‘রস’ময় বোমা: চাইলেই চড় মারতে পারেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক!

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ব্যাটার রস টেলর ক্রিকেটের টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন চলতি বছরেই। আর টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটকে তো বিদায় জানিয়েছিলেন বেশ আগেই। ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টিটোয়েন্টি তিন ফর্ম্যাটেই শতাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড রয়েছে তাঁর।

ক্রিকেট ছাড়ার পর মনোনিবেশ করেছেন আত্মজীবনী লেখাতে। হয়তো অপেক্ষা করছিলেন সেই আত্মজীবনীতে তাঁর আকাশচুম্বী সফলতার নেপথ্যে ক্রিকেটের দুনিয়ার কুৎসিত অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরার জন্য। সদ্যই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনীটি, যা পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

কয়েকদিন আগেই টেলর তাঁর ‘রস টেলর: ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট’ নামক আত্মজীবনীতে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে বর্ণবিদ্বেষের ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। রস টেলর জাতিগত ‘সামোয়া’ আদিবাসী। অভিযোগ এনেছিলেন তাঁর এই পরিচয়ের জন্য তাঁকে ড্রেসিংরুমে বর্ণবাদের শিকার হতে হয়েছিল।

এবার তো রীতিমতো বিশাল এক বোমা ফাটালেন রস টেলর। এবার অভিযোগের তীর আইপিএলের দিকে। তিনি আত্মজীবনীতে লিখেছেন, আইপিএলের দল রাজস্থান রয়্যালসের এক মালিক তাঁকে তিন-চারবার চড় মেরেছিলেন!

ঘটনা ঘটেছিল ২০১১ সালের আইপিএলে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে তিন মৌসুম (২০০৮-২০১০) কাটানোর পর এক বছরের জন্য রাজস্থান র‍য়্যালস তাঁকে এক মিলিয়ন ডলারে দলে ভেড়ায়। সেই মৌসুমে মোহালিতে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচে ১৯৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে রাজস্থান ১৪৭ রান করেছিল।

মিডল অর্ডারে নেমে টেলর ৫ বল খেলে শুন্য রানে আউট হয়েছিলেন। আর তাতেই চটেছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের মালিক। রস লিখেছেন, ‘ম্যাচের পর পুরো দল, সাপোর্ট স্টাফ এবং টিম ম্যানেজমেন্ট হোটেলের টপ ফ্লোরের বারে ছিল। সেখানে লিজ হার্লিও ছিল শেন ওয়ার্নের সঙ্গে। রাজস্থানের এক মালিক আমাকে এসে বলে, রস ডাক মারার জন্য আমরা তোমাকে মিলিয়ন ডলার দেইনি। এবং তিন-চার বার আমার মুখে চড় মারেন।’

আপাতদৃষ্টিতে অভিযুক্ত মালিক কৌতুকের ছলে এ কাণ্ড ঘটালেও, রস টেলরের ধারণা, সেই চড় মোটেই মজা করে মারা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো সেই ইস্যুতে শোরগোল ফেলতে চাইনি। তবে পেশাদারি ক্রীড়া জগতে এমনটা ঘটবে, তা কখনো ভাবতেও পারিনি।’

রস উল্লেখ করেছেন, ‘বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়ার পর যে কেউ নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চাইবে। আর যাঁরা বিশাল অর্থ খরচ করছেন, তাঁরাও সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের কাছ থেকে পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করবেন পেশাদারি ক্রীড়াজগতে এমনটাই স্বাভাবিক। আরসিবিকে আমি সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দিয়েছি। যদি ব্যাটে রান নাও থাকে, তবুও ম্যানেজমেন্ট আমার অতীত পারফরম্যান্স দেখে আমাতে ভরসা রেখেছিল। তবে নতুন কোনও দলে যোগদান করলে, সেই সমর্থন পাওয়া যায় না। এমন পরিবেশে কখনোই স্বস্তিতে থাকা যায় না। কারণ যে কোনও ক্রিকেটারই ২-৩ ম্যাচে খারাপ পারফরমেন্স করলেই তাঁর দিকে শীতল চাহনি অনুভব করে থাকবে।’

যদিও রসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজস্থান র‍য়্যালস থেকে এখনো কোন মন্তব্য বা অভিযোগ নাকচ করার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, ঘটনাটি সত্য প্রমাণিত হলে আইসিসি ও আইপিএল কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই হবে যুক্তিযুক্ত। আইপিএল টাকার আসর হতেই পারে, এখানে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আসেই কেবল ব্যবসা করতে। তারপরও, একজন ক্রিকেটারের সম্মানটা ব্যবসার ঊর্ধ্বেই থাকা উচিৎ। কারণ অর্থ দিয়ে খেলোয়াড়ের খেলার দক্ষতা বা পারফরম্যান্স কেনা যায়, সম্মান না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link