কোনো সহ-অধিনায়ক দরকার নেই!

এমনিতে বরাবরই উত্তপ্ত থাকে ভারতের ক্রিকেট পাড়া। এক ইস্যু নিয়ে চর্চা শেষ হতে না হতেই আরেক ইস্যু নিয়ে আবার নাড়াচড়া শুরু। একেক জনের কথার স্রোতকে পুঁজি করে তাই বাইশ গজের বাইরেও ভারতীয় ক্রিকেটের সীমাহীন ব্যস্ততা। একটুও বিশ্রাম নেই, বিরাম নেই।

এবারের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি শুরু হওয়ার আগেই ভারতীয় একাদশে লোকেশ রাহুল জায়গা পাবেন কিনা, এমন একটা আলোচনার স্রোত বইতে শুরু করেছিল। কিন্তু অর্ধেক সিরিজ শেষ। লোকেশ রাহুলকে নিয়ে সেই একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

সিরিজ শুরুর আগেই তাঁর একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে উঠেছিল অনেক প্রশ্ন। এমন কি তাঁকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ভারতের দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার আকাশ চোপড়া আর ভেঙ্কটেশ প্রসাদ। লোকেশ রাহুলকে নিয়ে তাদের মধ্যে চলমান টুইটার যুদ্ধে যুক্ত হয়েছিলেন সাবেক স্পিনার হরভজন সিংও।

এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, লোকেশ রাহুলকে নিয়ে এত বেশি আলোচনার কী আছে কিংবা কেনই বা হচ্ছে ? প্রথমত, শেষ ১০ টেস্টে হতশ্রী অবস্থা লোকেশের। অন্যদিকে, তাঁর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে যাকে ভাবা হচ্ছে সেই শুভমান গিল এখন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে রয়েছেন। ভারতীয় বেশিরভাগ ক্রিকেট বিশ্লেষকের রায়ই গিলের পক্ষে। তারপরও একাদশে তাঁর সুযোগ না মেলায় লোকেশ রাহুলকে নিয়ে এই আলোচনা, সমালোচনাটা থামছেই না।

তবে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট শেষ মেশ আলোচনাটা শেষ হওয়ার একটা বার্তা দিয়েছে বটে। টানা অফ ফর্মে থাকা রাহুল ভারতের টেস্ট দলের সহ-অধিনায়কও ছিলেন। তবে প্রথম দুই টেস্টের পর তাঁর কাছ থেকে সেই দায়িত্ব কেড়ে নিয়েছে ভারত।

সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী অবশ্য এই দুই-এরই অবসান চান। পরের টেস্টে লোকেশ রাহুলের জায়গায় দলে দেখতে চান শুভমান গিলকে। তবে চমকপ্রদ এক আলোচনার দ্বার খুলে দিয়েছেন অন্য এক মন্তব্যে। তাঁর মতে, টেস্ট দলে নাকি সহ-অধিনায়ক থাকাটাই ঠিক না!

আইসিসি’র রিভিউ পডকাস্টে সাবেক এ কোচ বলেন, ‘আমি সব সময়ই ভারতে সহ-অধিনায়ক না রাখার ব্যাপারে বিশ্বাসী। আমি সেরা একাদশ নিয়েই বারবার খেলতে চাইব। অধিনায়ক যদি কোনো একটা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে যায়, তবে সে মাঠেই আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারে। এখানে কোনো জটিলতা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো সহ অধিনায়ক যদি পারফর্ম না করে তবে অবশ্যই তাঁর জায়গায় অন্য কেউ আসবে। একটু নিষ্ঠুর ভাবেই যদি বলি, দলে থাকা কারো নামের পাশে পদবী আমাকে টানে না। আর হোম কন্ডিশনে সহ-অধিনায়ক থাকাটা কখনোই আমার পছন্দ নয়।’

এরপর শুভমান গিলের কথা টেনে রবি শাস্ত্রী বলেন, ‘গিল দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। সে যেকোনো খেলোয়াড়কে এখন চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। যেহেতু লোকেশ রাহুল এখন আর সহ-অধিনায়ক নেই। তাই তাঁর জায়গায় অনায়াসেই গিলকে খেলানো যেতে পারে।’

অফফর্মে থাকা একজন ক্রিকেটারকে কিছু সময় দলের বাইরেও রাখা প্রয়োজন। এতে করে সেই খেলোয়াড়ের মনোবল ফিরে আসতে পারে। ভারতের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীও ঠিক এমনটাই মনে করেন।

পডকাস্টে ভারতের ক্রিকেটে তরুণ ক্রিকেটারদের যাত্রা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতে কখনোই তরুণ ক্রিকেটার আসা যাওয়ার রাস্তা বন্ধ থাকবে না। এটা চলতেই থাকবে। এভাবেই ভবিষ্যৎ তৈরি হতে থাকবে। আর কেউ ফর্মে না থাকলে তাঁকে কিছু সময় দলের বাইরেও রাখা প্রয়োজন। এতে করে তাঁর মনোবল কমে না, বরং পারফর্ম করার একটা ক্ষুধা তৈরি হয়। আর ঐ ক্ষুধাই তাঁকে আবারো দলে ফেরাতে পারে।’

এরপর রবি শাস্ত্রী নিজের কোচিংয়ের সময়ের কথা টেনে বলেন, ‘আমার সময়ে পুজারা বাদ পড়েছিল। আবার ও ভালভাবে কামব্যাকও করেছিল। লোকেশ রাহুলও বাদ পড়েছিল। কিন্তু পরে দুর্দান্তভাবে কামব্যাক করেছিল। আপনি টি-টোয়েন্টি ফর্ম দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে চলতে পারবেন না।’

বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে এই মুহূর্তে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। রবি শাস্ত্রী অবশ্য সিরিজ ৪-০ তে শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘৪-০ হলে দারুণ হবে। অস্ট্রেলিয়াকে এমন সিরিজের পর একটা শক্ত বার্তা পাঠানো যাবে।’

উল্লেখ্য, রবি শাস্ত্রীর অধীনেই গত বারের বোর্ডার-গাভাস্কারও ট্রফি জিতেছিল ভারত। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হওয়া সে সিরিজ ভারত নিজেদের করে নিয়েছিল ২-১ ব্যবধানে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link