বিস্মৃত এক অলরাউন্ডার

১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর মোট ৩৯ টি টেস্ট খেলেন তিনি। তাঁর মধ্যে ২১ টেস্টেই ভারতের হয়ে ব্যাটিং ও বোলিং ইনিংস ওপেন করেন এই অলরাউন্ডার। মূলত লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হলেও প্রায়ই ওপেন করতেন তিনি। বল হাতেও ভারতের হয়ে ওপেন করতেন এই মিডিয়াম পেসার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনিই সর্বোচ্চ সংখ্যকবার এই কীর্তি করেন। এতেই বোঝা যায় ব্যাটিং, বোলিং দুই ডিপার্টমেন্টেই দলে তাঁর কতখানি ইমপ্যাক্ট ছিল।

অলরাউন্ডার হিসেবে কখনোই তার নাম কপিল দেব, ইমরান খান বা ইয়ান বোথামের সাথে উচ্চারিত হয় না।

অথচ একটা লম্বা সময় ধরে তিনি ছিলেন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। ব্যাটে ও বলে ভারতের হয়ে ইনিংস শুরু করতেন তিনি।

ব্যাট হাতে সামাল দিতেন ত্রাস বোলিং। তাঁর মিডিয়াম পেসেই শুরু হতো ভারতের বোলিং ইনিংস। তবে এসবের জন্য এখন তাঁকে খুব কম লোকেই মনে করে। এখন তিনি কখনো আলোচনায় আসেন ম্যাচ ফিক্সিং এর জন্য, কখনো বিতর্কিত কথাবার্তার জন্য, তাঁর রাজনীতির জন্য, আবার কখনো তাঁর কিছু বাজে পারফর্মেন্সের জন্য। অথচ প্রায় এক যুগ ভারতের ব্যাটিং ও বোলিং ডিপার্টমেন্টে সমানভাবে কৃতিত্ব রাখা নাম মনোজ প্রভাকর।

১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর মোট ৩৯ টি টেস্ট খেলেন তিনি। তাঁর মধ্যে ২১ টেস্টেই ভারতের হয়ে ব্যাটিং ও বোলিং ইনিংস ওপেন করেন এই অলরাউন্ডার। মূলত লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হলেও প্রায়ই ওপেন করতেন তিনি। বল হাতেও ভারতের হয়ে ওপেন করতেন এই মিডিয়াম পেসার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনিই সর্বোচ্চ সংখ্যকবার এই কীর্তি করেন। এতেই বোঝা যায় ব্যাটিং, বোলিং দুই বিভাগেই তাঁর কতখানি ইমপ্যাক্ট ছিল।

১৯৮৯-৯০ পাকিস্তান সফরে প্রথম তাঁর ফিয়ারলেস ব্যাটিং দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। পাকিস্তানের ইমরান খান,ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসদের বিপক্ষে লড়াই করেছেন চোখে চোখ রেখে। সেই সিরিজে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৫৬। এরপর থেকে তাঁকে ওপেন করার দায়িত্ব দেয়া হয়। পরের নিউজিল্যান্ড সফরে তিনি ওপেনার হিসেবে ব্যাট করে ৪০, ৯৫, ৬৩* রানের ইনিংস গুলো খেলেন।

বোলার হিসেবেও কার্যকর ছিলেন তিনি। বিশেষ করে দুই দিকেই বল স্যুইং করাতে পারতেন তিনি। তাছাড়া তাঁর স্লোয়ার বল গুলো ব্যাটসম্যানকে ভড়কে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সব মিলিয়ে ৩৯ টেস্টে ৩২.৬৫ গড়ে করেছিলেন ১৬০০ রান এবং বল হাতে ৩৭.৩০ গড়ে নিয়েছিলেন ৯৬ উইকেট।

সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর বোলিং ছিল আরো বেশি কার্যকরী। ১৩০ ওয়ানডে ম্যাচে ২৮.৮৭ গড়ে নিয়েছেন ১৫৭ উইকেট। সেখানে ব্যাট হাতেও ২৪.১২ গড়ে করেছেন ১৮৫৮ রান। এই ফরম্যাটে তাঁর দুইটি সেঞ্চুরি ও ১১ টি আফ সেঞ্চুরি আছে।

ভারতের সর্বকালের সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার কপিল দেবের সাথেও তাঁর লড়াইটা ছিল অসাধারণ। আরো বেশি ম্যাচ খেললে হয়তো তাঁর ক্যারিয়ারও কপিল দেবের মত সমৃদ্ধ থাকতো। তাঁরা যেই সময়টায় একসাথে খেলেছেন তখন দুইজনের পরিসংখ্যান দেখলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়।

ওয়ানডেতে ১৭.৪১ গড়ে কপিল দেব করেছিলেন ৯৭৫ রান। আর সেই সময়েই ২০.৮৬ গড়ে প্রভাকর করেছিলেন ১১০৬ রান। বল হাতেও এগিয়েছিলেন মনোজ প্রভাকর। কপিল দেব ২৮.৬০ গড়ে নিয়েছিলেন ৯২ উইকেট এবং মনোজ ২৪.৮৯ গড়ে নিয়েছিলেন ১২০ উইকেট।

তবে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ওভারে  ৪৭ রান দেয়ায় দেশের মাটিতেই দর্শকদের তোপে পড়েন তিনি। এরপরের ম্যাচে তাঁকে একাদশে রাখেনি ভারত। পরে সাথে সাথেই ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। তবুও সমালোচনা তাঁর পিছু ছাড়েনি।

ম্যাচ ফিক্সিং এর জন্য প্রায়ই তাঁকে নিয়ে টানা হেঁচড়া হয়। ২০১১ সালে দিল্লীর কোচ পদ থেকেও তাঁকে বাদ দেয়া হয় জনসম্মুখে ক্রিকেটার ও নির্বাচকদের সমালোচনা করার জন্য। তাছাড়া তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়েও বেশ সমালোচিত তিনি।

সব মিলিয়ে ভারতের কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের আসল পরিচয় আসলে কখনোই এই প্রজন্মের কাছে পৌঁছায়নি। এখনকার সময়ে তিনি হয়ে উঠেছেন শুধুই সমালোচনার পাত্র। তবে তিনি যে ভারতের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন সেই খোঁজ কেই বা রাখে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...