কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলের দারুণ জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ব্রাজিল। কিন্তু সেই ম্যাচে নেইমারের চোট খানিকটা চিন্তার ভাঁজ ফেলে ব্রাজিল কোচ তিতের। শুরুতে শোনা গিয়েছিল কেবল গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোর জন্য ছিটকে গিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা। কিন্তু চোটের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের এই তারকাকে এবারের বিশ্বকাপে আর দেখতে না পাবার সম্ভাবনাই বেশি।
গত সপ্তাহেই ব্রাজিলের চিকিৎসক রদ্রিগো লাসমার জানিয়েছিলেন নেইমারের ডান পায়ের অ্যাংকেলের লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পিএসজি তারকা গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে মাঠে নামবেন না।
ব্রাজিলের কোচ তিতে অবশ্য আত্নবিশ্বাসের সাথে জানান সার্বিয়া ম্যাচে চোটে পড়া দুই ফুটবলার – নেইমার এবং রাইটব্যাক দানিলো খুব দ্রুতই রিকোভার করছেন এবং দ্বিতীয় রাউন্ডের আগেই মাঠে ফিরবেন। নেইমারের মতো দানিলোও ডান পায়ের অ্যাংকেলে চোট পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি নেইমার এবং দানিলো এবারের বিশ্বকাপে আবারো খেলবে। যদিও আমি এই ব্যাপারে মন্তব্য করার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি নই। আমি কেবল এতটুকুই বলতে পারি নেইমার এবং দানিলো দুজনের পরিস্থিতিই দ্রুত উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি নক আউট পর্বের আগেই তাঁরা ফিট হয়ে যাবে।’
কিন্ত দিন গড়ানোর সাথে সাথে সংবাদমাধ্যমের নানা প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসছে নেইমারের চোটের সর্বশেষ পরিস্থিতি। ইংলিশ সাময়িকী দ্য মিরর জানিয়েছে প্রথমে ধারণা করার চাইতে বাজে পরিস্থিতিতে আছে নেইমারের চোট।
এবারের বিশ্বকাপে তাঁর মাঠে নামার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাঁদের মতে নেইমার কাতারে তাঁর শেষ ম্যাচটা ইতোমধ্যে খেলে ফেলেছেন। এসব চোট থেকে সেরে উঠতে অন্ততপক্ষে আড়াই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। সেক্ষেত্রে ব্রাজিল যদি ফাইনালে উঠতে পারে, তখন হয়তো নেইমারকে ফিট পাওয়া যেতে পারে।
চোট ছাড়াও নেইমারের মাঝে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে। এখনোন পুর্নবাসন প্রক্রিয়া পুরোপুরি শুরু করেননি তিনি, কেবল পুলে সাঁতার কেটেছেন। সার্বিয়ার বিপক্ষে চোটের পর ফিজিওথেরাপি, ইলেক্ট্রোথেরাপি এবং ক্রিপ্টোথেরাপি নিয়েছেন এই তারকা। তাঁর চোটের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন ব্রাজিলের চিকিৎসক দল।
বিশ্বকাপে নেইমারের ইনজুরি ভাগ্য বেশ খারাপ। ২০১৪ বিশ্বকাপেও কলম্বিয়ান হুয়ান জুনিগার বাজে ফাউলে ছয় মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে যান। তাঁকে ছাড়া সেমিফাইনালে সেবার লজ্জার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। ২০১৮ বিশ্বকাপেও পুরোপুরি ফিট ছিলেন না নেইমার, সেবার পায়ের পাতার ইনজুরিতে হাফফিট নেইমার ব্রাজিলকে নিয়ে গিয়েছিলেন শেষ আটে।
নেইমার ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকলেও ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রিভালদো মনে করেন এই তারকাকে ছাড়াও বিশ্বকাপ জিততে সক্ষম ব্রাজিল। তিনি বলেন, ‘নেইমার অবশ্যই দলের প্রথম পছন্দ। তবে সে ছাড়াও দলে আরো ভালো স্ট্রাইকার আছে, যারা মাঠে নেমে পার্থক্য গড়ে দিতে সক্ষম। বিশ্বকাপের মতো আসরে চোটজনিত সমস্যা হতেই পারে। তবে এবারের দলটা দারুণ সব ফুটবলারে পরিপূর্ণ। আমি আশা করি দল সাজাতে তিতের কোনো সমস্যা হবে না।’
গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে ১-০ গোলে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডের আগে খানিকটা চাপেই থাকবে ব্রাজিল। শেষ ষোলোতে তাঁদের প্রতিপক্ষ সন হিউং মিনের দক্ষিণ কোরিয়া। শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে তাঁরা আছে দারুণ ফর্মে। সুতরাং শেষ আটে পৌছানোর লড়াইটা মোটেই সহজ হবে না নেইমারবিহীন ব্রাজিলের জন্য।