ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে (আইপিএল) তর্কাতীতভাবেই অনেকে বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, আইপিএল শুরুর পর দীর্ঘ এ সময়কালে একবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ভারত। সেমিফাইনাল নয়তো ফাইনাল, সিংহভাগ আসরেই তীরে এসে তরী ডুবেছে টিম ইন্ডিয়ার।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিতে হেরে বিশ্বকাপস্বপ্ন সেখানেই থেমে গিয়েছিল বিরাট-রোহিতদের। রোহিত শর্মা তবুও একবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতলেও এখনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা অধরাই থেকে গিয়েছে বিরাট কোহলির জন্য।
মাস ছয়েক বাদে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যখন আসন্ন, তখন প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই বিশ্বকাপে থাকবেন তো ভারতের এ ব্যাটিং সেনসেশন?
শুধু বিরাট নয়, এই বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা আছে রোহিত শর্মার ক্ষেত্রেও। ভারতীয় ক্রিকেটে দুজনই রীতিমত ব্যাটিং স্তম্ভ। তবে আলোচনা কিংবা বিশ্লেষণের জায়গায় এ দুই ব্যাটারকে দাঁড় করালে দেখা যায়, ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে এই ফরম্যাটে বিরাট-রোহিতকে এক ম্যাচের জন্যও ভারতের জার্সি গায়ে দেখা যায়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিরাট, রোহিত- দুজনই রয়েছেন বিশ্রামে। বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজ বাদে আর একটি সফরই পাবে ভারত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই সিরিজেও এ দুই ক্রিকেটারকে দেখা যাবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে প্রবল সন্দেহ। অর্থাৎ এ দুই ক্রিকেটারই যদি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফেরেন, তবে সরাসরি বিশ্বকাপের মঞ্চেই প্রত্যাবর্তন হবে তাদের।
প্রশ্নের জায়গাটা তৈরি হয় এখানেই। গত এক বছর ধরে বিরাট, রোহিতের জায়গায় যারা সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা দুর্দান্ত ব্যাটিং করেই টিকে আছেন। এই যেমন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন রুতুরাজ গায়কড়।
পুরো সিরিজে ২০০ এর উপরে রান করেছেন প্রায় দেড়শো স্ট্রাইকরেটে। অপর ওপেনার জশস্বী জয়সওয়াল তো ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৭০ স্ট্রাইকরেটে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেঞ্চুরি রয়েছে এ ওপেনারেরও। এ ছাড়া ভারতের অজি সিরিজে বিশ্রামে থাকা শুভমান গিলও দলের প্রায় অটোচয়েসে রূপান্তরিত হয়েছেন। চলতি বছরে এই ফরম্যাটে শতক হাঁকিয়েছিলেন তিনিও।
সব মিলিয়ে দলে রোহিত শর্মার আগমন ঘটলে নিশ্চিতভাবেই বাদ পড়বেন ফর্মে থাকা দুই ওপেনার। একই ভাবে বিরাট কোহলির অবর্তমানে যেই সুযোগ পেয়েছেন, সে-ই পারফর্ম করেছেন। তাঁর বিকল্প হিসেবে কখনো শ্রেয়াস আইয়ারকে দেখা গিয়েছে কখনোবা আবার নাম্বার তিনে ব্যাট করেছেন জয়সওয়াল। তারুণ্যে ভরা দলটা তাই শেষ এক বছরে কোহলি কিংবা রোহিতের অভাবটাই বুঝতে দেয়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এমন একটা দলে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির প্রয়োজন কি আছে? আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসের শীর্ষ দুই রান সংগ্রাহক ব্যাটার এ দুইজন। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে অভিজ্ঞতাটাও প্রয়োজন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এ দুই ক্রিকেটার দলে ফিরলে গত এক বছর ধরে চলে আসা টিম কম্বিনেশনটাই নষ্ট হতে পারে। পুরোপুরি নতুন এক কম্বিনেশনে বিশ্বকাপ খেলতে হবে ভারতকে। আর সেই নতুন কম্বিনেশনে যে দলের হিতে বিপরীত হবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?
এমন সব প্রশ্নের উত্তর কিংবা সম্ভাব্যতায় তাই মধুর এক সমস্যাতেই আগামী কয়েকটা মাস কাটাতে হবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। এখন দেখার পালা, বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এ দুই ক্রিকেটারের ব্যাপারে ঠিক কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় বিসিসিআই।