বোলিংয়ে ভরসা যখন পার্টটাইমাররা

টেস্ট ক্রিকেট এমন একটি সংস্করণ যেখানে খণ্ডকালীন বোলাররা কেবল শৃঙ্ক্ষলা ও অধ্যবসায়ের অভাবে ম্যাচে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেন না। তবে, সাদা বলের ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার প্রবণতার কারণে প্রায়শই তাঁরা বড় ভূমিকা পালন করে থাকেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন কয়েকজন খণ্ডকালীন বোলার রয়েছেন যাদের সংগৃহীত উইকেট সংখ্যা  কোন স্বীকৃত বোলারের চেয়েও বেশি। এমনই কয়েকজন পার্টটাইম বোলারদের নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।

  • শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)

ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যান তখন তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করে ২০১টি উইকেট। খেলোয়াড়ি জীবনের শেষদিকে খুব কমই বল করেছেন তিনি। কিন্তু শুরুর দিকে ভারতের হয়ে তিনি নিয়মিত হাত ঘুরাতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলকে সাফল্য এনে দিতেন।

শচীন ছিলেন একজন ব্যতিক্রমধর্মী বোলার। তিনি অফস্পিন ও লেগস্পিন দুটোই ঢালতে পারতেন। শুধু তাই নয়। বাইশ গজের আচরণ বুঝে দলের প্রয়োজনে সিম আপ ডেলিভারিও করতে পারতেন তিনি।

  • শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহ ২১৮ উইকেট। একজন পুরদস্তুর অলরাউন্ডার হিসেবে ক্রিকেটে প্রবেশ করলেও সময়ের সাথে সাথে বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগী হন শোয়েব। এভাবে চলতে চলতে একসময় তিনি পাকিস্তানের খণ্ডকালীন বোলার বনে যান। যদিও খণ্ডকালীন বোলার হিসেবেই দলের পক্ষে কার্যকরী অবদান রাখছেন তিনি।

  • সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত)

২০০৮ সালে জুতোজোড়া তুলে রাখার আগে ১৩২টি উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। তিনি হচ্ছেন ভারতের সেইসব বিরল খণ্ডকালীন বোলারদের একজন যিনি স্পিন নয় বরং মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। একটা সময় ছিল যখন স্পিন-সহায়ক উইকেট বানিয়ে তিনজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার ও একজন পুরদস্তুর পেসার নিয়ে মাঠে নামত ভারত। তখন দলের দ্বিতীয় পেসার হিসেবে নতুন বল হাতে তুলে নিতেন সৌরভ গাঙ্গুলি।

  • মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)

বিগত দেড় দশক ধরে পাকিস্তানের টপ অর্ডারের ভরসা হয়ে আছেন মোহাম্মদ হাফিজ। তবে ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি ধারাবাহিক তিনি। ক্যারিয়ারে তিনি এমন  কিছু সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন যখন ব্যাট হাতে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয় তাকে।

তখন টপ অর্ডারে অবদান রাখতে ব্যর্থ হন তিনি। যদিও বল হাতে খুব কমই বেগ পেতে হয়েছে হাফিজকে। খণ্ডকালীন বোলার হওয়া সত্ত্বেও তাকে খেলতে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বড়সড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অদ্যাবধি ২৪৬টি উইকেট রয়েছে তাঁর দখলে।

  • অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস (অস্ট্রেলিয়া)

শচীনের মত অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসও উইকেটের আচরণের ওপর ভিত্তি করে স্পিন, সিম আপ উভয় ডেলিভারিই করতে পারতেন। যদিও সাইমন্ডসের বলে খুব বেশি গতি ছিল না তবুও তিনি ‘হিট দ্য ডেক হার্ড’ টাইপ বোলার ছিলেন এবং উইকেট থেকে কিছু না কিছু আদায় করে নিতেন। এগারো বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৬৫টি উইকেট নিয়ে অবসরে যান দীর্ঘকায় এই অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার।

  • সনাথ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)

ওপেনিংয়ে নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত শ্রীলঙ্কার এই সাবেক ক্রিকেটার। যে কারণে তাকে ডাকা হয় ‘মাতারা হারিকেন’ বলে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও ছিলেন কার্যকরী। বাঁহাতি স্পিনে প্রয়োজনীয় সময়ে দলের জন্য প্রায়ই উইকেট তুলে নিতেন তিনি।

অবাক করার বিষয়, একজন খণ্ডকালীন স্পিনার হয়েও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর উইকেট সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের চেয়ে বেশি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ওয়ার্নের সংগ্রহ যেখানে ২৯৩ উইকেট সেখানে জয়সুরিয়ার সংগ্রহ ৩২৩ উইকেট। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে তাঁর মোট উইকেট সংখ্যা ৪৪০টি। অনেকে আসলে তাকে ‘পার্টটাইমার’ বলতেও নারাজ। কারণ, ক্রিকেটে তিনি এসেছিলেন বোলার হিসেবেই। কালক্রমে পরিচিতি পান ব্যাটসম্যান হিসেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link