মিরপুর থেকে দুবাই, একই গল্পের পুনরাবৃত্তি

ভারতের দেয়া ১৮২ রানের টার্গেটে রিজওয়ানের উপরে ভর করেই এগিয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তান। কিন্তু ব্যক্তিগত ৭১ রানে যখন তিনি আউট হয়ে গেলেন তখনো পাকিস্তানের প্রয়োজন ১৯ বলে ৩৫ রান। এর পর ব্যাটিংয়ে এলেন আসিফ আলী। একটা লাইফ পেলেন বটে, কিন্তু ২ ছক্কা আর ১ চারে এক ঝটকায় ম্যাচটি নিজেদের করে নিলেন। ৮ বছর আগের শহীদ আফ্রিদি যেন হঠাৎ আবির্ভূত হলেন আসিফ আলী হয়ে। 

যুক্তি, তর্ক আর উত্তাপ – এ যেন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সমার্থক রূপ। এশিয়া কাপে এ দু-দলের মহারণ এখন দাঁড়িয়ে আছে নয় ছয়ে। বুঝতে সমস্যা হলো কি? আচ্ছা একটু বুঝিয়েই বলি, এশিয়া কাপে নিজেদের মধ্যে ১৭ দেখায় ভারতের জয় নয়টিতে আর পাকিস্তানের জয় ছয়টিতে। পাকিস্তানের এ ছয় জয়ের ষষ্ঠ জয়টি পেয়েছে সুপার ফোরের ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে।

তবে ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপে তাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ম্যাচ জয়ের ব্যবধানটা কত বছরের জানেন? ৮ বছর। ২০১৪ এশিয়া কাপের পর ২০২২ সালে এসে আবারও ভারতের বিপক্ষে জয় পেল তারা। এর মাঝে ভারতের বিপক্ষে টানা দুই আসর তারা ছিল জয়হীন। যাই হোক, দীর্ঘ ৮ বছর পর এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে এ ম্যাচ জয়ের নায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আসিফ আলীর বিধ্বংসী ব্যাটিং যেন ফিরিয়ে আনলো ২০১৪ সালে মিরপুরের সেই স্মৃতি। সেবার পাকিস্তান জিতেছিল ২ বল হাতে রেখে আর এবার পাকিস্তান জিতলো ১ বল হাতে রেখে। আপাতত সে ম্যাচের স্মৃতি রোমন্থন করা যাক।

৬ মার্চ, ২০১৪। সমর্থকদের উত্তাপে সরগরম মিরপুরের মাঠ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বলে কথা। পাকিস্তান টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। রোহিত শর্মা, রাইডু আর জাদেজার ফিফটিতে ভারতের স্কোর বোর্ডে জমা হয়েছে ২৪৫ রান।

২৪৬ রান, পাকিস্তানের জন্য বড় কোনো লক্ষ্য না। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের লড়াইয়ের তো একটা মহিমা আছে। সে মহিমায় লড়াইয়ের বার্তা সবসময়ই থাকে। তাই মোটামুটি পুঁজি নিয়েও ভারত লড়াই করেছিল বেশ। ২৪৬ রানের টার্গেটে মোহাম্মদ হাফিজ ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু দলীয় ২০০ রানের মাথায় তিনি আউট হয়ে গেলে পাকিস্তানের জয়ের পথে প্রবল আশঙ্কা দেখা দেয়। একটা সময়ে শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ১০ রান। হাতে উইকেট দুটি। তবে বিপত্তিটা বাঁধে ব্যাটিং প্রান্তে থাকা সাইদ আজমল আউট হয়ে যাওয়ার পর। বাইরে একটি মাত্র উইকেট থাকায় এক মুহূর্তের জন্য তখন কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তান।

তাছাড়া তাদের একমাত্র ভরসা শহীদ আফ্রিদি রয়েছেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে। তাই ম্যাচহারের শঙ্কাই তখন বেশি। তবে প্রায় নিভে যাওয়া প্রদীপে আলো হয়ে আসেন সেই শহীদ আফ্রিদিই। জুনায়েদ খান একটি সিঙ্গেলে প্রান্ত বদল করলে স্ট্রাইক প্রান্তে যান শহীদ আফ্রিদি।

পরের চার বলে দরকার নয় রান। এমন সমীকরণেই শহীদ আফ্রিদি পরের ২ বলে মারেন ২ ছক্কা। আর এরপরেই দু’হাত প্রসারিত করে আইকনিক স্ট্যাচু পোজে আফ্রিদি বুঝিয়ে দিলেন, জয়টা আজ পাকিস্তানেরই। আর তিনি সে জয়ের নায়ক। অন্যদিকে টানা দুই ছক্কা হজম করে ম্যাচ হারের হতাশায় হতবিহ্বল আশ্বিন। মাথায় হাত দিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া সেদিনের অশ্বিনের সে ছবিটি এখনো ভারত সমর্থকদের পোড়ায়।

৮ বছর পরে সেই একই গল্পের পুনরাবৃত্তি। ফরম্যাট বদলেছে কিন্তু গল্পের রঙ বদলায়নি। ২০১৪ সালের সে ম্যাচে মোহাম্মদ হাফিজ ম্যাচ সেরা হলে শেষের ঝলকে পুরো ম্যাচের আলো কেড়ে নিয়েছিলেন শহীদ আফ্রিদি। আর এবার রিজওয়ান ম্যাচসেরা হলেও আফ্রিদির ভূমিকায় আসেন আসিফ আলী।

ভারতের দেয়া ১৮২ রানের টার্গেটে রিজওয়ানের উপরে ভর করেই এগিয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তান। কিন্তু ব্যক্তিগত ৭১ রানে যখন তিনি আউট হয়ে গেলেন তখনো পাকিস্তানের প্রয়োজন ১৯ বলে ৩৫ রান। এরপর ব্যাটিংয়ে এলেন আসিফ আলী। একটা লাইফ পেলেন বটে, কিন্তু ২ ছক্কা আর ১ চারে এক ঝটকায় ম্যাচটি নিজেদের করে নিলেন। ৮ বছর আগের শহীদ আফ্রিদি যেন হঠাৎ আবির্ভূত হলেন আসিফ আলী হয়ে।

পাকিস্তান ম্যাচ জিতল ৫ উইকেটে। আর মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের সব আলো কেঁড়ে নিলেন আসিফ আলী। রবিচন্দ্রন আশ্বিন সে দৃশ্য দেখলেন সাইডলাইনে বসেই। যেন ফিরে গেলেন ৮ বছর আগের মিরপুরের সেই স্মৃতিতে। মিরপুর থেকে দুবাই, জয়ের ধরণে যেন সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...