ওজিলের কাছে খোলা চিঠি

এখন কি একটু ধাতস্থ হয়েছ? চোখের জল শুকিয়ে কি এখন হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে বিষণ্ণতার কালো বরফ? তোমার সাথে একই সময়ে ক্যারিয়ার শুরু করা মুলার, ক্রস, নয়াররা এখনও টপ লেভেলের ফুটবল খেলে যাচ্ছে।

প্রিয় মেসুত ওজিল,

এখন কি একটু ধাতস্থ হয়েছ? চোখের জল শুকিয়ে কি এখন হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে বিষণ্ণতার কালো বরফ? তোমার সাথে একই সময়ে ক্যারিয়ার শুরু করা মুলার, ক্রস, নয়াররা এখনও টপ লেভেলের ফুটবল খেলে যাচ্ছে।

আর তুমি তো অফ ফর্ম, ইনজুরি ক্লাব পরিবর্তন সবকিছু মিলিয়ে ভালো নাই। তুমি চেয়েছিলে আর্সেনালেই ক্যারিয়ার শেষ করতে। তাই তো দীর্ঘ দিন তোমাকে অবহেলার পরও তুমি ধৈর্য ধরে বসে ছিলে আর্সেনালের বেঞ্চে।

যখন তুমি নিশ্চিত হতে পারলে আর্সেনাল তোমাকে আর কখনো মাঠে নামাবে না। তখন তুমি নিরুপায় হয়ে ক্লাব চাড়ার সিদ্ধান্ত নিলে। অথচ আর্সেনাল ম্যানেজমেন্ট তোমার সাথে এমন আচরণ না করলেও পারতো। সম্মান নিয়ে বিদায় টা তোমার প্রাপ্য ছিল।

যাই হোক, বর্তমানে ইনজুরির সাথে লড়তেছো, বেলা টাও ফুরিয়ে এসেছে। পিছনে ফিরে তাকাতে হলে তুমি এখন স্মৃতিতে ফিরে যাবে ২০১০ বিশ্বকাপে। তোমার বয়স তখন ২১, বিশ্বকাপটা কাটলো তোমার স্বপ্নের মতো। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ঘানার সাথে জয়সূচক গোল করে দলকে নিয়ে গেছ সেকেন্ড রাউন্ডে।

পুরা টুর্নামেন্ট করেছ তিন অ্যাসিস্ট আর এক গোল। গোল অ্যাসিস্টের পাশাপাশি মাঠের খেলায় মন কেড়ে নিয়েছো লক্ষ ফুটবল ভক্তের। সে বিশ্বকাপ গোল্ডেন বল জয়ীর সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও ছিলো তোমার নাম। বিশ্বকাপ শেষে ইউরোপের নামি দামি ক্লাবগুলোর নজর ছিল তোমার উপর।

তুমি বেঁচে নিলে স্পানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিকে। ১৫ মিলিয়নের বিনিময়ে মাদ্রিদ তোমাকে দলে ভিড়ায়। রিয়ালেই তুমি তোমার ক্যারিয়ার সেরা সময় কাটিয়েছ। প্রথম মৌসুমেই রিয়ালের হয়ে মাঠে নেমেছো ৫৪ ম্যাচ করেছো ১০ গোলের সাথে ২৯ এসিস্ট। হয়েছিলা লা লিগার সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট দাতা, পরের মৌসুম ২০১১-১২ মৌসুমে লা লিগায় ১৯ অ্যাসিস্টের  সাথে করছো ৪ গোল।

রিয়াল ১০০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ জিতার পিছনে রেখেছো বড় ভূমিকা। তখন কী তুমি জানতে এটাই হয়ে থাকবে তোমার ক্যারিয়ার একমাত্র লিগ শিরোপা? পরের মৌসুমে ও তুমি জ্বলেছিলে আপন মহিমায়। মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তাদের সেরা সময়ে তাদের পিছনে পেলে টানা তিন মৌসুমে তুমি হয়েছিলে লা লিগার টপ এসিস্ট দাতা। ১২/১৩ মৌসম শেষে মাদ্রিদ তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এবার তুমি গিয়েছিলে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালে। রেকর্ড ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। তুমি ছিলে  জার্মানদের মধ্যে তখনকার  সবচেয়ে দামী ফুটবলার। নতুন ঠিকানা আর্সেনালে গেলেও তুমি ছিলে পুরানো রুপে। আর্সেনালের হয়ে প্রথম মৌসুমে ১৪ অ্যাসিস্টের সাথে করেছো ৭ গোল। জিতেছো এফএ কাপ।

পরের মৌসুমে ইনজুরিতে পড়ে কিছুটা অফ ফর্মে ছিলা। কিন্তু সেটা পুষিয়ে দিয়েছো ১৫/১৬ মৌসুমে।  ১৯ এসিস্ট করে হয়েছিলা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ অ্যসিস্টকারী। সে মৌসুমে লিগটাও জিতা হতো যদি আর্সেনাল স্কোয়াড ইনজুরিতে জর্জরিত না হতো। লিস্টারের রুপকথার সে মৌসুমে তোমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল পয়েন্টের দ্বিতীয় থেকে। ২০১৮ তে আর্সেন ওয়েঙ্গার অবসর নেন।

তোমারও ভালো সময়ের সমাপ্তি ঘটেছে। বিশ্বকাপে জার্মানি ব্যর্থ হয়েছে দলীয় বাজে ফারপমেন্সর কারণে। হলুদ মিডিয়া প্রচার করছে তোমার ব্যর্থতায় জার্মানি গ্রুপ পর্বে থেকে বিদায় নিয়েছে।অথচ কুরিয়া ম্যাচে তুমি ৭ টা চ্যান্স ক্রিয়েট করেছো। স্ট্রাইকাররা শিশুসুলভ মিস করেছে সেটা ও মনে হয় তোমার দোষ ছিলো। জাতীয় দলের হয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপটা জিতেছো দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে। তবে ক্লাব ক্যারিয়ারতো আক্ষেপ অনেক।জিতা হয়নি কোনো ইউরোপিয়ান শিরোপা।

পুরা ক্যারিয়ারে একটা মাত্র লিগ শিরোপা। পুরা ক্যারিয়ারে শিরোপা সংখ্যাটা মাত্র দশ। এগুলো নিয়ে চাইলে তুমি আক্ষেপ করতেই পারো। রিয়ালে তোমার ক্যারিয়ার শেষ হলে আজ তোমার এসিস্ট সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামতো? সেটার জন্য কি নিরবে আফসোস করো? এগুলো নিয়ে তোমার আক্ষেপ, অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু ক্যারিয়ারে জিতেছো বিশ্বকাপ। ২৫৫ অ্যাসিস্ট, সাত বার অ্যাসিস্টের হ্যাটট্রিক। পাঁচবার জার্মানি ন্যাশনাল টিমের বর্ষসেরা প্লেয়ারের পুরস্কার। এগুলো তোমার ভক্তদের চোখের প্রশান্তি জাগায়।

আমি বেঁচে ছিলাম তোমার আমলে।

ইতি

তোমার এক ভক্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link