ঘৃণার চেয়েও বিরাট তিনি

ক্রিকেট ম্যাচ চাইলে আপনি জিততে পারেন, হারতেও পারেন। জয় বা পরাজয়ের রেশ আসলে খুব বেশিদিন টিকে না। কিন্তু টিকে যায় ঘৃণার রেশ। শুধু রেশই থাকে না, সুগন্ধীর মত ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিকে।

এই যেমন মোহাম্মদ শামির কথাই ধরা যাক। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটায় তার পারফরম্যান্স বলার মত ছিল না। তবে অনলাইনে যেভাবে তাঁকে আক্রমণ করা হল, তার সাথে ম্যাচ বা পারফরম্যান্সের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টা এমন ভাবে তাঁকে ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে দিয়েছে যে এর রেশ থাকবে বেশ কিছুদিন।

শামি যদি স্রেফ বলে দেন ‘এনাফ ইজ এনাফ’ – ছেড়ে যান বিশ্বকাপের মঞ্চ; তাহলেও হয়তো তাঁকে আঁকড়ে ধরার, আকটে রাখার পথ পাবে না। তবে,  ভয় নেই – শামি লড়াই ছাড়বেন না, বিশ্রামেও যাবেন না। অতীতে অনেক বারই মাঠের বাইরের ঘটনা বা ইনজুরিকে বাউন্সারে জবাব দিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন, এবারও আসবেন।

উত্তর প্রতেশে থেকে কলকাতায় আসা ছোট্ট সেই ছেলেটি এসেছিলেন স্রেফ ক্রিকেটার হবে। জীবনটা তাঁর যোদ্ধার চেয়ে কম কিছু নয়। তবে, ইনজুরি, ধর্মীয় বিদ্বেষ আর পারিবারিক টানাপোড়েন – অনেক কিছুই তাঁর পথে বাঁধা হতে চেয়েছে, পারেনি।

শামি বারবারই শিকল ভেঙে বের হয়ে আসতে পেরেছেন। এমনও সময় এসেছে, যখন ব্যক্তিগত জীবনটা তাঁর এতটাই দুর্দশাগ্রস্থ যে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটাই প্রায় হুমকির মুখে পড়েছে। সেই অবস্থা থেকেও যোদ্ধা শামি ফিরেছেন, যুদ্ধ করেছেন ভারতের তিন রঙা পতাকা বুকে নিয়ে, বিজয়ী হয়েছেন।

ব্রিটিশ মিডিয়া একবার এজবাস্টনে জেঁকে ধরেছিল তাঁকে। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন করে কাঁপিয়ে দিতে চেয়েছিল শামির ভীত। শামি কাঁপেননি। শুধু ঠাণ্ডা মাথায় জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা আমাকে মাঠে আরো প্রবলভাবে নিজেকে প্রমাণ করা তাগিদ দেয়।’ তিনি যা বলেন, সেটাই তো করে দেখেন।

শামির ‍গুরুত্ব গুটিকয়েক অন্ধ সমর্থক নামের স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী না বুঝলেও ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিকই বুঝে। তাই, এই ধরণে ঝুট ঝামেলা থেকে তাঁকে সরিয়ে রাখার জন্য তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করছে।

টিম ম্যানেজমেন্ট সব সময়ই পাশে থাকে শামির। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে ইনজুরিগ্রস্থ শামি পুরো ফিট ছিলেন না। তার ওপর টানা এক বছর ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দূরে। তারপরও মহেন্দ্র সিং ধোনি তাঁকে বিশ্বকাপ খেলতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

আর টি-টোয়েন্টি শামির বর্তমান যা ফর্ম তাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে চার ওভারে ৪৩ রান হজম করাটাকে স্রেফ একটা দুর্ঘটনা – মানাই যায়। এই সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে সর্বশেষ যে ছয়টা ম্যাচ তিনি খেলেছেন সেখানে ১১ টি উইকেট পেয়েছেন ১৪.৬৪ গড়ে, ইকোনমি রেট ৬.৭১। জাসপ্রিত বুমরাহ’র সাথে ভারতের তিনিই একমাত্র বোলার যার একাদশে জায়গাটা পাঁকা ধারা যায়।

তবে, এর আগে যে ঘৃণা তাঁর বিরুদ্ধে ছড়ানো হয়েছে, তার চেয়ে নিজের পারফরম্যান্সের সৌরভটাকে প্রবল করতে হবে শামির। ডান হাতি এই পেসারের জন্য শিকল ভাঙার এমন গান গাওয়া তো নতুন কোনো ব্যাপার নয়। শামি পারবেন, আগেও পেরেছেন। এবার কেন নয়! ঘৃণার চেয়েও বিরাট বড় তিনি।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link