নওয়াজের আগ্রাসনে মিডল অর্ডার সমাধান!

এমনিতে ব্যাটিংটা তিনি খারাপ করেন না। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গড়টা ৩৬, লিস্ট এ ক্রিকেটে ৩০ আর স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেটা ২২ এর কিছুটা বেশি। অথচ জাতীয় দলে এসে হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর লেফট আর্ম স্পিনার। ক্যারিয়ারের প্রথম সাত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ব্যাট করারই সুযোগ পেলেন না। তবে অষ্টম ম্যাচে এক ঝটকায় তাঁকে ব্যাটিংয়ে তুলে আনা হলো তিনে।

হঠাৎ পাওয়া সুযোগে স্ব-রূপটা তিনি দেখাতে ব্যর্থ হলেন। তাই আবারো লোয়ার অর্ডারেই ঠাঁই হলো তাঁর। বলছি পাকিস্তানের অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজের কথা। মেক শিফট ওপেনার হয়, মেক শিফট মিডল অর্ডার ব্যাটার কি কখনো হয়? হোক বা না হোক, এই মুহূর্তে পাকিস্তানের অন্যতম মেক শিফট মিডল অর্ডার ব্যাটার হচ্ছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। 

২০২১ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে ১০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেছিলন। আর এতেই অনেকের চোখে পড়ে নওয়াজের হিটিং এবিলিটি। কিন্তু তারপরও, পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়মিত মিডল অর্ডার ব্যাটারদের উপরে ভরসা রাখছিল। তবে এবারের এশিয়া কাপে সুপার ফোরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১৮২ রানের লক্ষ্যে হঠাতই চারে ব্যাট করতে নামিয়ে দেওয়া হয় নওয়াজকে। নওয়াজ সেই সুযোগটিই কাজে লাগালেন।

চাপের মুহূর্তে এসেও পাকিস্তানের ইনিংসে হাল ধরলেন। সে সময়ে প্রয়োজন ছিল ফুল ফেসে ব্যাটিং করা, একই সাথে রানের গতি বাড়ানো। মোহাম্মদ নওয়াজ সেই কাজটিই ঠিকঠাকভাবে করলেন। ৬ চার আর ২ ছক্কায় খেললেন ২০ বলে ৪২ রানের ইনিংস। আর ঐ ইনিংসই ম্যাচজয়ের পথে পাকিস্তানকে এগিয়ে দেয়। 

ভারতের বিপক্ষে এমন ইনিংসের পর সবারই আশা ছিল নওয়াজকে হয়তো চারেই ব্যাটিং করতে দেখা যাবে। কিন্তু অমন দুর্দান্ত ইনিংসের পরও পরের ম্যাচেই নিজের ব্যাটিং অর্ডার হারিয়ে ফেলেন তিনি। হয়তো ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায়, নওয়াজকে মেক শিফট মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে পরিকল্পনায় রেখেছিল ম্যানেজমেন্ট। তবে ভারতের বিপক্ষে ঐ ইনিংসের পর থেকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছয়/সাতেই ব্যাট করতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু তেমন সফল হতে পারছিলেন না। 

অবশেষে, ত্রি-দেশীয় সিরিজে এসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে আবারো চার নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পান মোহাম্মদ নওয়াজ। এ ম্যাচে তিনি যখন ব্যাটিংয়ে আসেন তখনো পাকিস্তানের ৪৩ বলে ৭২ রান প্রয়োজন। কিন্তু উইকেটে এসেই সব সমীকরণ পাল্টে দেন নওয়াজ। খেললেন ২০ বলে ৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। আর এতেই পাকিস্তান এক বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জয় পায়।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রি-দেশীর সিরিজের ফাইনাল। আগের দিনের মতো এ ম্যাচেও নাম্বার চারে ব্যাটিং করতে আসেন মোহাম্মদ নওয়াজ। তবে এ দিনেও চাপের মুহূর্তে ব্যাটিংয়ে আসেন তিনি। পাকিস্তানের তখনো ৫৯ বলে ১০০ রান প্রয়োজন। কিন্তু এ সব চাপ, ক্রাঞ্চ মোমেন্ট যেন স্পর্শ করে না মোহাম্মদ নওয়াজকে। দুই চার আর তিন ছক্কায় খেললেন ২২ বলে অপরাজিত ৩৮ রানের ইনিংস। আর এতেই ৫ উইকেটে ম্যাচটি জিতে নেয় পাকিস্তান। একই সাথে ত্রি-দেশীয় সিরিজের শিরোপাটিও নিজেদের করে নেয় তাঁরা।

৪২, ৪৫, ৩৮- তিনটি ছোট্ট ইনিংস। ইনিংসগুলো হয়তো আপাতদৃষ্টিতে খুব বড় ইনিংস না। কিন্তু এই সব ইনিংসগুলোর পাকিস্তানের ম্যাচ জয়ে প্রভাব ছিল অনেক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটাও ঠিক এমন। দুর্দান্ত ইনিংসের চেয়ে ছোট ছোট ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস বেশি প্রয়োজন। মোহাম্মদ নওয়াজ সেই দাবিই মিটিয়েছেন। তবে নওয়াজের ব্যাটিংয়ের বিশেষত্ব হল, যে কোনো মুহূর্তে তিনি ব্যাটিং করতে পারেন, ক্লিন হিট করতে পারেন। আর মুহুর্তের মধ্যে ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেওয়ার সক্ষমতাও আছে তাঁর। 

পাকিস্তানের মিডল অর্ডার নিয়ে এই মুহূর্তে সমালোচনা অনেক। পাকিস্তানের স্বয়ং ক্রিকেট গ্রেটরাই এই মিডল অর্ডার নিয়ে আশাবাদী নন। এমনকি অনেকে প্রকাশ্যে সমালোচনাও করেছেন। অবশ্য সমালোচনার যৌক্তিক কারণও রয়েছে। ওপেনিংয়ে রিজওয়ান কিংবা বাবর আজমের বাজে দিনে বাকি ব্যাটাররা মিলে কোনো ম্যাচ জিতিয়ে দেবে, এমন ভাবনা হয়তো পাকিস্তানের খোদ সমর্থকরাও করে না।

সেই অনাস্থা থেকেই হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট নওয়াজকে দিয়ে লেট মিডল অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করানোর চেষ্টা করছে। টানা দুই ম্যাচে সে পরীক্ষায় ভালভাবেই উৎরে গেছেন নওয়াজ। তবে বিশ্বকাপ অবধি এই পজিশনেই নওয়াজকে ব্যাট করতে দেখা যাবে কিনা সেটি সময়ই বলে দিবে। অবশ্য তেমন কিছু না হলেও রান তাড়া করার ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে যে মোহাম্মদ নওয়াজকে মেক শিফট মিডল অর্ডার ব্যাটার ভূমিকায় দেখা যাবে- সেটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link