পাকিস্তানের অবিস্মরণীয় ছক্কার নায়ক

ক্রিকেট দুনিয়াতে বেশ শক্তিশালী এক নাম পাকিস্তান। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ। সেই দেশের প্রেক্ষাপটেও বেশ কিছু স্মরণীয় ছক্কা হাঁকানোর ঘটনা রয়েছে। সেই সব গল্পই থাকছে আজকের আয়োজনে।

ক্রিকেট দুনিয়াটা বেশ ছোট হয়ে গেছে। পুরো পাঁচ দিনের ক্রিকেট থেকে এখন ক্রমশ ক্ষুদ্রতর হচ্ছে ক্রিকেট। এর পেছনে অবশ্য মূল উপজীব্য একটাই। বিনোদনের মাত্রা বাড়ানো। চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিতেই ক্রিকেটের ক্ষুদ্র হওয়ার পথে গমন। তবে এই যে চার-ছক্কার ভিড়ে বেশ কিছু ছক্কা চিরকাল মনে গেঁথে রয়।

ক্রিকেট দুনিয়াতে বেশ শক্তিশালী এক নাম পাকিস্তান। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসও সমৃদ্ধ বেশ। সেই দেশের প্রেক্ষাপটেও বেশ কিছু স্মরণীয় ছক্কা হাঁকানোর ঘটনা রয়েছে। সেই সব গল্পই থাকছে আজকের আয়োজনে।

  • জাভেদ মিয়াঁদাদ (১৯৮৬)

১৯৮৬ সালে অস্ট্রাল-এশিয়া টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারত-পাকিস্তান। ২৪৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করা পাকিস্তান ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে পরে। ৬১ রানের মাথায় তিন উইকেট হারায় তাঁরা। তবে সে বিপর্যয় সামাল দেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।

তিনি ১১৪ বলে ১১৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে পাকিস্তানের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। তবুও শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল চার রান। বল করছিলেন চেতন শর্মা। শেষ বলে ইয়োর্কার করতে গিয়ে হিসেব গড়মিল হয় চেতনের। ফলাফল লেগ সাইডে বিশাল ছক্কা। বুনো উল্লাসে মাতোয়ারা পাকিস্তান।

  • আসিফ মুজতাবা (১৯৯২)

ওয়ার্ল্ড সিরিজের এক ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ সালের সেই ম্যাচেও পাকিস্তান ব্যাটিং করেছিল দ্বিতীয় ইনিংসে। টার্গেট ছিল, ২২৮। তবে আরও একটিবার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় লক্ষ্যটা বেশ দূর মনে হতে থাকে। ১৯৭ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ম্যাচ ততক্ষণে হাত ফসকে যাওয়ার দ্বার প্রান্তে।

তেমন সময়ে আসিফ মুজতাবা দৃশ্যপটে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক বল তুলে দেন স্টিভ ওয়াহের হাতে। তাঁর করা শেষ বলটি ছিল ফুলটস। বাঁ-হাতি আসিফ মুজতাবা মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে সে বল মাঠ ছাড়া করেন। আর তাতে ম্যাচটির ফলাফলে বিজয়ী দুই দল।

  • শহীদ আফ্রিদি (২০১৪)

মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য শহীদ আফ্রিদির সুনাম ছিল সর্বত্র। ‘বুম বুম আফ্রিদি’ নামে তাঁকে অভিহিত করা হত। ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে তিনি তেমনটিই করে দেখিয়েছিলেন আরও একটিবার। ৫০ ওভারের সে ম্যাচে ২৪৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করছিল পাকিস্তান। আর শেষ ওভারে বল করতে এসেছিলেন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিপক্ষে ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার একটা আলাদা তাড়না থাকে। সে তাড়না থেকেই পঞ্চাশতম ওভারটা অশ্বিন শুরু করেন উইকেট নিয়ে। তবে তখনও আফ্রিদির চমক বাকি। টানা দুই বলে দুইটি ছয় মারেন আফ্রিদি। ১০ রান প্রয়োজন ছিল জয়ের জন্য। সেখানে দুই বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।

  • আসিফ আলী (২০২১)

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগ অবধি অচেনা এক চরিত্র ছিলেন আসিফ আলী। তবে সেই বিশ্বকাপেই নিজের আগমনী বার্তা দিয়ে রাখেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজের পেশি শক্তির ঝলক দেখান আসিফ। দুলতে থাকা ম্যাচটার ভাগ্য সম্পূর্ণ নিজেদের দখলে নিয়ে আসেন তিনি। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ রান।

১৮ তম ওভারটা নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকেন আসিফ। তবে এরপর আফগান বোলার করিম জানাতকে তুলোধুনো করেন। ১৯ তম ওভারে চারখানা সুবিশাল ছক্কা হাঁকান আসিফ। জানাত কেবলই বিস্ময় ভরা নয়নে তাকিয়ে থাকেন। আর অন্যদিকে, আনন্দ ছড়িয়ে পরে পাকিস্তন শিবিরে।

  • নাসিম শাহ (২০২২)

তরুণ বোলার হিসেবে ইতোমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নাসিম শাহ। তবে ব্যাট হাতেও তিনি কার্যকর একজন খেলোয়াড় সেটার প্রমাণ রেখেছিলেন ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনি নিজের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটান। ১৯ তম ওভারে আসিফ আলীর উইকেট হারায় পাকিস্তান। তখনও শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১২ রান।

তবে শান্ত বদনে কেবলই জয়ের চিন্তা করে যাচ্ছিলেন নাসিম শাহ। ফজল হক ফারুকির ইয়োর্কার করবার পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে তিনি টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন। দুই উইকেট হাতে ছিল পাকিস্তানের। সেখান থেকে পা হড়কে গেলেই পরাজয়ের বিষাদ গ্রহণ করতে হত পাকিস্তানকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...