মুম্বাই ও অধিনায়কত্ব, গোটা ব্যাপারটাই ভীষণ কর্পোরেট

রোহিত শর্মা এখন অতীত, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নতুন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি জানিয়েছে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আপনি রেগে যেতেই পারেন এই খবর শুনে। রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বে পাঁচ-পাঁচটা আইপিএল ট্রফি জেতার পরেও মুম্বই তাকে কেন সরাল, হার্দিক টাকার বিনিময়ে বিকিয়ে যাওয়া একজন বলে ক্ষোভ উগরে দিতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

তবে কী জানেন? গুজরাট টাইটান্স থেকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে হার্দিকের ঘর ওয়াপসি এবং আজ এই অধিনায়কত্ব পাওয়ার গোটা ব্যাপারটাই ভীষণ কর্পোরেট। আপনি-আমি যতটা আবেগ দিয়ে বিষয়গুলোকে ভাবছি, ততটা একেবারেই নয়৷

২০২০-২১ এর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) একেবারে সাদামাটা কেটেছিল হার্দিকের। একে তো চোটের বশে বোলিং করতে পারছিলেন না, তার ওপরে ব্যাটে-বলেও হচ্ছিল না আগের মতো। এরপরে কোনও দিন আগের মতো বোলিং করতে পারবেন কি-না সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেছিল। এতকিছু ভেবেই হার্দিককে ছেড়ে দেয় মুম্বাই।

গোটা সিদ্ধান্তই দলের স্বার্থে নেওয়া, তখনও কোনও আবেগ কাজ করেনি। তারপরের ঘটনা প্রায় প্রত্যেকেরই জানা। সেই বছরই অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আইপিএল ট্রফি জেতেন হার্দিক, পরের বছর ফাইনালেও পৌঁছায় দল। সবমিলিয়ে, গুজরাটের জার্সিতেই নিজেকে অধিনায়ক হিসেবে প্রমাণ করেছেন হার্দিক। আমরা যেমন চাকরি ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে জয়েন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, এখানেও ব্যাপারটা সেরকমই।

এই অবধি কারুর কোনও সমস্যা নেই, ঝামেলার সূত্রপাত এরপর থেকেই। এ বছর নিলাম শুরুর আগেই হার্দিককে ফের দলে ভিড়িয়ে নেয় মুম্বাই। গুজরাট রিটেইনড খেলোয়াড়দের লিস্টে হার্দিকের নাম রেখেছিল, তা সত্ত্বেও পরের দিন জানা যায়, মুম্বইয়ের শিবিরে যাচ্ছেন হার্দিক। ভক্তদের একটা বড় অংশ এই ঘটনা এখনও মেনে নিতে পারেননি, সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায় – প্রচণ্ড গালিগালাজ করা হচ্ছে হার্দিককে! তিনি নাকি শুধু টাকা চেনেন, লয়্যালিটি বলে কিচ্ছু নেই, হ্যানত্যান আরও কত কী!!

ভেবে বলুন তো? ঠিক কে কে টাকা চেনে না? হার্দিক খুব ভাল করেই জানেন, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ব্র্যান্ড হিসেবে গুজরাট টাইটান্সের চেয়ে একশো যোজন এগিয়ে। তাদের অধিনায়ক হলে তিনি যতটা লাইমলাইটে থাকতে পারবেন, গুজরাট সেই সুযোগ কোনো ভাবেই তাকে দিতে পারবে না।

তাছাড়া, আইপিএলে মুম্বাইয়ের অধিনায়ক হতে পারলে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্বের জন্যও এক পা বাড়িয়ে রাখা যায়। হার্দিক সবমিলিয়ে নিজের দিকটাই দেখেছেন। অন্যদিকে রোহিতেরও নতুন করে কিছু পাওয়ার নেই মুম্বইয়ের জার্সিতে। তিনিও খুব ভাল করে জানেন, মাথায় অধিনায়কের টুপি না থাকলেও ‘মুম্বাই কা রাজা’ তিনিই।

রোহিত নিজেই একটা ব্র্যান্ড, ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে ঝামেলায় জড়াতে চাইবেন না তিনি। উলটে হার্দিকের অধিনায়কত্বে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাইবেন বাইশ গজে৷ ভবিষ্যৎবাণী করে রাখি, এবছর আইপিএলে অন্যরকম রোহিতকে দেখার সম্ভাবনা প্রবল।

রোহিত-হার্দিক-মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যানেজমেন্টের প্রত্যেকেই পেশাদার, কর্পোরেট। নিজেরা নিজেদের টুকু খুব ভাল করেই বোঝে। ঝামেলায় জড়িয়ে যায় আমাদের মতো সাধারণ ভক্তরা। সামান্য কিছু ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়ে মাতামাতি করে সময় নষ্ট করি প্রত্যেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link