Social Media

Light
Dark

নেপাল বাঁধা ও বাংলাদেশের ফাইনাল স্বপ্ন

২০১৮ সাফ নিয়ে এখনো আলোচনা হচ্ছে। বিশেষত সর্বশেষ আসর থেকে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর এখনো আলোচনা হচ্ছে ঢাকার সেই আসর নিয়ে। আবারো আরেকটি টুর্নামেন্টে একই পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি এখন হয়ে পড়েছে ডু অর ডাই। জিতলে ফাইনালে খেলতে পারবে আর হারলে বিদায়। তিন বছর আগে শেষ আসরেও ঘরের মাঠে একই পরিস্থিতিতে পরে এই নেপালের কাছে হেরেই বাড়ির পথ ধরতে হয়েছে।

২০০৫ সালে পর আবারো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার হাতছানি দিয়ে ডাকছে এই ম্যাচে। দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে হিমালয় কন্যা দেশটির বিপক্ষে আবার সর্বশেষ জয়টা এসেছিল জামাল ভুইয়ার দলের। এবারের আসরে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির শেষ ম্যাচে নেপালকে হারিয়েই ফাইনালে খেলবে বাংলাএদশ, এমনটাই আশা করছেন বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন এবং অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া।

লিগ পর্বে আজ নেপালের মুখোমুখি হচ্ছে ২০০৩ সালের চ্যাম্পিয়নরা। বিকাল পাঁচ টায় মালের ফুটবল স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচটি এবারের সাফে বাংলাদেশের জন্য অঘোষিত ‘সেমিফাইনাল’ও বটে। জিতলে ফাইনাল আর পয়েন্ট হারালে দেশের পথে বিমানে ওঠা।

ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে কোচ বদল করে মালদ্বীপের সাফে এবার দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। লিগ পর্বের প্রথম দু’মাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এবং ভারতের বিপক্ষে ১০ জন নিয়ে ড্র করে স্বপ্নপূরণে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে এসে স্বাগতিক মালদ্বীপের কাছে হেরে ফাইনালে খেলা অনেকটাই কঠিন করে তোলেন জামাল-তপু-ইব্রাহিম-জিকোরা।

ফলে লিগের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই তাদের সামনে। আর এটা করতে হলে ফুটবলারদের মাঠে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেওয়ার কোন বিকল্প নেই। যা করতে প্রস্তুত হয়ে আছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। দক্ষিন এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এই টুর্নামেন্টে তিন বছর আগের স্মৃতি ফিরে এসেছে পর্যটন নগরী মালেতে।

২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সাফে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে এই নেপালের বিপক্ষে ড্র করলেই যেখানে সেমিফাইনালে পা রাখতেন জামালরা, সেখানে ২-০ গোলে হেরে ঘরের মাঠের টুর্নামেন্টে দর্শক বনে যান খেলোয়াড়রা। আজকে সেই একই অবস্থানে মালদ্বীপে এবার দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দল। তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পাওয়া নেপালের জন্য ফাইনালে ওঠার সমীকরণ মেলাতে হলে প্রয়োজন শুধুমাত্র একটি ড্র।

সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশের সামনে ফাইনালে যাওয়ার একটাই পথ, সেটি জয়। নেপালকে হারাতে পারলে ২০০৯ সালের পর সাফের প্রথম রাউন্ড পেরুনোর দারুণ কৃতিত্ব অর্জন করবে বাংলাদেশ দল। পাশাপাশি ২০০৫ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফুটবল আসরের ফাইনালে খেলার টিকিট পাবে লাল-সবুজ পতাকাধারীরা।

তাই কারো কাছে সেমিফাইনাল আবার কারো কারো কাছে এটি ফাইনাল ম্যাচ। তৃতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে হারের কারণ হিসেবে টানা ম্যাচ খেলার ক্লান্তিকে সামনে এনেছিলেন তারা। তবে এবার পাঁচ দিনের বিরতিতে সতেজ হয়েই নেপালের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। আর প্রতিপক্ষ নেপাল যদিও বিশ্রাম পেয়েছে মাত্র দুইদিন। এখানেই বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের পাশাপাশি সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে কিন্তু লাল-সবুজদের চেয়ে এগিয়ে আছে নেপালই।

র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ যেখানে ১৮৯তম স্থানে রয়েছে সেখানে ২১ ধাপ এগিয়ে নেপাল রয়েছে ১৬৮ নম্বরে। মুখোমুখি লড়াইয়ে ১৩-৮ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও নিকট অতীতের দেখায় নেপালের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের ২৯ মার্চ কাঠমান্ডুতে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে হিমালয়ের দেশটির কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে শিরোপা স্বপ্নভঙ্গ হয় জামালদের। ওই ম্যাচে অবশ্য কোচের চেয়ারে ছিলেন ব্রিটিশ জেমি ডে। আর কোচের চেয়ারে রয়েছেন স্প্যানিশ অস্কার ব্রুজোন।

অথচ ফুটবলে একটা সময় নেপালকে নিয়মিত হারাতো বাংলাদেশ। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ধারা অব্যহত ছিল। এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশের পরাজয়ের পালা। এই নেপালের কাছে বার বারই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পরাজয় স্বীকার করেছে বাংলাদেশ। ২০১১, ২০১৩ এবং ২০১৮ এই তিনটা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তিনবারই পরাজয়ের বেদনাঁয় সমর্থকদের কাঁদিয়েছেন ফুটবলাররা।

যার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন আর কষ্টের পরাজয় ছিল ২০১৮ সালের সাফে। সবমিলিয়ে নেপালের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ২৪ ম্যাচ খেলে ১২টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে নেপাল জিতেছে ৮ ম্যাচে। দুই দল ড্র করেছে বাকি ৪ ম্যাচ। এই তথ্য বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য তৃপ্তিদায়ক মনে হতে পারে। এর আগে ২০১৩ সালে সুনীল ছেত্রীর শেষ মুহূর্তের গোলে জয়বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।

তবু গ্রুপের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালেও চলত, কিন্তু সেদিন ভারত ম্যাচের পারফরম্যান্সটাও পা থেকে উধাও হয়ে যায় জামাল-মামুনুলদের। তারও আগে ২০১১ সালের আসরে সেমিতে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল মালদ্বীপ। সে ম্যাচও জিততে হতো বাংলাদেশকে, কিন্তু আলী আশফাকদের সামনে কোনভাবে দাঁড়াতেই পারেনি সে দল।

তার আগে ২০০৮ কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অগ্নিপরীক্ষায় হেরে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ২০০৯ সালে ঠিক এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে যেমন সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ, তার আগে ১৯৯৯ সাফে পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ জয় আছে বাংলাদেশ দলের।

১৯৯৫ সালের প্রথম সাফে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলে এই নেপালের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে। তবে ভেঙে পড়ার উদাহরণটাই এখন বেশি হয়ে যায়। শেষ তিনবারেই যে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। সাফের বাইরে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে বাংলাদেশ জিতলেও সাফে আবার হেরে যায় স্বাগতিকদের কাছে ২-০ ব্যবধানে। তার আগে ২০১১ সাফেও গ্রুপ পর্বে পরাজিত হয়েছিল।

মুখোমুখি দেখায় এগিয়ে থাকলেও আজকের ম্যাচে কে এগিয়ে থাকবে সেটাই বলা মুশকিল। সুযোগ কাজে লাগানোটাই বড় হয়ে যাবে। তবে দুই দলের লড়াইয়ে গোল নামক বস্তুর দেখা যে পাবে শেষ হাসিটা তারই হবে। চাপমুক্ত থেকে খেলার লক্ষ্যটাই বড় দুই দলের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link