রাজার চার জাতি তত্ত্ব: পরিকল্পনা ও প্রত্যাখান

পুরো পাকিস্তান জুড়েই এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। গুঞ্জন আছে রদবদল আসবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডেও (পিসিবি)। বোর্ড প্রেসিডেন্ট রমিজ রাজা নিজেই বলেছেন তিনি হয়ত ছেড়ে দিতে পারেন তাঁর দায়িত্ব। তবে সে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আগে আইসিসির বৈঠকে নিজের নতুন এক মডেল উপস্থাপন করে গেছেন। তবে সে প্রস্তাবে সাড়া পাননি রমিজ। চারজাতি টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব নাকোচ হয়েছে আইসিসির বার্ষিক সভায়। কি ছিল সে পরিকল্পনা? কেনই বা হল তা প্রত্যাখান?

২০০৭ সালের পর নতুন কোন টুর্নামেন্ট মডেল উপস্থাপিত কিংবা গৃহীত হয়নি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির পক্ষ থেকে। সে চিন্তা ভাবনা থেকেই নতুন এক টুর্নামেন্ট মডেল দাঁড় করিয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। সে মডেল অনুযায়ী চারটি দেশ প্রতিবছর খেলবে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। সে চার দেশের মধ্যে পাকিস্তান বাদে আরও থাকবে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এই চার দেশের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে আয়োজক দেশের পরিসীমা। তবে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকবে আইসিসির উপরই।

রমিজ রাজার ক্রিকেট বোর্ড পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনাই উপস্থাপন করেছিল ১০ এপ্রিলের বৈঠকে। এই চার দল প্রথমে গ্রুপ পর্বে একে অপরের মুখোমুখি হবে একবার করে। গ্রুপ পর্বে ম্যাচ হবে ছয়টি। গ্রুপ পর্বের সেরা দুই দল খেলবে ফাইনাল। সহজ সমীকরণ। এর থেকেও বড় বিষয় প্রচুর অর্থের ছড়াছড়ি। রমিজ রাজার প্রস্তাবনা অনুযায়ী আইসিসি এই টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করতে পারত। এত বিশাল পরিমাণ অর্থের লোভনীয় এক প্রস্তাব নাকোচের পেছনে নিশ্চয়ই বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

প্রথমমত আইসিসির বেশ কিছু সদস্য দেশের এই টুর্নামেন্ট ফরম্যাট নিয়ে ছিল অনীহা। যেহেতু তাঁরা খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না বার্ষিক এই টুর্নামেন্টে, সেহেতু তাঁদের কাছে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া বেশ স্বাভাবিক। তবে রমিজ রাজার কাছে ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল তাঁদের কাছ থেকে ইতিবাচক মতামত বাগিয়ে নেওয়ার। তাঁর এই টুর্নামেন্ট মডেলের লভ্যাংশ আইসিসির নিয়ম অনুসারেই ভাগ করে দেওয়ার কথা সকল সদস্য দেশগুলোর মাঝে। তবুও এতে আশানুরুপ সাড়া পেলেন না পিসিবি প্রেসিডেন্ট।

এছাড়া অধিকাংশ বোর্ড দ্বিজাতিক সিরিজগুলোতে অধিক মনোযোগ দিতে আগ্রহী। আইসিসির বার্ষিক পঞ্জিকা সে ভাবেই সাজানো। তাছাড়া আইসিসি চায় প্রতিবছর আইসিসির কোন না কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে। চলমান বিশ্ব টুর্নামেন্টে একটি করে আসর প্রতিবছর আয়োজন করতে চায় আইসিসি। সেক্ষেত্রে আর্থিক আয় যেমন বাড়বে তেমনি করে মোটামুটি অধিকাংশ দলগুলোর অংশগ্রহণে সুযোগ থাকবে। তাই হয়ত রমিজ রাজার চার জাতি টুর্নামেন্টের মডেল ধোপে টেকেনি।

অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ বেগতিক। এই দুই দল এখন আর আইসিসির টুর্নামেন্ট ছাড়া মুখোমুখি হয় না ক্রিকেট মাঠে। তাঁদেরকে প্রতিবছর অন্তত একবার মুখোমুখি করবার পরিকল্পনা থেকেই হয়ত রমিজ রাজা তাঁর এই কাঠামো সাজিয়েছিলেন। এই টুর্নামেন্টের প্রধান আকর্ষণই ছিল এই দুই দলের লড়াই। উপমাদেশে এই দুই দলের লড়াই যে কতটা জনপ্রিয় তা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই।

তবে রমিজ রাজার এই পরিকল্পনা আদোতে বাস্তবায়িত হত কি না সে নিয়ে একটা সংশয় ছিল আইসিসির বার্ষিক সভাতে অংশ নেওয়া বোর্ডগুলোর মধ্যে। যেহেতু ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব একতা সন্তোষজনক জায়গায় নেই সেহেতু ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে নিষেধাজ্ঞা আসবে না এই টুর্নামেন্ট অংশ নেওয়ার তা এখনই বলে দেওয়া কঠিন। অতীতেও তো ভারত সরকার দ্বারা এই দুই দলের মাঠের ক্রিকেট নিষেধাজ্ঞার বেশকিছু নজির রয়েছে। সুতরাং সে দিক বিবেচনায় বোর্ডগুলোর অসম্মতি ছিল হয়ত।

তাছাড়া প্রথমে ভাবা হচ্ছিল ভারতর ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের ক্ষীণ সম্মতি রয়েছে রমিজ রাজার পরিকল্পনায়। তবে আইসিসির সভায় তাঁদের তেমন কোন সরব অংশগ্রহণ ছিল না চার জাতি টুর্নামেন্টের পক্ষে, বরং তাঁরা নিজেদের খেলায় ঠাসা ক্যালেন্ডার এবং দ্বিজাতীয় সিরিজ আয়োজনে তাঁদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে সভায়।

শেষমেশ সভায় অংশগ্রহণ করা সকলের সম্মতিক্রমে রমিজ রাজার চার জাতি টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব প্রত্যাখান হয়। তবে সাধারণ ক্রিকেট ভক্তদের কাছে এ খবর নিশ্চয়ই খুব একটা সন্তোষজনক খবর নয় তা বলেই দেওয়া যায়। কেননা ক্রিকেটের চার পরশাক্তির মাঝে লড়াইয়ের আরও একটি মঞ্চ হতে পারত এই টুর্নামেন্ট। তাছাড়া বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছাড়া ভারত-পাকিস্তানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার একটি বাড়তি সুযোগ পাওয়া যেত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link