নীরবে ছুটে চলা জুটি

কুমিল্লা পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জয় নিয়ে এখন আছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ অবস্থানে। দলটির বড় বড় নাম তাঁদের এই জয়গুলোর নায়ক হয়েছে। তবে প্রতি ম্যাচেই বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের হাপিয়ে তুলেছেন এই দুই স্পিনার। আসলের কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বাজি তো ছিল এই স্পিন বোলিং জুটিই।  

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলটাতে তারার মেলা। ফাফ ডু প্লেসিস, সুনীল নারাইন, মঈন আলীদের নিয়ে গড়া দলটায় ম্যাচ উইনারের অভাব নেই। আবার লোকাল ক্রিকেটের তারকা লিটন, জয়রাও আছেন দলটায়। ফলে খবরের শিরোনাম হবার মত চরিত্রের অভাব নেই এই দলটায়। তবে কুমিল্লায় এমন দুজন আছেন যারা আসলো মূলশক্তিতে পরিণত হয়েছেন-দুই দেশি স্পিনার তানভীর ইসলাম ও নাহিদুল ইসলাম। খবরের শিরোনাম যেই হোক, প্রতি ম্যাচেই জয়ের ভীতটা গড়ে দেন এই দুই স্পিনার।

শক্তপোক্ত দল গড়ে কুমিল্লা সাফল্যও পাচ্ছে। শুধু এই আসরে না, বিপিএলের ইতিহাসেই সবচেয়ে সফল ও গোছানে দলগুলোর একটি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আর এই লিগ নিয়ে বরাবরই বেশ সিরিয়াস কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রতিবারই তারকা বিদেশি ক্রিকেটার ও লোকাল ক্রিকেটের সেরাদের নিয়ে দল সাজায় কুমিল্লা।

যেমন এবারো বিদেশি ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় নামগুলো এসেছে কুমিল্লায় হয়ে খেলতেই। এছাড়া লিটন, ইমরুল, জয়দের মত জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইন আপ। পারভেজ হোসেন ইমনের সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যানও তাঁদের একাদশে সুযোগ পাচ্ছেনা। এছাড়া বোলিং লাইন আপে আছে মুস্তাফিজুর রহমানের মত পেসার। তবে কুমিল্লার স্পিন ডিপার্টমেন্টে নেই বড় কোন তারকা। তাঁরা ভরসা রেখেছেন দুই দেশি স্পিনার তানভীর ইসলাম ও নাহিদুল ইসলামের উপর।

কুমিল্লার এই ভরসার শতভাগ প্রতিদান দিচ্ছেন বাংলাদেশের এই দুই স্পিনার। এই দুজনের কেউই কখন জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাননি। তবুও কুমিল্লার মত দল এই দুই স্পিনারকে নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজানোয় বিপিএলের শুরুতে খানিকটা অবাকই হয়েছিল দর্শকরা। তবে কুমিল্লার এই দুজনের উপর ভরসা করার কারণ ছিল। দুজনই বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার।

সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুজনই ভালো বোলিং করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে রীতিমত ঝড় তুলে ফেলেন নাহিদুল ইসলাম। এই প্রথম এত তারকার ভীরে নিজেকে একটু তুলে ধরলেন এই স্পিনার। বরিশালের বিপক্ষে এই স্পিনার বোলিং করেছিলেন মাত্র ১.২৫ ইকোনমি রেটে।

মানে পুরো চার ওভার বোলিং করে খরচ করেছিলেন মাত্র ৫ রান। চার ওভারের মধ্যে ১৯ টিই করেছিলেন ডট বল। এছাড়া তুলে নিয়েছিলেন তিনটি উইকেটও। এর আগে বিপিএলের ইতিহাসে চার ওভার বোলিং করে ৫ রান দিয়েছিলেন শুধু শহীদ আফ্রিদিই। সেদিন আফ্রিদিকে টপকে নিজের নামটাই সবার উপরে নিয়ে আসেন এই স্পিনার।

এছাড়া এখন পর্যন্ত কুমিল্লা যেই পাঁচ ম্যাচ খেলেছে তাঁর সবগুলোতেই দারুণ বোলিং করেছেন এই স্পিনার। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই কিপ্টে বোলিং করে এসেছেন। তবে এবারের বিপিএলে যেন সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেলেন। ৫ ম্যাচে মাত্র ৮৭ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৯ উইকেট। বোলিং গড় মাত্র ৯.৬৬। আরো অবাক করা বিষয় এই টি-টোয়েন্টি লিগেও তাঁর ইকোনমি রেট মাত্র ৪.৫৭।

ওদিকে আরেক স্পিনার তানভীর ইসলাম কোন ম্যাচেই খবরের শিরোনাম না হলেও নিয়মিত ভালো বোলিং করে গেছেন। নাহিদুলের সাথে তাঁর বোলিং জুটি প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। এই স্পিনার পাঁচ ম্যাচের প্রতি ম্যাচেই উইকেট নিয়েছেন।

এই স্পিনারের ইকোনমি রেটও যথেষ্ট ইর্ষনীয়। এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ৬.২৬ ইকোনমি রেটে বোলিং করে নিয়েছেন ৮ উইকেট। নাহিদুলের থেকে তাঁর ঝুলিতে কম মাত্র এক উইকেট। ইকোনমি রেট মাত্র ১৪.৮৭। তানভীর যে ৫ টি ম্যাচ খেলেছেন তাঁর তিনটিতেই ২ টি করে উইকেট নিয়েছেন।

কুমিল্লা পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জয় নিয়ে এখন আছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ অবস্থানে। দলটির বড় বড় নাম তাঁদের এই জয়গুলোর নায়ক হয়েছে। তবে প্রতি ম্যাচেই বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের হাপিয়ে তুলেছেন এই দুই স্পিনার। আসলের কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বাজি তো ছিল এই স্পিন বোলিং জুটিই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...