মুশফিকের টি-টোয়েন্টিটা ঠিক আসে না

ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে বাংলাদেশ জাতীয় দল বিদায় নিয়েছে এশিয়া কাপের মঞ্চ থেকে। ছয় দলের এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নেওয়া প্রথম দল বাংলাদেশ। যদিও শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলের ব্যাটারদের ইন্টেন্টটা ছিল বেশ প্রশংসনীয়। তবুও বোলারদের খামখেয়ালিপনা অথবা চাপ সামলে নিতে না পারার খেসারতটাই দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে সবচেয়ে দৃষ্টিকটু বিষয় হয়ে হয়ত আবারও সামনে এলো মুশফিকুর রহিমের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং।

ওপেনিংয়ে মেহেদি হাসান মিরাজের ঝড়ো ইনিংসের পর, আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, সাকিব আল হাসান এমনকি তাসকিন আহমেদের ব্যাটটাও চলেছে টি-টোয়েন্টির মেজাজ বুঝে। এমনকি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও চেষ্টা করে গিয়েছেন। তবে তাঁর স্বর্ণালী সময় যে হয়েছে অতীত সে বিষয় তো তিনি মানতেই নারাজ। তবে এতকিছুর পরও চোখের বালি ছিলেন সেই মুশফিকুর রহিম।

দীর্ঘ সময় ধরে তিনি খেলছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। টেস্ট ও ওয়ানডেতে তাঁর পরিসংখ্যান বাংলাদেশের জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক। তিনি সেখানটায় বাংলাদেশের সবচেয়ে আস্থাভাজন ব্যাটারদের একজন। এই বিষয়টা নিয়ে তর্ক হওয়ার সুযোগই নেই। তবে মুদ্রার উল্টো পিঠ টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান। এখানটায় তিনি গড়পরতা মানের কিংবা তার থেকে খানিকটা নিচের দিকেই অবস্থান তার।

তিনি যে গড়পরতা মানের সে বিষয়টা অবশ্য খোলামেলা ভাবেই বলে বসেছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি বোলার ওয়াসিম আকরাম। এশিয়া কাপের ম্যাচে ধারাভাষ্য কক্ষে ওয়াসিম আকরামের কণ্ঠটাও বেশ প্রতাপশালী। বাকি দেশের প্রতিনিধিদের মত সেখানটায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের আতাহার আলী খান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে এই দুই কিংবদন্তি ছিলেন ধারাবিবরণের দায়িত্বে।

মুশফিকুর রহিম যখন ব্যাট করতে নামেন তখন এই দুই জন একসাথেই ধারাভাষ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। মেহেদি হাসান আউট হওয়ার পর যখন মুশফিকুর রহিমের পরিসংখ্যানের একটা ঝলক ভেসে ওঠে টেলিভিশনের পর্দায় তখনই তাঁর প্রসংশা করেন আতাহার। মুশফিকুর রহিমের স্ট্রাইকরেটের উপরই বেশি জোর দেন আতাহার।

তিনি বলেন, ‘মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসানের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচকতা বয়ে নিয়ে আসতে পারে। পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেওয়া যাক। ১০০ এর বেশি ম্যাচ খেলে প্রায় ১৫০০ রানের কাছাকাছি এবং স্ট্রাইকরেট ১১৫।’ ১০০টি  টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা একজন খেলোয়াড়ের রান এতদিনে অন্তত ২০০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ার কথা। তবুও আতাহার আলী খান প্রসংশা করলেন। স্ট্রাইক রেটটা ইতিবাচক সে বিষয়টা জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করলেন।

তবে ওয়াসিম আকরাম এই আলোচনা একেবারেই এড়িয়ে যেতে পারেননি। এই কিংবদন্তি পরক্ষণেই নিজের মতামত রেখেছেন। তিনি আতাহার আলী খানের সাথে সম্মতি না জানিয়ে বরং বলেন, ‘আমার বলতেই হচ্ছে এটা সেরা স্ট্রাইক রেট নয়। সে একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। কিন্তু এই ফরম্যাটের সেরা ব্যাটারদের স্ট্রাইক রেটের দিকে যদি নজর দেওয়া যায় তবে দেখা যাবে তাঁদের স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর উপরে।’

হয়ত বাকি অভিজ্ঞ ক্রিকেট বিশ্লেষকদেরও একই মত। তবে নিজের এই কমতির জায়গাটা ঠিক আন্দাজ করতে পারছেন না মুশফিকুর রহিম। তিনি বুঝতে চাইছেন না শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কোন কাজেই আসবে না। একজন ব্যাটার হিসেবে খেলতে হলে অন্তত তাঁর স্ট্রাইক রেট হওয়া চাই ১৩০ এর উপরে। অথচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেও পাঁচ বল খেলে মাত্র চার রানে আউট হয়ে গিয়েছেন মুশফিকুর রহিম।

অপরদিকে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত নয় বল খেলে করেছিলেন ২৪ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ক্রিজে টিকে থাকাটা কখনোই ইতিবাচকতার প্রচার ঘটায় না। এই বিষয়টা মুশফিক না বুঝতে পারলেও, বাকি ক্রিকেট বোদ্ধাদের বেশ ভাবায়। অন্যদিকে তাঁর উইকেট কিপিংও এখন বেশ প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু মুশফিক যতদিন পর্যন্ত নিজের এই সামর্থ্যের অপারগতার বিষয়টি না বুঝতে পারবেন ততদিন অবধি আসলে ক্ষতিটা বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link