মনে বেজায় কষ্ট। সে কষ্টটা ছাপিয়ে এবার জায়গা করে নিয়েছে পায়ের চোট। সেটা ভোগাবে সপ্তাহ দু’য়েক। খবর তো তেমনই চাওড় হচ্ছে সর্বত্র। মুশফিকুর রহিম সম্ভবত নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়টাই পার করছেন। তিনি হয়ত মনে মনে একটা কথাই বারে বারে বলছেন, ‘আমার সময় আবার আসবে’।
মুশফিকুর রহিমকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছুই নেই। তিনি তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে তিনি জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে। এখনও ঠিক অতীত হয়ে যাননি তিনি। তবে ব্যাটটা ঠিক তাঁর কথা শুনছে না। সময়টাও নেই একেবারেই তাঁর পক্ষে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মহীনতার সবচেয়ে বড় ফলাফলটাই যেন ভোগ করতে হল তাঁকে। রাজ্যের সমালোচনা মাথায় নিয়ে বিদায় বলে দিলেন ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণকে। সিদ্ধান্তটা তাঁর জন্যে তো বটেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যেও যে বেশ খাসা হয়েছে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি বড্ড বেশি সেকেলে। তাঁকে দিয়ে অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা হয় না।
তবে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র বাকি থাকা দুই ফরম্যাটে। ওয়ানডে এবং টেস্ট ক্রিকেটের তিনি এখনও টাইগার ক্রিকেটের সেরা ব্যাটার। এমনকি তাঁর বিকল্প এখনও খুঁজে পায়নি দল সে কথা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। সেটা হয়ত তিনি বেশ ভাল করেই জানেন। তবুও একটি ফরম্যাট থেকে বিদায় নেওয়া মানেই তো, আড়াল থেকে একেবারে বিদায় নেওয়ার উঁকি দেওয়া। সেটা তো ভাল করেই আন্দাজ করতে পারার কথা মুশফিকুর রহিমের।
তবে তেমনটা হতে এখনও সময় বাকি। তবুও মনের গহীন কোণে দুঃখের আনাগোনা হওয়া তো একেবারেই অবান্তর নয়। মানুষ হয়ে জন্মালে সুখ-দুঃখ নিয়েই তো করতে হবে বসবাস। বেদনার সেই অনুভূতি তো আর চাইলেই চোখে থাকা চশমার মত করে খুলে রাখা যায় না। সেই দুঃখ কাটিয়ে যখনই তিনি ফিরেছেন নিজেকে বাকি দুই ফরম্যাটের জন্যে গড়ে তোলার মিশনে, তখনই আবার অহেতুক ইনজুরির হানা।
ক্ষত হয়েছে জিম করতে গিয়ে। সেই ক্ষততে আবার সেলাই লেগেছে পাঁচখানা। মরার উপর খাঁড়ার ঘা। বিশ্রাম নিতে হবে সপ্তাহ দুয়েক। বাহ্যিক ক্ষতের তো চিকিৎসা হয়। শেষে ভাল হয়। তবে হৃদয় গভীরে যে ক্ষত হয় তা তো আর এমননি এমননি ঠিক হয়ে যায় না। তবে মুশফিকুর রহিম রীতিমত এক অদম্য যোদ্ধা। তিনি নিশ্চয়ই হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে পড়ে রইবেন না। তিনি উঠবেন, লড়াই করবেন।
এই ক্ষতের নিরাময় কেবল হবে সমালোচনার মোক্ষম জবাবে। আর সে জবাবটা যে ব্যাট হাতেই দিতে হবে সেটাই মুশফিকের চাইতে আর ভাল কেই বা জানে। সকল কিছুর হিসেব তিনি ফিরিয়ে দেবেন মাঠে। নিজেকে হয়ত সেভাবেই প্রস্তুত করবেন চোট কাটিয়ে। এই শোককে যদি তিনি শক্তিতে পরিণত করতে পারেন তবে মুশফিক যে ঠিক কতটা ভয়ংকর তাঁর উদাহরণ তো নিকট অতীত ঘাটলেই চোখের সামনে চলে আসবে।
বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক সবার প্রত্যাশা মুশফিকুর রহিমের ফর্মে ফেরা। ২০২৩ বিশ্বকাপ আসরটা বসতে চলেছে ভারতের মাটিতে। সেখানে তাঁর ব্যাট জ্বলে ওঠা বড্ড বেশি জরুরি। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের অপেক্ষা। মুশফিক নামক আগ্নেয়গিরিটা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিতে পারে সবকিছু। অপেক্ষার প্রহর জুড়েই সেদিনটা। আহত বাঘ বরাবরই হিংস্র।