২৬ ডিসেম্বর – রোহান কাহ্নাইয়ের জন্মদিন।
এই দিনটাতেই দুনিয়ার আরেক প্রান্তে বসে আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন কে এল রাহুল; কান্নানুর লোকেশ রাহুল। এই সেঞ্চুরিটাকে আপনি রোহান কাহ্নাইয়ের প্রতি একটা ট্রিবিউট বলে ধরে নিতে পারেন।
অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, লোকেশ রাহুলের সাথে রোহান কাহ্নাইয়ের সম্পর্কটা কী?
আছে, একটা সম্পর্ক আছে। লোকেশ রাহুলের নামটা আসলে একটা ভুলের ফল। সেই ভুলটা না হলে তার নাম হওয়ার কথা ছিলো লোকেশ রোহান। এই ‘সামান্য’ ভুল রাহুলকে রোহান থেকে আলাদা করে ফেলেছে। নইলে দুই রোহানের একটা সম্পর্ক তো ছিলোই!
আচ্ছা, গল্পটা খুলে বলা যাক।
রাহুলের বাবার নাম কে এন লোকেশ। কলেজ জীবনে ক্রিকেট খেলেছেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। কিন্তু মারাত্মক ক্রিকেট প্রেম কমেনি। ক্রিকেট প্রেম না বলে লোকেশের প্রেমটাকে ‘গাভাস্কার প্রেম’ বলা ভালো। সুনীল গাভাস্কারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন কে এন লোকেশ। তাই যখন ছেলে জন্ম নিল, ঠিক করলেন গাভাস্কারের ছেলের নামে নিজের ছেলের নাম রাখবেন। আর এখানেই ভুলটা হয়ে গেল।
সুনীল গাভাস্কারের ছেলের নাম আর গাভাস্কার; রোহান গাভাস্কার। এখন লোকেশ বাবু এই ‘আর’ মানে ভেবেছিলেন রাহুল। তাই ছেলের নাম রাখলেন লোকেশ রাহুল। ভুলের ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন তো। কিন্তু এখনও আপনার কাছে মনে হয় রোহান কানহাইয়ের সাথে লোকেশ রাহুলের মিলটা পরিস্কার না।
তাহলে আরেকটা তথ্য আপনার জানা দরকার। সেটা হলো, রোহান গাভাস্কারের নামটা সুনীল রেখেছিলেন প্রিয় সমসাময়িক ব্যাটম্যান রোহান কানহাইয়ের নামে। এবার তাহলে পরিস্কার?
রোহান কানহাই>রোহান গাভাস্কার>লোকেশ রোহান; থুড়ি, রাহুল!
আচ্ছা রাহুলের নামের মাহাত্ম এখানেই শেষ নয়। ভুল করে হোক, আর যেভাবেই হোকটা নামটা তার রাহুল তো বটেই। ফলে রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে একটা সম্পর্ক না থেকে উপায় নেই। এখন তো সম্পর্ক আছেই। এখন জাতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। আর দলেরই এখন বড় ভরসা লোকেশ রাহুল। কিন্তু রাহুলদের এই সম্পর্ক কেবল এই জাতীয় দলের নয়।
সেটা জানতে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে।
অনূর্ধ্ব ১৯ দল থেকে এসে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা শুরু করেন লোকেশ রাহুল। প্রথম দুটো বছর খুব ভালো কিছু করতে পারেননি। ২০১৩ সালে এসে চমকে দিলেন। এক হাজারের ওপরে রান করলেন সেবার রঞ্জি ট্রফিতে। এর মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি, তিনটি নব্বইয়ের ঘরে ইনিংস। তবে আসল ব্যাপারটা ছিল রাহুলের দূরন্ত ব্যাটিং টেকনিক। তার ব্যাটিং স্টাইল অনেক সিনিয়রকেই মুগ্ধ করেছিলো সে সময়। আর এই সিনিয়রদের মধ্যে একজন ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়।
দ্রাবিড় কেবল মুগ্ধ হয়ে থেমে থাকেননি। সেই সময় থেকে এই রাহুলকে নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। আর সে কাজের ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।
যেখানে উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানরা দেশের বাইরে ভালো করতে পারেন না, সেখানে উজ্জল ব্যতিক্রম লোকেশ। দেশের চেয়ে দেশের বাইরেই সেঞ্চুরি বেশি তার। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সেঞ্চুরিটা করার ভেতর দিয়ে ক্রিকেটীয় সব মহাদেশেই টেস্ট সেঞ্চুরি করা হলো লোকেশ রাহুলের।
এখন দেখার বিষয় রোহান কাহ্নাই আর রাহুল দ্রাবিড়ের ‘নেমসেক’ কতদূর যেতে পারেন।