২০১১ বিশ্বকাপের আগে দলের তিন সিনিয়র ক্রিকেটারকে দল থেকে ছাটাই করা নিয়ে কম সমালোচনা শুনতে হয়নি মহেন্দ্র সিং ধোনির। তিন সিনিয়রকে বাদ দিয়ে তরুণদের দলে সুযোফ করে দিয়েছিলেন ধোনি। সেই তরুণদের একজন ছিলেন বিরাট কোহলিও। অল্প কিছু ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় জায়গা পেয়েছিলেন ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ২০১১ বিশ্বকাপের দলেও।
এরপর ধোনির নেতৃত্বেই ক্যারিয়ারের বিরাট একটা সময় খেলেছেন বিরাট। ধোনিও অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর লম্বা একটা সময় কোহলির অধিনায়কত্বে খেলেই ইতি টেনেছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে।
মাঠে দুজনের রসায়নটাও ছিলো দারুণ। ধোনির প্রতি নিজের সম্মানের কথা অনেকবারই বলেছেন কোহলি৷ এবার জানালেন, খারাপ সময়ে পরিবার আর ধোনি ছাড়া তাঁর পাশে থাকেনি কেউ।
বিরাটের ক্যারিয়ারে ধোনির অবদান অনেক। ধোনির কাছ থেকেই অধিনায়কত্ব পান বিরাট। প্রথমে লাল বলের ক্রিকেটে ধোনি অবসর নিলে বিরাটের হাতে তুলে দেয়া হয় অধিনায়কত্ব। পরে ধোনি রঙিন পোষাকের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলে তিন ফরমেটেই ভারতের অধিনায়ক হন কোহলি।
নিজের আইপিএল দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর একটি ইউটিউব অনুষ্ঠানে বিরাট বলেন, ‘ধোনি আমাকে অধিনায়ক হিসেবে পছন্দ করত। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই আমি তাঁর সহঅধিনায়ক ছিলাম। মাঠে সবসময়ই আমি তাঁর সাথে কথা বলতাম। আমি সবসময়ই তাঁর ডান হাত ছিলাম। তখন আমি খুবই ভালো খেলছিলাম এবং আমার পারফরম্যান্সও এই ক্ষেত্রে সাহায্য করছিলো আমাকে। সে জানত আমি খেলা নিয়ে অনেক চিন্তা করি। আমিও মাঠে তাকে অনেকধরণের পরামর্শ দেবার চেষ্টা করতাম।’
কোহলি আরো বলেন, ‘তাঁর অধীনে খেলার সময় আমি ম্যাচের কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর কাছে যেতাম। তাঁর সাথে কথা বলতাম ২০১২ সাল থেকে আমাকে গড়ে তোলা হচ্ছিলো অধিনায়ক হিসেবে। তাঁর প্রতি আমার অগাধ সম্মান ছিলো এবং থাকবে। সে আমাকে অনেক বিশ্বাস করলো এবং এই ব্যাপারটাকে আমি অনেক সম্মান করতাম। আমি যেকোনো সময় যেকোনো বিষয় নিয়ে তাঁর কাছে যেতে পারতাম।’
২০১৯ সালে ক্যারিয়ারের খারাপ সময়ও দেখা শুরু করেন কোহলি। যার ব্যাটে ছুটত রান ফোয়ারা সেই কোহলি যেন রান করতেই ভুলে গেছিলেন তখন। একটা সময় কোহলিকে ভারতের একাদশ থেকে বাদ দেবার দাবিও জোরালো হয়। ক্যারিয়ারের ওমন চরম দু:সময়ে কোহলি পাশে পেয়েছিলেন তাঁর অধিনায়ক ধোনিকে।
নিজের দু:সময় নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কোহলি বলেন, ‘তখন পুরোটা সময় ধরে আনুশকা আমার পাশে ছিল। সে আমার শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস ছিল। কারণ, পুরো সময়টাতে সে আমার সঙ্গে ছিল। সে আমাকে খুব কাছ থেকে দেখেছে যে আমি কেমন অনুভব করি এবং কিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া আমার পরিবার এবং শৈশবের কোচকে বাদ দিলে যে মানুষটি সত্যিকার অর্থে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি হলেন এমএস ধোনি।’
খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়ানোয় ধোনির অবদানের কথা ভোলেননি বিরাট, ‘সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তাকে কেউ খুব সহজে খুঁজে পায় না। এমনিতে তাকে যেকোনো দিনে ফোন করলে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সে ফোন ধরবে না। এর কারণ হচ্ছে, সে ফোনের কাছে থাকে না। সে আমাকে বলেছিল, যখন আশা করা হয় যে আপনি শক্তিশালী হবেন এবং আপনাকে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়, মানুষ জিজ্ঞেস করতে ভুলে যায় যে আপনি কেমন আছেন?’
ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই রান বন্যা বইয়ে দিয়েছেন বিরাট। তবে সেই বিরাটকেই খারাপ সময়ের স্বাদও নিতে হয়েছে। জীবনের এমন খারাপ সময়ে কাছের মানুষদের একটু ভরসার হাতটাই হয়ে ওঠে অনেক কিছু। নিজের মেন্টর ধোনির কাছে সেই সাপোর্ট টুকু পেয়েছিলেন বিরাট। তাই তাকে আলাদাভাবে সবসময় মনেও রাখবেন।