মানবজীবন যেখানে এই পৃথিবীতেই স্থায়ী নয়, সেখানে গদি দখলের ব্যাপারটি তো অস্থায়ী হবেই। আগে একবার কোন এক লেখায় বলেছিলাম যে ক্রিকেটাররা ক্রিকেট ছাড়ার পরেও কোন না কোনভাবে ক্রিকেট সম্পর্কিত কাজে লেগে থাকতে চান।
ক্রিকেট পরবর্তী জীবনে হয় কোচিং কিংবা ক্রিকেট বোর্ডের কোন পদ – সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ। ভারতীয় ক্রিকেটের দাদা বলে খ্যাত সাবেক ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলিও এই চক্রেই এগিয়েছেন। ‘সবকিছুরই শুরু আছে, শেষও হয়ে যায়’ – গানটির লাইনের মতোই সৌরভের জীবনের অধ্যায়গুলোও শুরু-শেষের চিরায়ত চক্রে আবদ্ধ।
ক্রিকেট থেকে অবসর পরবর্তী জীবনে সৌরভ গাঙ্গুলি কোচিং এর চেয়ে প্রশাসনিক কাজেই আগ্রহী ছিলেন বরাবর। প্রায় আট বছর ধরে তিনি প্রশাসনিক কাজে যুক্ত আছেন। প্রথমে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল এর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন, তারপর বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া’র (বিসিসিআই) সভাপতির মতো গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার তাঁকে সভাপতির গদিটা ছাড়তে হচ্ছে। প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করার পর সৌরভের পদ হারানো নিয়ে বেশ একটা শোরগোল পড়েছে গোটা ভারতে।
বিসিসিআই মসনদের নতুন কাণ্ডারি হওয়ার পথে আছেন রজার বিনি। সেই রজার বিনি, যিনি ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের দৌড়ে বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও তিনি ছিলেন।
অবশ্য সৌরভ গাঙ্গুলির পদ হারানো নিয়ে জল্পনা-কল্পনার যেন শেষ নেই। একদিকে বাতাসে ভাসছে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলে যোগদানে রাজি না হওয়ার কারণেই সৌরভকে বোর্ড সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ দিনশেষে ক্রিকেট বোর্ড ও তো রাজনীতির উর্ধ্বে নয়। যদিও গুঞ্জনে কান দেয়া ভদ্রলোকের কাজ নয়। কিন্তু তবুও সৌরভ যে আরেক মেয়াদে এই পদে থাকতে আগ্রহী ছিলেন তাও কিন্তু সত্য।
যাইহোক এবার সব গুঞ্জনকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি নিজেই মুখ খুললেন তাঁর পদ ছাড়ার বিষয়ে। সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, ‘আপনি চিরকাল খেলে যেতে পারবেন না। আবার আপনি চিরকালের জন্য প্রশাসক হতে পারবেন না। তবে মুদ্রার উভয় দিক চাক্ষুষ করা এবং উভয়তেই যুক্ত থাকাটা মজার ছিল। আমি ভবিষ্যতে আরও বড় জিনিসের জন্য যাব।’
সাবেক এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলাম। তিন বছর বিসিসিআই সভাপতির দায়িত্বও সামলেছি। সবকিছুর একটা মেয়াদ আছে এবং আপনাকে একদিন দায়িত্ব ছেড়ে যেতে হবে।’
পাশাপাশী গাঙ্গুলি বলেন প্রশাসক হওয়ার চেয়ে ক্রিকেটার হিসেবে চ্যালেঞ্জ বেশি। তাঁর মতে, ‘কিন্তু আমি মনে করি একজন ক্রিকেটার হিসেবে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি ছিল। আপনি যখন ব্যাকরুমের কাজ করেন, টেবিলে বসে খেলা চালান, তখন আপনার কাছে সংশোধনের সুযোগ ও সময় থাকে। অথচ আপনি যদি টেস্টের প্রথম সকালে গ্লেন ম্যাকগ্রার একটি ডেলিভারিতে আপনি আউট হয়ে যান, আপনার কাছে তা সংশোধন করার সুযোগ থাকবেনা।’
তাঁর সভাপতির দায়িত্বকালে দেশের ক্রিকেটের অবস্থা নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্বটা পুরোপুরি উপভোগ করেছি। আপনি যদি গত তিন বছরে দেখেন, দেখবেন অনেক ভাল জিনিস ঘটেছে। কোভিডের কঠিন সময়ে আইপিএলকে কীভাবে পরিচালনা করবো তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। তাও আমরা সম্প্রচারস্বত্বকে সর্বকালের সেরা পর্যায়ে নিয়েছি। আমদের অনূর্ধ্ব ১৯ দল বিশ্বকাপ জিতেছে। নারীদের আইপিএল শুরু হতে যাচ্ছে। নারীরা কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবারের মতো রৌপ্য নিয়ে ফিরেছিল।’
সবশেষ সৌরভ গাঙ্গুলি আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দলকে শুভকামনা জানিয়েছেন। এবারের আসরে টিম ইন্ডিয়া ভালো কিছু করবে বলেও আশা করছেন তিনি।