অভিযোগ সত্যি হলে বলা যায়, নেপালের ক্রিকেটের পোস্টার বয় খ্যাত সন্দীপ লামিছানে যেন নিজের পায়ে নিজেই কুড়ালটা মারলেন। অপার সম্ভাবনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে নিজ হাতে সব অর্জনে কালিমা মাখলেন। ক্রিকেট দুনিয়ার কাছে নেপালের যা একটু নাম ডাক তাঁর পুরোটাই তাঁর জন্য। দেশটি একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার মর্যাদাই তো লাভ করেছে ২০১৮ সালে।
বাইশ বছরের জীবনে খেলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে জৌলুস ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলেও। তাছাড়া পিএসএল ও বিপিএলের নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। খেলেছেন বিগ ব্যাশের আসরেও। কিন্তু অল্প বয়সে এতো অর্জন সম্ভবত কিছুটা বেপরোয়া করে তুলেছিলো এই লেগ স্পিনারকে। তাই হয়তো নিজের সাথে সাথে নিজের দেশের ক্রিকেটকেও কলঙ্কে ডোবালেন।
সন্দীপের লামিছানের বিরুদ্ধে অভিযোগটা খুবই গুরুতর, এর জন্য ফৌজদারী সাজা পাবেন তিনি। অপ্রাপ্তবয়স্ক এক নারীকে ধর্ষণ করেছেন নেপালের জাতীয় ক্রিকেট দলের এই অধিনায়ক, অভিযোগ এমনই। জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। তাই দেশে ঢোকা মাত্রই লামিছানেকে গ্রেফতার করা হবে। জ্যামাইকা তালাওয়াসের হয়ে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলছিলেন তিনি। দল তাঁকে ছেড়ে দেয়ায় দেশে ফিরে আসবেন তিনি শীঘ্রই। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর তাকে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে বরখাস্ত করা হয়।
গত ২১ আগস্ট এক অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে নিজের হোটেল রুমে এনে দু’বার ধর্ষণ করেন লামিছানে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এমন অভিযোগ করেছে মেয়েটির বাবা-মা। এরপরদিনই দল নিয়ে কেনিয়া সফরে যান লামিছানে। সন্দীপ লামিছনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন রকম তথ্য সংগ্রহ করছে। হোটেলের টিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখছে। পুলিশ ইন্টারপোলের কাছে লামিছানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দাখিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে লামিছনে রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি ভিত্তিহীন। তিনি লিখেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার খবর, আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আমি কী করব আর কী করব না ভেবে পাচ্ছিলাম না। এদিকে আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে এবং আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেপালে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। ফিরে গিয়ে (অভিযোগের বিরুদ্ধে) জোরালোভাবে লড়াই করবো আমি।’
লামিছানে প্রথম থেকেই অভিযোগটি একেবারে অস্বীকার করে আসছিলেন। তিনি এক ইন্সটাগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘আমি নির্দোষ এবং নেপালের আইনের ওপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিপিএল থেকে বেরিয়ে যাব ও কয়েকদিনের মধ্যে নেপাল চলে যাব। আমি সব ভিত্তিহীন অভিযোগের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আশা করি নির্দোষের প্রতি বিচার হবে এবং সঠিক তদন্ত হবে। আশা করব আইন সবার জন্য সমান হবে।’
অভিযোগ প্রমাণিত হলে সন্দীপ লামিছানের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার এক নিমিষেই শেষ হতে যাচ্ছে। অভিযোগ সত্যি হলে শাস্তিটাও বেশ কঠিন হতে যাচ্ছে। জীবনের একটা সময় শ্রীঘরে কাটাতে হবে তাঁকে। আর যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং সন্দীপ লামিছানে নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। আসল ঘটনা জানতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে পুলিশি তদন্ত শেষ হওয়া অব্দি।