২০২৩ এশিয়া কাপের আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা পাকিস্তানে, মানে আয়োজক পাকিস্তান। কিন্তু, ভারত এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যেতে অস্বাকৃতি জানায় এবং এশিয়া কাপ অন্য কোথাও সরিয়ে নেবার দাবি জানায়।
সেসব নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সভাপতি রমিজ রাজা। তিনি জানিয়েছেন পাকিস্থান থেকে এশিয়া কাপ অন্যত্র সরিয়ে নিলে খেলবে না পাকিস্তানও। মানে, আয়োজন তো দূরের কথা এশিয়া কাপই বয়কট করতে যাচ্ছে পিসিবি।
রাওয়ালপিন্ডিতে ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট চলাকালীন এসব তথ্য জানান রমিজ রাজা। তিনি বলেন, ‘এমন না যে আমাদের আয়োজন করার সামর্থ্য নেই এবং আমরা অন্যায় আবদার করছি। আমরা যোগ্যতা দিয়ে আয়োজনের অধিকার অর্জন করেছি। যদি ভারত আসতে না চায়, তাঁরা আসবে না। তবে যদি এশিয়া কাপ অন্যকোথাও সরিয়ে নেয়া হয়, তাহলে পাকিস্তানও অংশ নেবে না।’
এর আগে অক্টোবরে বিসিসিআই সেক্রেটারি এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জয় শাহ জানিয়েছিলেন ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে কারণ ভারত পাকিস্তানে যাবে না। এর কয়েকদিন বাদে ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানান ভারতের পাকিস্তান যাওয়া নির্ভর করছে সরকারের কাছে থেকে অনুমতি পাওয়ার উপর।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে এশিয়া কাপ খেলতেই পাকিস্তান গিয়েছিল ভারত। অন্যদিকে ২০১৬ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিতে ভারত আসে পাকিস্তান। দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজ খেলে না এই দুই দল। কেবল বৈশ্বিক এবং মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইতেই মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান।
রমিজ রাজা বলেন, ‘আমরা দেখিয়েছি আমরা বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারি। দুই দেশের রাজনৈতিক সমস্যার কারণে হয়তো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলি না, কিন্তু এশিয়া কাপ তো মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট। এটা অনেকটা এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বকাপের মতো।’
তিনি আরো বলেন, ‘কেন আমাদেরকে প্রথমে আয়োজনের অনুমতি দেয়া হলো এবং তারপর জানানো হল ভারত এশিয়া কাপ খেলতে আসবে না। আমি মেনে নিয়েছিলাম ভারত সরকার অনুমতি না দিলে তাঁদের আসা সম্ভব হবে না। কিন্তু সেই কারণে এখান থেকে এশিয়া কাপ সরিয়ে নিলে সেটা ঠিক হবে না।’
তিনি মনে করেন ভারত ও পাকিস্তানের মত দলগুলোর অনুপস্থিতি আসরের রং ম্লান করে দিবে। তিনি বলেন, ‘ভারত এবং পাকিস্তান না খেললে কোনো আকর্ষণই থাকবে না। আমি এই কথাটা আগেও বলেছি। আমি ভারতের খেলা বরাবরই পছন্দ করি। আইপিএলের আসরগুলোতে আমি ধারাভাষ্যও দিয়েছি অনেকবার। আমি জানি দর্শকরা চায় ভারত এবং পাকিস্তান ম্যাচ খেলুক।’
বিশ্বকাপের উদাহরণও টেনে আনেন রমিজ। বললেন, ‘আপনি দেখেছেন বিশ্বকাপে কি হয়েছে, প্রায় নব্বই হাজার দর্শক সেদিন স্টেডিয়ামে এসেছিল। আমি আইসিসির ভূমিকা নিয়ে খানিকটা হতাশ। আপনি ফিফাকে দেখুন, ইরানের নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের বিপক্ষে খেলছে কেন এমন প্রশ্ন উঠায় ফিফা সভাপতি বক্তব্যটা দেখুন। তিনি ফুটবলটা বেছে নিলেন এবং জানালেন এটা অনেক সমস্যারই সমাধান করে দেবে।’
সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের বৈরিতা আরো চরম আকার ধারণ করতে পারে। আগামী অক্টোবরে ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারতে অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে এশিয়া কাপ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হলে বিশ্বকাপ থেকেও নাম সরিয়ে নেবে তাঁরা।
রমিজ বলেন, ‘কি হবে পাকিস্তান সরকারও নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতে যাবার অনুমতি না দেয়? বিতর্কটা শুরু হয়েছিল বিসিসিআইয়ের কারণেই। পাকিস্তান সেটার জবাব দিয়েছে। তাঁদের বোঝা উচিত দর্শকরা ভারত বনাম পাকিস্তানের টেস্ট ম্যাচ চায়।’
এর আগে পাকিস্তানে খেলতে ভারতীয় দল না আসলে, আসছে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন রমিজ রাজা। এবার তিনি খোদ এশিয়া কাপ বর্জনেরই হুমকি দিলেন। দেখা যাক এই হুমকি আর পাল্টা হুমকির পানি কতদূর গড়ায়!