সাকিবের আউটের বিরূদ্ধে সোচ্চার পাকিস্তানি গ্রেটরা

সেমিফাইনালে ওঠার ম্যাচ। এমন বার্তা মাথায় রেখে পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের শুরুতে বেশ ভালই করছিল বাংলাদেশি ব্যাটাররা। অ্যাডিলেডের মাটিতে পার স্কোর ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল প্রবল।

কিন্তু, আম্পায়ারের একটি ভুল সিদ্ধান্ত পুরো ম্যাচের গতিপথ বদলে দিল। সাকিবের আউটের পর ছন্দ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তাসের ঘরের মতো খসে পড়তে থাকে মিডল অর্ডার লাইনআপ। বাংলাদেশের তাই শুরুর ছন্দ মিলিয়ে যায় শেষের ব্যর্থতায়। 

বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা নিয়ে শত অভিযোগ তোলা যায়। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার সাকিবের ঐ আউটেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে বেশ বাজেভাবে প্রভাব পড়ে।

এমনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সাকিবের রেকর্ড সবসময়ই ভাল। এ ম্যাচের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা ১০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে সাকিবের চারটি ফিফটি ছিল। অথচ, সেই সাকিবকেই আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে শূণ্য রানে মাঠ ছাড়তে হয়। সাকিব যে আউট ছিলেন না, তা স্বীকার করেছেন খোদ পাকিস্তান কিংবদন্তিরাই। 

ম্যাচ শেষে পরে পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের চার কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, মিসবাহ উল হক ও শোয়েব মালিক। সে অনুষ্ঠানে তারা প্রত্যেকেই স্বীকার করেন যে, সাকিবের আউটটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এটা আম্পায়ারের অনেক বড় একটি ভুল সিদ্ধান্ত। 

সাকিবকে দেওয়া সেই আউটের টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, সাকিবের ব্যাটে বল স্পর্শ করেছিল। কিন্তু অন ফিল্ড আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর সাকিব রিভিউ নিলে থার্ড আম্পায়ার ব্যাটের সাথে আলট্রা এজ না মনে করে মাটির সাথে বলের সংস্পর্শ গণ্য করে আউট দিয়ে দেন।

পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম নিজেও সেই আউটের বিপক্ষে গিয়ে বলেন, ‘সাকিব অনেক দুর্ভাগা ছিল। অনফিল্ড আম্পায়ার আউট দিতেই পারেন। কিন্তু থার্ড আম্পায়ারের কাছে এতো রিসোর্স থাকা স্বত্ত্বেও এটিকে কিভাবে আউট দেন। আর বেনিফিট অব ডাউট থাকলেও তো সেটি ব্যাটারদের পক্ষে যাওয়ার কথা। এটা অবশ্যই অভিযোগ তোলার মতো ব্যাপার। তবে বিশ্বকাপে এবারে এমন আম্পায়ারিংই হচ্ছে।’

ওয়াসিম আকরামের সাথে সুর মিলিয়ে আরেক কিংবদন্তী ক্রিকেটার মিসবাহ উল হক বলেন, ‘অন ফিল্ড আম্পায়ারের ভুল হতেই পারে। কিন্তু থার্ড আম্পায়ার কেন এই ভুল করবে? এটা তো বাইরে থেকেই পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিল ব্যাট মাটির ওপরে।’

সাবেক পেসার ওয়াকার ইউনুস এই আলাপচারিতায় যোগ দিয়ে বলেন, ‘সাকিব উইকেট থেকে তিন মিটার আগে ছিল। তাও আম্পায়ার আউট দিয়েছে। এটা কখনোই আউট ছিল না।’ 

আইসিসি কেন ডিআরএসের সাথে হটস্পট ব্যবহার করেনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওয়াসিম আকরাম। তিনি বলেন, ‘আইসিসি বলে, হটস্পট অনেক ব্যয়বহুল ব্যাপার। কিন্তু আমার কাছে এমন দায় এড়ানো পছন্দ না। আইসিসির যেমন অর্থ আছে তারা চাইলেই হটস্পট ব্যবহার করতে পারে। আপনি ডিআরএসের ৯৭ ভাগ ব্যবহার করলে তো হবে না, আপনার এর শতভাগই ব্যবহার করতে হবে।’

আম্পায়ারের উপর ক্রিকেটারদের এমন কোনো অভিযোগ তুলে লাভ হবে কিনা সে প্রশ্নের উত্তরে ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে পাকিস্তানের হয়ে খেলেছি। ম্যাচের পরে আম্পায়ারকে নিয়ে একটি রিপোর্ট দেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় যা বলে, এতে কোনো লাভই হয় না। এমনকি আম্পায়ারেরও তেমন কিছু হয় না। তাই সাকিব এমন কিছুর অভিযোগ করলেন লাভ হবে না বলেই মনে হয়।’

সাকিবকে দেওয়া ভুল আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরব ছিলেন ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়াও। তিনি এক টুইটে সরাসরি জানিয়েছেন, এটি আউট ছিল না। আর ম্যাচশেষে অজি গ্রেট অ্যাডাম গিলক্রিস্টও এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সাকিবের আউট নিয়ে সন্দেহ আছে। মনে হচ্ছিল বল ব্যাটে স্পর্শ করেছে। এটা আউট হয় না। কিন্তু আম্পায়ার এটা আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যেটা সাকিবের জন্য অবশ্যই হতাশার।’

সাকিবের এমন হতাশার দিনে দল হিসেবে বাংলাদেশও ছিল হতাশায় জর্জরিত। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই যেখানে সেমি নিশ্চিত হতো সেখানে সে ম্যাচ হেরে গ্রুপের ৬ দলের মধ্য ৫ম হয়েছে বাংলাদেশ। ফলাফলের বিচারে সাকিব এ বারের বিশ্বকাপকে সেরা বলতেই পারেন। কিন্তু এ বিশ্বকাপেও সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সকে মন্দের ভালোর চেয়ে বেশি বলা যায় না।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link