পেদ্রোর পুরো ক্যারিয়ারটা মাঝে মাঝে চোখের সামনে ভাসে। একটা উঈঙ্গারের জীবনে কত কিছু অ্যাচিভমেন্ট, একসাথে। বার্সেলোনা প্রডাক্ট হিসেবে বার্সেলোনা সি, বি-তে খেলে আসার পর রাইকার্ডের জায়গায় পেপ যখন হটসিটে বসলেন, তখন থেকে পেদ্রো সিনিয়র ফার্স্ট টিমে। সে সময় বার্সেলোনা ইউরোপিয়ান জায়ান্ট হিসেবে আসেনি তখনও, আসবে তার পরে।
স্যামুয়েল ইতো, ইব্রাহিমোভিচ, থিয়েরি অঁরি, কার্লোস পুওল, জাভি হার্নান্দেজ, ইনিয়েস্তা এবং তরুণ সুপারস্টার লিওনেল মেসির মধ্যে চুপিসাড়ে দুটো প্লেয়ার ঢুকেছিল যাদের একজন সের্জিও বুস্কেটস এবং অন্যজন এই পেদ্রো রড্রিগেজ। তফাৎ হচ্ছে তখন থেকে প্রায় বছর পনেরো পর প্রথমজন অনেক আলোর ঝলকানি পেলেও অপরজন একটু ব্রাত্য হিসেবেই থেকে যাবেন।
অথচ পেদ্রো এমনই একজন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার যাকে কোনও কোচ কখনও হিসেবের বাইরে রাখার সাহস পাননি। একটু আগে ওর অ্যাচিভমেন্টের কথা বলছিলাম। একটু চোখ বুলোই সেগুলোতে? লা লিগা, কোপা দেল রে, সুপার কোপা দে এস্পানা, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, উয়েফা ইউরোপা লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, এফ এ কাপ -একটা লম্বা লিস্ট।
এ তো গেল ক্লাব। দেশ? ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ, উয়েফা ইউরো কাপ। তাও ব্রাজিলের কাছে ফিফা কনফেড কাপে হেরে রানার্স। একটা ফুটবল ক্যারিয়ারে আর ক’টা প্লেয়ারের এমন অর্জন রয়েছে? কারোর নেই।
পেদ্রোর কথা খুব মনে পড়ে আসলে। বার্সেলোনায় থাকাকালীন সবচেয়ে ফেভারিট প্লেয়ার পেদ্রোই ছিল। কিছুটা রাগও ছিল। প্রথম গোলটাই যেভাবে করেছিল ওয়েম্বলিতে তাতে খেপে যাওয়া স্বাভাবিক। তবুও প্লেয়ারটাকে অস্বীকার করার জায়গা কই! লেফট ফুটের প্লেয়ার, লেফট উইংয়ে মূলত খেলেছে পেপের সময়ে। ফলস নাইন মেসি হওয়ায় উপরে ওঠার অনেকটা জায়গা পেত আর কাট ইন করে হঠাৎ বক্সে ঢুকত। পেদ্রো আসলে খুব শ্যাডো, সাইলেন্ট প্লেয়ার।
সবাইকে মার্ক করতে করতে অপোনেন্ট ব্যাক হঠাৎ আবিষ্কার করবে বক্সের মধ্যে পেদ্রো ঢুকে গেছে। চেলসিতে অমন সময় একটা প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল মোরিনহোর আন্ডারে। সারির আমলে এফ এ কাপ। সবকটার ফাইনালে পেদ্রোর রেটিং কখনও ৭-এর নিচে নামেনি। অথচ গুচ্ছ গুচ্ছ তারকা, উঠতি তারকাদের ভীড়ে পেদ্রোদের তেমন কেউ মনে রাখে না। তাতে কিছু যায় আসে না যদিও। প্লেয়ার প্লেয়ারই থাকে। পারফরম্যান্স শেষ কথা, অর্জন শেষ কথা। এটাই ফ্যাক্টর।
একা একা পথ চলতে হলে যে যত আপনই হোক, তাকে সাইড করে রাখতে হয়। নয়তো ভিড় থেকে নিজে সাইড হয়ে যেতে হয়। পেদ্রো তেমন একটা প্লেয়ার। এরকম অসংখ্য ফুটবলারের উদাহরণ আছে, যাদের রিটায়ারের পর কেউ তেমন মনে রাখেনি। বিশেষ করে সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের। সেখানে অবশ্য পেদ্রো ব্যতিক্রম। যেমন অ্যালেক্সিস স্যাঞ্চেজও তাই। ফুটবল সুন্দরের পূজারী, তাতে এরা ঐ রজনীগন্ধা ঘরানার। থাকলে দারুণ সুবাস, অথচ কেউ তেমন নজর করে না।
পেদ্রো এখন লাৎজিওয় খেলছে। ইতালিতেই শেষ করবে কেরিয়ার। স্বাভাবিক নিয়মে বুট তুলে রাখবে। তারপর চ্যাপ্টার এন্ড। ওয়ান অফ দি গ্রেটেস্ট রাইট উইঙ্গারের চ্যাপ্টার এভাবেই একদিন শেষ হয়ে যাবে।