বিশাল দানবের বিরাট তাণ্ডব
তিনি গুণে গুণে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ২২ খানা। বাউন্ডারি মেরেছেন ১৭ খানা। তাঁর স্ট্রাইক রেট দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়া যেন অবধারিত। ২৬৬.২৩ স্ট্রাইক রেটে তিনি রান করেছেন ২০৫। বল খেলেছেন কেবল ৭৭টি। বিস্ময়ের যেন নেই কোনো শেষ।
ড্রয়িং রুম, সেখানে এক বিশাল আকৃতির সোফা। সেখানে স্থুলকায় এক ব্যক্তি হাতে একখানা বার্গার নিয়ে উপভোগ করছেন ক্রিকেট খেলা। এটাই তো একজন স্থুলকায় ব্যক্তির জীবনযাপন। তিনি মাঠে ক্রিকেট খেলবেন সে বিষয় ভাবাটাও যেন ঘোরতর অন্যায়। আগেও যা একটু সুযোগ পেতেন, এখন তো সেসব প্রায় অসম্ভব। প্রতিটা দলের মাঠে একজন ক্রিকেটার নয়, খোঁজে একজন অ্যাথলেট। তবে স্থুলকায় গঢ়নকে যে তাচ্ছিল্য করা যে স্রেফ একটা কুসংস্কার সেটাই যেন প্রমাণ করলেন রাকিম কর্নওয়েল।
অবিশ্বাস্য এক রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার রাকিম কর্নওয়াল। সাম্প্রতিক সময়ের খুবই সুপরিচিতদের একজন তিনি। যদিও, ক্যারিবিয়ানদের হয়ে খেলেছেন মাত্র নয় ম্যাচ। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর রয়েছে দুর্দান্ত ফাইফার। অতিথি হয়ে টাইগারদের নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন কর্নওয়াল। সেবার অবশ্য তাঁর স্পিন বিষে কাবু হয়েছিল গোটা বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছিলেন নয় উইকেট। নিশ্চয়ই মনে রয়েছে, বছর খানেক আগের কথা।
সেই ছয় ফুট লম্বা দানবীয় ক্রিকেটার এবার তুলে নিয়েছেন দ্বিশতক। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তুলে নিলে নিশ্চয়ই অবাক হবার কথা নয়। আবার আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে হলেও খুব বেশি বিমোহিত হবার নয়। তবে তিনি যেটা করেছেন তা রীতিমত মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ার মতই অভূতপূর্ব ঘটনা। তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তুলে নিয়েছেন দ্বিশতক। ভাবুন তবে একবার! মাত্র ১২০ বলের খেলায় একজন তুলে নিয়েছে দ্বিশতক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে দলীয় রানও ততটা সচারচর দেখা যায়না।
তিনি এই কীর্তি গড়লেন এবারে যুক্তরাষ্ট্র্যের স্থানীয় একটা টুর্নামেন্ট অ্যাটলান্টা ওপেনে। দীর্ঘকায় গঢ়ন স্রেফ একটা বাহানা, সেটা কখনোই ক্রিকেট খেলায় বাঁধা নয়। তিনি গুণে গুণে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ২২ খানা। বাউন্ডারি মেরেছেন ১৭ খানা। তাঁর স্ট্রাইক রেট দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়া যেন অবধারিত। ২৬৬.২৩ স্ট্রাইক রেটে তিনি রান করেছেন ২০৫। বল খেলেছেন কেবল ৭৭টি। বিস্ময়ের যেন নেই কোনো শেষ।
সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে ক্যারবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ওপেনিং করতেও দেখা যায়। যদিও মূলত একজন অফ স্পিনার হিসেবেই তিনি ক্রিকেটে শুরু করেছিলেন যাত্রা। তবুও তিনি যেন দেখালেন পেশি শক্তির মুন্সিয়ানা। অবশ্য শুধু পেশিশক্তির প্রতিফলন বললে কর্নওয়েলের এই অবিশ্বাস্য ইনিংসকে খাটো করা হয়। তিনি যেন টেকনিক্যাল দিক থেকেও বেশ সমৃদ্ধ সেটা বলতেই হয়। নতুবা ৭৭ খানা বল টি-টোয়েন্টির মেজাজে ব্যাট করে যাওয়া খুবই সামান্য কোন বিষয় নয়।
মাঠের প্রায় প্রতিটা অঞ্চল দিয়েই বাউন্ডারি আদায় করেছেন কর্নওয়েল। বলগুলোর প্রাণ থাকলে হয়ত বলে উঠত, ‘ছেড়ে দে কর্নওয়াল, কেঁদে বাঁচি।’ বিশাল বিশাল সব ছক্কা হাঁকিয়েছেন। বিদ্যুৎ গতিতে বলগুলো ছুঁয়েছে বাউন্ডারি লাইন। তিনি যেন আলতো এক তাচ্ছিল্যের চপেটাঘাত করলেন ক্রিকেটের নতুন দিনের নিয়মের গালে। আর স্মিত এক হাসি দিয়ে বললেন, ‘শরীরটা কোন বাঁধা না।’ নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার একটা অদম্য ইচ্ছেই রাকিম কর্নওয়েলদের এমন বিধ্বংসী করে তোলে।
বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভ, নিজেদের প্রমাণের প্রবল তাড়না একদিন বিস্ফোরিত হয়। কর্নওয়েলের তেমনই এক দিনে ধ্বংস হয়েছে স্কয়ার ড্রাইভ। কর্নওয়ালের দিনে তাঁর দল অ্যাটলান্টা ফায়ার স্কয়ার ড্রাইভকে টার্গেট দেয় ৩২৭ রান। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার বহু আগেই যেন ম্যাচটি হেরে বসেছিল স্কয়ার ড্রাইভ। কর্নওয়েল তাণ্ডবে ১৭২ রানের পরাজয় বরণ করতে হয় প্রতিপক্ষকে।