একটা ছেলে ছুঁটে বেড়াচ্ছে দিগন্ত জোড়া মাঠ জুড়ে। হয়ত ক্রিকেট বল কিংবা ফুটবলের পেছনে। হ্যাফ প্যান্ট ছেড়ে কেবল ফুলপ্যান্টে এসেছে। নাকের নিচে হালকা হালকা ঠিক গোঁফ নয় তবে কিছু একটা আঁকিবুঁকি। স্কুলের বন্ধুদের সাথে বিন্দাস আড্ডা, মাঝেসাঝে শিক্ষক, বাবা মায়ের বকুনি আর দিনশেষে ঠিক সন্ধ্যা নাগাদ পড়ার টেবিলে বসে যাওয়া। চিরায়ত নিয়মে কৈশোরের সংজ্ঞা তো এটাই।
কিন্তু আঠারো পার করার আগেই নিজের দেশকে বিশ্বদরবারে প্রতিনিধিত্ব করবার দায়িত্ব সদ্য বলিষ্ঠ হতে শুরু করা কাঁধে এসে পড়লে করণীয় কি? এর উত্তর আজকের আলোচনায় মিলবে। আজকের আলোচনার পুরটা জুড়েই থাকবে আঠারোর গণ্ডি পেরোবার আগেই বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা ছোকড়ারা।
২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ। ১৯ বছর বয়েসে। তবে তাঁর বহু আগেই এই ফরম্যাটের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে খেলেছেন নামকরা বেশকিছু খেলোয়াড়। তাঁদের নিয়েই আজকের আয়োজন।
- মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান)
পাকিস্তান বরাবরই বিধ্বংসী সব পেস বোলার উপহার দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকে। সেই সকল বিধ্বংসী পেসারদের মধ্যে নিসঃন্দেহে মোহাম্মদ আমির একজন। তবে অনেকের অজানা তথ্য তিনি সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা। আঠারো পার করবার আগেই তিনি শিখে গিয়েছিলেন কি করে জিততে হয় শিরোপা।
তাছাড়া আজকের তালিকার তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে বেশি ম্যাচ খেলা একজন খেলোয়াড়। মোহাম্মদ আমির ২০০৯ ও ২০১০ এই দুই আসরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। দুই আসর মিলিয়ে তাঁর ম্যাচ সংখ্যা ১৩টি। উইকেট ১৪টি। ২০০৯ সালে শিরোপার স্বাদ পেয়েছিলেন আঠারো পার না করা কিশোর মোহাম্মদ আমির।
- রশিদ খান (আফগানিস্তান)
বর্তমান বিশ্বক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সমীহ করার মতো একদল আফগানিস্তান। তাঁরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেকোন দলের সাথে যেকোন সময় ঘটিয়ে দিতে পারে অঘটন। এর পেছনে যেমন তাঁদের মারকুটে ব্যাটারদের অবদান রয়েছে, ঠিক সমান অবদান রয়েছে বিশ্বনন্দিত স্পিনারদের। রশিদ খান, মুজিব-উর রহমান, মোহাম্মদ নবিদের মতো কার্যকরী স্পিন বোলার রয়েছে তাঁদের।
রশিদ খান যিনি কিনা বর্তমান বোলারদের মধ্যে সেরাদের একজন তিনি তাঁর কৈশরেই খেলেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০১৬ সালে যখন তিনি আফগানিস্তানের জার্সি গায়ে তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তখন তাঁর বয়স ছুঁয়ে দেখেনি আঠারোর ঘর। তবুও নিজের বোলিং নৈপুন্যে সেবার সাত ম্যাচে রশিদ খান নিয়েছিলেন এগারো উইকেট।
- তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল একজন তামিম ইকবাল মানের ওপেনার হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে গত বছর কয়েক যাবৎ। আশা জাগিয়ে হারিয়ে গিয়েছে অনেকে, অনেকে আবার আশার প্রদীপে স্ফুলিঙ্গও হয়ে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ওপেনার দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আস্থার প্রতীক।
২০০৭ সালে নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা তামিম ইকবাল খেলেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনি আসরে। তখন তামিম ছিলেন আঠারো বছর বয়সী এক কিশোর। অনভিজ্ঞ কিশোর তামিম ২০০৭ আসরে পাঁচ ম্যাচে রান করেছিলেন ৫৬।
- আহমেদ শেহজাদ (পাকিস্তান)
তালিকায় থাকা বাকি এশিয়ান ক্রিকেটারদের মতোই আরেক এশিয়ান আহমেদ শেহজাদ খেলেছিলেন কিশোর বয়সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো জাকজমকপূর্ণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। ২০০৯ সালে যেবার পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলো সেবার আহমেদ শেহজাদ ছিলেন আমিরের সতীর্থ।
তবে আমিরের মতো খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি শেহজাদ। আঠারো বছর বয়সী কিশোর শেহজাদ একটিমাত্র ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই একটি ম্যাচে তাঁর রান সংখ্যা মাত্র চার। কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জয়ের তালিকার শুরুর দিকেই অবস্থান করবেন আহমেদ শেহজাদ।
- পল স্টার্লিং (আয়ারল্যান্ড)
এশিয়ান খেলোয়াড়দের অতি অল্প বয়সেই নিজের দেশকে ক্রিকেট ময়দানে প্রতিনিধিত্ব করার ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কেননা এশিয়ার বাইরে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে কিশোর বয়সে বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা একমাত্র উদাহরণ আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিং।
তিনি ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন কিশোর বয়সে। মাত্র একটি ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন পল স্টার্লিং। ব্যাটহাতে তিনি দলের প্রয়োজনে কেবল সতেরোটি রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
এমন অনেক কিশোর হয়ত পরবর্তীতে পদার্পণ করবেন বিশ্ব ক্রিকেটে। যেমন নাসিম শাহ মাত্র ১৬ বছর বয়সে পাকিস্তানের হয়ে ক্রিকেটের বনেদী ফরম্যাট টেস্টে খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তবে বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে আবার কোন কিশোরকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার নয়। হয়ত এমন কেউ আসবেন যিনি কৈশরেই কেড়ে নেবেন সব আলো।