসময় তাঁর সাবলীল অ্যাকশন, টার্ন এবং উইকেট নেয়ার দক্ষতা মুগ্ধ করে সবাইকে। এরপর একটা সময় পেস বোলিং ছেড়ে পুরোদস্তুর অর্থোডক্স স্পিনার হয়ে উঠেন মোহাম্মদ নওয়াজ।
শুরুতে মোহাম্মদ নওয়াজের অস্ত্র বলতে ছিল অফ স্পিন এবং আর্ম ডেলিভারি। কিন্তু দুই ধরনের বল-ই নওয়াজ করতে পারেন একই অ্যাকশনে। তবে এই ক্রিকেটার জাদুকরি কিংবা রহস্যময় স্পিনার নন। নওয়াজ নিজেকে একজন সাদামাটা বোলার মনে করেন।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মোহাম্মদ নওয়াজ যখন বল করতে এসেছিলেন তখন ক্রিজে ছিলেন রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। পেসারদের বিপক্ষে প্রত্যাশিত রান করতে না পারায় দুইজনে স্পিনের বিপক্ষে মারমুখী ছিলেন। ওভারের শুরুতে ছয় হজম করলেও সাহস হারাননি নওয়াজ। তাই রক্ষণাত্মক বল করার পরিবর্তে ব্যাটারকে বাউন্ডারি মারার সুযোগ করে দেন।
রোহিতও এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে যাননি; কিন্তু নওয়াজের কিছুটা ধীরগতির বল বুঝতে ভুল করে বসেন তিনি। এরপর লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। কিছু সময় পর আরেক সেট ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকেও একইভাবে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দেন পাক স্পিনার নওয়াজ।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন মাত্র সাত রান প্রয়োজন ছিল ভারতের, তখন অধিনায়ক বল তুলে দিয়েছলেন মোহাম্মদ নওয়াজের হাতে। প্রথম বলেই চমৎকার ফ্লাইট ডেলিভারিতে রবীন্দ্র জাদেজাকে বোল্ড করেন তিনি। অবশ্য ওভারে তৃতীয় বলে হার্দিক পান্ডিয়া বিশাল ছয় হাঁকিয়ে এই বাঁহাতিকে বেদনা উপহার দিয়েছিলেন।
এশিয়া কাপের দ্বিতীয় মোকাবেলায় শারজা স্টেডিয়ামের দর্শকরা মোহাম্মদ নওয়াজের কাছে আবারো বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার উইকেট চেয়েছিল। ভক্তদের সেই আশা পূরণ হয়নি। তবে, ব্যাটার নওয়াজের উত্থানের দেখা ঠিকই মিলেছে।
এমনিতে লোয়ার মিডল অর্ডারে বড় শট খেলতে পারেন মোহাম্মদ নওয়াজ। সেই সাথে দুর্দান্ত বোলিং তো আয়ত্তে আছেই তাঁর। সব মিলিয়ে দারুণ এক প্যাকেজ।
সতীর্থ শাদাব খানের সঙ্গে জুটি করে পাকিস্তানের স্পিন বিভাগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। আর এমন ফর্মের ধারবাহিকতা ধরে রাখলে নি:সন্দেহে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে যাবে একজন মোহাম্মদ নওয়াজের গল্প; পেসারদের চারণভূমি পাকিস্তানের কিংবদন্তি হয়ে উঠবেন এক বাঁ-হাতি অফ স্পিনার। এর সাথে ব্যাটিংটা তাঁর জন্য তো প্লাস পয়েন্টই বটে।