টিকিটাকার অসহায় আত্নসমর্পন

সবাইকে অবাক করে দিয়ে রূপকথার গল্পই যেন লিখলো ‘এশিয়ার ব্রাজিল’ জাপান। শেষ ম্যাচে স্প্যানিশদের টিকিটাকা থামিয়ে দিয়ে মাত্র ১৭.৭% পজেশন নিয়েও ২-১ গোলে ম্যাচ জিতেছে তাঁরা। এ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলো জাপানিরা।

এবারের বিশ্বকাপে যেন গ্রুপ অফ ডেথ কিংবা মৃত্যকূপে পড়েছিলো জাপান। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি, ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেন কিংবা ২০১৪ বিশ্বকাপের চমক কোস্টারিকাকে পেছনে ফেলে তাঁদের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার স্বপ্নটা তো অলীককল্পনাই। অনেকে তো জল্পনাকল্পনা করছিলেন জাপানকে যারা বেশি গোল দিতে পারবেন তাঁরাই হবেন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রূপকথার গল্পই যেন লিখলো ‘এশিয়ার ব্রাজিল’ জাপান। শেষ ম্যাচে স্প্যানিশদের টিকিটাকা থামিয়ে দিয়ে মাত্র ১৭.৭% পজেশন নিয়েও ২-১ গোলে ম্যাচ জিতেছে তাঁরা। এ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলো জাপানিরা।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই জার্মানির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছিল জাপান। সেদিন জার্মান মেশিন তাঁরা থামিয়ে দিয়েছিল দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাক আর প্রেসিং দিয়ে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই হোঁচট খায় জাপানিরা, গ্রুপের খানিকটা পিছিয়ে থাকা দল কোস্টারিকার সাথে ড্র করে। ফলে শেষ ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে খানিকটা পিছিয়েই ছিল তাঁরা।

এবারের বিশ্বকাপে টিকিটাকাকে যেন পুর্নজন্ম দিয়েছে লুইস এনরিকের স্পেন। বল পায়ে রেখে ছোট ছোট দুরন্ত সব পাসে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো উড়িয়ে দিচ্ছে। পেদ্রি, গাভি এবং বুসকেটস ত্রয়ীর মিডফিল্ড যেন সুযোগই দিচ্ছিল না প্রতিপক্ষকে। জাপানের বিপক্ষেও এদিন একই রীতি অনুসরণ করেই মাঠে নামে স্পেন। ফলাফলও পেয়ে যায় হাতেনাতেই, ১১ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে দেন আলভারো মোরাতা। প্রথমার্ধে স্পেন আধিপত্য বিস্তার করে খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে ছিল পুরো ভিন্নচিত্র।

স্পেনের তিকিতাকা যেন পুরো মার খেয়ে যায় জাপানিজদের কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবলের সামনে। তাঁদের ক্রমাগত প্রেসিংয়ের ফলে স্প্যানিশ ফুটবলাররা ঠিকমতো পাসই দিতে পারছিলেন না। অন্যদিকে জাপানিদের পরিকল্পনা ছিল সাধারণ, বল হারালে দ্রুত বলের পেছনে ছোটো। প্রতিপক্ষে আক্রমণ সাজানোর আগেই বল কেড়ে নাও আর নিজেরা দ্রুত কাউন্টারে উঠো।

ছোটখাটো গড়নের জাপানিরা গতিশীল হওয়ায় স্পেন বল হারালেই দ্রুতগতিতে উইং দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠেছে। যার জবাব ছিল না স্প্যানিশ ডিফেন্ডারদের কাছে, ফলাফল মাত্র তিন মিনিটের মাঝে দুই গোল বের করে নিয়েছে তাঁরা। এরপরের সময়টাতে দাঁতে দাঁত চেপে রক্ষণ সামলে গেছে তাঁরা, ফলাফলস্বরূপ সবাইকে পেছেন ফেলে গ্রুপচ্যাম্পিয়ন তাঁরাই।

ম্যাচে মাত্র ১৭.৭% পজেশন নিয়েও তাই পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন করায় জয়ী দলের নাম জাপান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত এত কম বল পজেশন নিয়ে ম্যাচ জিততে পারেনি কেউই। স্পেনকে যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বল পজেশন রাখলেই ম্যাচ জেতা যায় না, বরং বলটাকে পাঠাতে হয় তিনকাঠির মাঝে। 

তাঁদের এই জয়ের পাশাপাশি গ্রুপের অন্য ম্যাচে কোস্টারিকাকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে জার্মানি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিদায় নিতে হচ্ছে তাঁদেরকেই। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে জাপানের সঙ্গী হবে স্পেন। তবে স্প্যানিশদের হারানোর পদ্ধতিটা গোটা বিশ্বকে যেন দেখিয়ে দিল জাপান।

অন্যদিকে ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো জাপান। কোয়ার্টার ফাইনালে যাবার লড়াইয়ে তাঁরা মুখোমুখি হবে গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার। স্পেন, জার্মানিকে হারানোর পর ক্রোয়েশিয়া বড় বাঁধা হওয়ার কথা নয় জাপানিদের সামনে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...