ইনজুরির কারণে প্রায় বছরদুয়েক একপ্রকার দৃশ্যপটের বাইরেই ছিলেন। মাঠের চাইতে বরং মাঠের বাইরের ঘটনাতেই আলোচিত হচ্ছিলেন বেশি। আরো এক প্রতিভা অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে ভেবে সবাই যখন শংকিত, ঠিক তখনি তাঁর ফিরে আসা। হার্দিক পান্ডিয়া ফিরেছেন প্রবলভাবেই, গত মৌসুমের ফর্মটা টেনে এনেছেন এবারের আইপিএলেও।
ভারতীয় ক্রিকেটে ধূমকেতু হয়েই হার্দিকের আবির্ভাব। সময়োপযোগী ধুমধারাক্কা ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কার্যকরী মিডিয়াম পেস বোলিং, এ যেন তিন দশক পর ফিরে এলেন খোদ কপিল দেব। হার্দিককে নিয়ে তাই উচ্ছ্বসিত হওয়ার সব কারণই ছিল ভারতীয় সমর্থকদের কাছে। হার্দিকও প্রত্যাশা পূরণে ভালোই এগোচ্ছিলেন, কিন্তু বাঁধ সাধলো ইনজুরি। ছিটকে গেলেন বড় সময়ের জন্য, মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় নায়ক থেকে খলনায়ক বনে যেতে সময় লাগলো না।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়েই হার্দিক পান্ডিয়ার পাদপ্রদীপের আলোয় আসা। মুম্বাই তাঁকে আগলে রেখেছে, তারকা হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু মুম্বাইয়ের তারকাঠাসা দলে হার্দিক কখনোই আলাদা করে নিজেকে চেনাতে পারেননি। আইপিএলের নতুন দল গুজরাট যখন তাই হার্দিককে দলে ভেড়ানোর প্রস্তাব দিল, তিনি আর ফেরাতে পারেননি।
গত মৌসুমে গুজরাট টাইটান্স যখন তাঁদের অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক পান্ডিয়ার নাম ঘোষণা করলো, তখন সবাই খানিকটা অবাক। হার্দিকের মাঝে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা আছে সেটা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না কেউই, তবে গুজরাট ভরসা রেখেছিল।
সেই ভরসার কি দারুণ প্রতিদান দিয়েছেন এই তারকা! নিজে সামনে থেকে পারফর্ম করলেন, দলের সবার থেকে সেরাটা বের করে আনার অনন্য নজির গড়লেন। তরুণ প্রতিভাদের আগলে রেখেছেন, নিয়মিত সুযোগ দিয়েছেন মাঠে পারফর্ম করার।
ব্যাটে-বলে যেন ভিন্ন এক হার্দিকের দেখা মিলেছিল গতবারের আইপিএলে। নিজেদের অভিষেক মৌসুমেই গুজরাটকে আইপিএল শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি ফাইনালে জিতলেন ম্যাচসেরার খেতাব। তার দুর্দান্ত অধিনায়কত্বে গোটা টুর্নামেন্টে মাত্র চারটি ম্যাচ হেরেছিল গুজরাট। ব্যাট হাতে ৪৮৭ রানের পাশাপাশি বল হাতে সাড়ে সাত ইকোনমিতে হার্দিক শিকার করেন আট উইকেট।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়, জাতীয় দলেও অধিনায়কত্ব পান হার্দিক। আয়ারল্যান্ড কিংবা শ্রীলংকার বিপক্ষে যখনই রোহিত মাঠের বাইরে থেকেছেন, দলের জয় নিশ্চিত করেছেন অধিনায়ক হার্দিকই। এক বছরেই যেন বদলে গেছে পুরো দৃশ্যপট, দলের বাইরে থাকা হার্দিককেই এখন ভারতের ভবিষ্যত অধিনায়ক ভাবছেন সকলে।
গত আইপিএলের ফর্মটা টেনে এনেছেন এবারের আইপিএলেও। প্রথম ছয় ম্যাচেই চার জয় তুলে নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে তাঁর দল। ব্যাটে হাতেও কাটাচ্ছেন দারুণ সময়, সর্বশেষ ম্যাচেই লখনৌর বিপক্ষে খেলেছেন ৬৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
ধীরগতির পিচে যেখানে বাকি ব্যাটসম্যানরা যেখানে রানই পাচ্ছিলেন না, সেখানে তিন নম্বরে নেমে দায়িত্বশীল এক ইনিংসে লড়াকু এক সংগ্রহ এনে দেন হার্দিক। এরপর দুরন্ত অধিনায়কত্বে বোলারদের ব্যবহার করে মাত্র ১৩৫ রানের পুঁজি নিয়েও দলকে এনে দেন সাত রানের জয়।
বছর শেষের বিশ্বকাপ শেষেই হয়তো বিদায় নেবেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। গুঞ্জন আছে ২০২৪ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তরুণ এক দল নিয়েই খেলতে যাবে ভারত। ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে হয়তো ভারতের নেতৃত্বটা উঠবে হার্দিকের কাঁধেই।