শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন যারা

প্রতিটি বিশ্বকাপ আসে নতুনের আগমণী বার্তা নিয়ে। পুরনো রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায় মাতে দলগুলো, তরুণের দেয়া নিজেদের আগমণী জয়ধ্বনি। এর মাঝেও কোথায় যেন বেজে ওঠে বিদায়ের করুণ বিষাদের সুর। পুরনো অভিজ্ঞ সেনানীরা একে একে বিদায় নেয় বাইশ গজ ছেড়ে।

কেউ বয়সের ভারে ক্লান্ত, কেউবা আবার ফিটনেস-ফর্ম ফিরে পেতে লড়াই চালাচ্ছেন। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষেও ক্রিকেট বিশ্বকে বিদায় জানাতে পারেন এক ঝাঁক ক্রিকেট তারকা। আসুন দেখে নেয়া যাক কয়েকজনকে যারা কিনা বিদায় বলে দিতে পারেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে আসন্ন বিশ্বকাপ শেষে।

  • মোহাম্মদ নবি – আফগানিস্তান

বিশ্বকাপে অভূতপূর্ব কোনো কিছু না ঘটলে একপ্রকার নিশ্চিত বিশ্বকাপ শেষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানাতে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। আফগানিস্তান ক্রিকেটের একদম শুরুর পর্যায় থেকে আজকের এই পর্যায়ে আসতে যে কজন ক্রিকেটার কিংবা সংগঠকের অবদান অনস্বীকার্য, মোহাম্মদ নবী তাঁদেরই একজন। তাঁর বিদায়ে আফগান ক্রিকেটে যে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হবে সেটা বলাই বাহুল্য।  

আফগানিস্তানের মানুষ ভালোবেসে নবীকে ডাকে ‘দ্য প্রেসিডেন্ট’ নামে। এখনো পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ১০১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এই অলরাউন্ডার। ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ১৬৬৯ রান করার পাশাপাশি ডান হাতি অফস্পিনে নিয়েছেন ৮৩ উইকেটে। পাওয়ারপ্লেতে বল করে রান আটকে রাখতে রাখতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ক্যারিয়ার জুড়ে মাত্র ৭.৩০ ইকোনমি তাঁর স্বপক্ষেই কথা বলবে। 

বর্তমানে আইসিসি টি-টোয়েন্টির অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বরে অবস্থান করছেন মোহাম্মদ নবী। যদিও বিগত কয়েক মাসে তাঁর ফর্মটা পড়তির পথে। সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়। আফগানিস্তান থেকে যে হারে নতুন প্রতিভা উঠে আসছে প্রতিনিয়ত, ৩৭ বছর বয়সী নবীর জন্য এটাই সেরা সময় তরুণদের সুযোগ করে দেয়ার। তবে জাতীয় দল থেকে অবসর নিলেও বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে খেলা চালিয়ে যাবেন এই অলরাউন্ডার। 

  • সাকিব আল হাসান – বাংলাদেশ

কোনো তর্ক ছাড়াই নিদ্বিধায় বলে দেয়া যায় বাংলাদেশ থেকে উঠে আসা সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের ক্ষুদ্র এই সংস্করণে ব্যাট কিংবা বল হাতে দুই জায়গাতেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সাকিব। 

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে বাজে সময় কাটালেও তাঁর হাতে অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটা পরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছে আজও তিনিই দলের সেরা তারকা। তাছাড়া বর্তমানে টি-টোয়েন্টি আইসিসি অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সাকিব। এখনো পর্যন্ত ১০১ টি টোয়েন্টি খেলে ১২০.৭২ স্ট্রাইকরেটে সংগ্রহ করেছেন ২০৪৫ রান। এছাড়া মাত্র ৬.৬২ ইকোনমিতে বাঁ-হাতি স্পিনের মায়াজালে ব্যাটারদের সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন ১২২ বার। 

অন্য বোলাররা যেখানে আটের নিচে ইকোনমি রাখতে পারলেই খুশি, সেখানে সাকিবের কৃপণ বোলিং নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সাকিবের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজের বোলিংয়ে পরিবর্তন আনতে জানেন। ফলে পাওয়ারপ্লে হোক কিংবা মাঝের ওভার – সবখানেই সফল সাকিব। 

বয়স কিংবা ফিটনেস নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিটা সাকিব ছেড়ে দিতে পারেন তরুণদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। জানেন দলে তাঁর জায়গা পূরণ করা কষ্টসাধ্য। ২০২৪ বিশ্বকাপের আগের দুই বছরে দল যেন তাঁকে ছাড়া গুছিয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে চাপমুক্ত সাকিব তখন ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে আরেকটু সক্রিয় হতে পারবেন। তবে একদিনের ক্রিকেটে সাকিবের লক্ষ নিশ্চয়ই থাকবে ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভালো কিছু উপহার দেয়া। 

  • অ্যারন ফিঞ্চ – অস্ট্রেলিয়া

বহু বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিগত আসরে অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ। এবারে ঘরের মাঠে শিরোপা ধরে রাখার মিশন শেষেই ঘোষণা দিতে পারেন ব্যাটপ্যাড তুলে রাখার। তবে তার আগে ফিঞ্চের সামনে সুযোগ দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হিসেবে ড্যারেন স্যামির পাশে বসার। 

অজিদের হয়ে ৯৫ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশ নিয়ে প্রায় দেড়শ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইক রেটে ফিঞ্চের সংগ্রহ ২৯১৫ রান। বলকে সীমানাছাড়া করার সহজাত ক্ষমতা তাঁকে পরিণত করেছেন বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী ওপেনার হিসেবে। বর্তমানে আইসিসি র‍্যাংকিংয়ের পাঁচ নম্বরে তাঁর অবস্থানই প্রমাণ করে ব্যাট হাতে কতোটা রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে পারেন।

৩৫ বছর বয়সী ফিঞ্চ দলে তরুণদের উঠে আসার পথটা সুগম করে দিতেই সরে দাঁড়ালেন। তাঁর অবর্তমানে ক্যামেরন গ্রিন ইতোমধ্যেই দেখিয়েছেন তিনি ফিঞ্চের জায়গাটা নিজের করে নিতে প্রস্তুত। এই তালিকার অন্যদের মতোই ফিঞ্চও অবসর পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি লিগে অংশ নেবেন। 

  • মার্টিন গাপটিল – নিউজিল্যান্ড

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল। কিউই এই তারকা ব্যাটার অতীতে বহুবারই ব্যাটহাতে তাঁর ভয়ংকর রূপ প্রদর্শন করলেও কোনো শিরোপা জিততে পারেননি। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাই গাপটিল সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবেন দলকে শিরোপা জেতানোর। 

১২১ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অংশ নিয়ে ৩৬ বছর বয়সী গাপটিলের সংগ্রহ ৩৪৯৭ রান। রানের পাশাপাশি তাঁর স্ট্রাইক রেটটাও দারুণ, ১৩৫.৮০। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডার হিসেবে গাপটিলের দক্ষতা প্রশংসাতীত। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার হিসেবে তাঁকে মেনে নিতে দ্বিমত পোষণ করবেন না কেউই। কিন্তু সমস্যাটা রয়ে গিয়েছে তাঁর ব্যাটিংয়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বড্ড অধারাবাহিক হয়ে গিয়েছেন গাপটিল।

রান করলেও সেটা নিয়মিত আসছে। অন্যদিকে উঠে আসছেন ফিন অ্যালেনের মত তরুণ ব্যাটসম্যান, যিনি কিনা সামর্থ্য রাখেন গাপটিলের রেখে যাওয়া জুতোতে পা গলানোর। এছাড়া সামনের বছরের ওডিয়াই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অধিক প্রস্তুতির লক্ষে এবারের টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষেই ক্ষুদ্র সংস্করণের এই ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিতে পারেন গাপটিল।

  • রবিচন্দ্রন অশ্বিন – ভারত

রবিচন্দ্রন অশ্বিন যেন পুরনো ওয়াইনের মত। যত বয়স বাড়ছে, ততই যেন সুমিষ্ট হচ্ছেন। নিয়মিত উইকেট তুলে নিতে পটু অশ্বিন রান আটকানোতেও সমান দক্ষ। একারণেই কিনা ভারত তাঁকে পুনরায় দলে ডেকে নিয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। 

৩৬ বছর বয়সী এই অফস্পিনার ভারতের হয়ে ৫৯ টি-টোয়েন্টি খেলে সংগ্রহ করেছেন ৬৬ উইকেট। তাঁর মাত্র ৬.৮০ ইকোনমি জানান দেয় তাঁর বিপক্ষে মেরে খেলা কতটা কঠিন। পাশাপাশি শেষদিকে নেমে ব্যাট হাতে ঝড়ো গতিতে রান তুললেও সমান দক্ষ অশ্বিন। পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসতে আরও দুই বছর বাকি থাকায় ধারণা করা হচ্ছে তরুণদের আরও বেশি সুযোগ দিতে অশ্বিন এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়াবেন।

ফলে বাড়তি পাওয়া সময়টাতে তিন একদিনের ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে পারবেন। সামনের বছর ভারতে বসবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। ২০১১ বিশ্বকাপে দলকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অশ্বিন চাইবেন শেষবেলায় আবারও ভারতবাসীকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিতে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link