এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হবে পাকিস্তান। এই বিশ্বাস হয়ত পাকিস্তানের কট্টর সমর্থকরাও করছেন না নিশ্চয়ই। আপাতদৃষ্টিতে পাকিস্তানের দৌড় থেমে যাতে সুপার ফোরে। কিন্তু কেন? বেশ কিছু দূর্বলতা রয়েছে পাকিস্তানের এশিয়া কাপের স্কোয়াডে। তবে জমে থাকা সুপ্ত শক্তিগুলোর বিস্ফোরণে প্রায় এক যুগের শিরোপা খরা কাটলেও কাটতে পারে।
প্রথমেই বরং দূর্বলতাগুলোতে আলোকপাত করা যেতে পারে। প্রথমত পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি সেই অর্থে ক্লিক করছে না। সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজে পাঁচ ইনিংসে সাইম আইয়ুব ও শাহিবজাদা ফারহানের ওপেনিং পার্টনারশীপ থেকে এসেছে সর্বসাকুল্যে ৭৩ রান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল ২৮ রানের জুটি।
এমনকি এই দুই ব্যাটারের কেউই সেই অর্থে তেমন প্রভাব বিস্তারও করতে পারছেন না। আইয়ুবের ব্যাট থেকে পাঁচ ম্যাচে এসেছে ১১১ রান। ফারহানের সংগ্রহ ৬৩ রান। মোটেও সন্তুষ্ট হওয়ার উপায় নেই। ওপেনিংয়ে বড় পার্টনারশীপ হচ্ছে না বলে একটু বেগ পোহাতে হচ্ছে বটে। তাছাড়া সমসাময়িক সময়ে পাকিস্তান তিনটি ভিন্ন ওপেনিং জুটি বাজিয়ে দেখেছে। অর্থাৎ সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে চলেছে।
তবে সেই কাঙ্ক্ষিত সমাধান এখনও মেলেনি পাকিস্তানের। অন্যদিকে পাকিস্তানের মিডল অর্ডারও সেই অর্থে পরীক্ষিত নয়। ভরসা করার মত নাম সেখানেও থাকলেও তারাও ওই ওপেনিং পজিশনের মত নিষ্ফলা। হাসান নাওয়াজ, মোহাম্মদ নাওয়াজের মত ফিনিশাররা মানসম্মত বোলিং আক্রমণের সামনে খাবি খেয়ে পড়লে, ফিনিশিং টাচ দেওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে পাকিস্তানের জন্যে।
ব্যাটিংয়ের এই সমস্যার মাঝে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম, অধিনায়ক সালমান আলী আঘা। তারই মূলত হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানের মিডল অর্ডারের স্তম্ভ। কিন্তু অফরর্মের দৈন্যদশা তাকে মানসিক পীড়ায় রেখেছে তা বলে দেওয়া যায় অকপটে। দলকে সামলানো, নানা সমীকরণ মেলানো, পরিকল্পনার ছক বাস্তবায়ন করবার চাপে তিনি ঠিকঠাক ডেলিভার করতে পারছেন না ব্যাট হাতে।
তার উপর এবারের এশিয়া কাপ সালমানের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ। তার দিকনির্দেশনার ভুলচুক পাকিস্তানকে বিশাল সমস্যার মধ্যে ফেলে দিতে পারে যেকোন সময়ে। এত সব দূর্বলতার মাঝে পাকিস্তানকে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে মূলত দলে থাকা ম্যাচ উইনাররা। যারা কি-না যেকোন সময়ে চোখের পলকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। এই যেমন সাইম আইয়ুব, ফখর জামানদের ঐ সামর্থ্য আছে।
অন্যদিকে মোহাম্মদ নাওয়াজ কম্প্যাক্ট একজন অলরাউন্ডার। ব্যাট কিংবা বল হাতে তিনি একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তার কারণে সুফিয়ান মুকিম ও আবরার আহমেদের মধ্যে চলছে এক স্বাস্থ্যকর লড়াই। একাদশে টিকে থাকার এই লড়াইটাও পাকিস্তানের জন্যে তপ্ত গরমে খানিক শীতল বাতাস।
এছাড়া পাকিস্তানের পেস আক্রমণকে এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর তাদের সেই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমার কারণেই হয়ত শিরোপার দাবিদার জানায় তারা প্রতিবার। এবার তাই পাকিস্তান নিশ্চয়ই চমকে দিতে চাইবে। দূর্বলতার শক্ত দেয়ালে আঘাত হেনে ছিনিয়ে নিতে চাইবে শিরোপা। কিন্তু সে জন্যে পোড়াতে হবে বহু কাঠখর, করতে হবে সুযোগের সদ্ব্যবহার।