জীবন নাকি কোনো দৌড় প্রতিযোগিতা নয়। তবুও, পৃথিবী শুধু প্রথম হওয়াদেরই মনে রাখে, দ্বিতীয়দের কোনো স্থান নেই এখানে। রঙ্গনা হেরাথের শুরুর গল্পটাও ছিল তেমনই।
ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় তিনি ছিলেন স্বয়ং মুত্তিয়া মুরালিধরনের আড়ালে। কিন্তু, যখন মুরালিধরন অবসর নিয়ে ফেললেন, তখন শ্রীলঙ্কার তো বটেই একটা সময় হয়ে উঠলেন বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা স্পিনারদের একজন। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে তিনি ছিলেন ‘দ্য লাস্ট ওয়ারিয়র’!
টেস্ট অভিষেক সেই ১৯৯৯ সালে। ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ৯৩ টেস্টে গিয়ে। ১৯ বছরের লম্বা ক্যারিয়ার! অথচ, এর মধ্যে ২০১০ সালের জুলাই অবধি মাত্র ২২ টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। মন্দ করেননি, ৩৭.৮৮ গড়ে পেয়েছিলেন ৭১ টি উইকেট। ওই যে, দলে যে তখন মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো দানব ছিলেন। সেখানে, রঙ্গনা হেরাথকে সুযোগ দেওয়া তো স্রেফ বিলাসিতাই।
তবে, লঙ্কান টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য এই ‘স্রেফ বিলাসিতা’কেই একটা সময় অপরিহার্যতায় পরিণত করতে পেরেছিলেন তিনি। আর তাই যখন ৪০-এরও বেশি বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান, তখন দর্শক বা লঙ্কান ক্রিকেট মহলেও একটা চাপা আর্তনাদ ছিল। কি অদ্ভুত ব্যাপার!
হয়তো, শততম টেস্ট অবধি অবসরটা আটকে রাখতে পারতেন। কিন্তু, বয়সের বোঝা তো ছিলই, সাফল্যের পরেও হেরাথের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল তাঁর ফিটনেস। বয়সের ভারে চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েন তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরু নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও, শেষ বেলায় আক্ষেপ থাকার কথা নয় হেরাথের। ২০১০-এর জুলাইয়ের পর থেকে শ্রীলঙ্কা খেলেছে ৮২ টি টেস্ট। হেরাথ ছিলেন এর মধ্যে ৭১ টিতেই। এখানে তিনি পেয়েছেন ৩৬২ টি উইকেট।
মানে মুরালির বিদায়ের পরই মুরালির সব ছায়া মুছে ফেলতে পেরেছিলেন হেরাথ। হেরাথ অনেক ক্ষেত্রে মুরালিকে ছাড়িয়েও গেছেন। টেস্টে ম্যাচ সেরার পুরস্কারে কিন্তু হেরাথই এগিয়ে। যদিও, এই আড়ালে থাকাকে আক্ষেপ নয় বরং উপকার হিসেবেই দেখেন হেরাথ। তিনি একবার বলেছিলেন, ’১০ বছরে আমি যে ভিত্তিটা পেয়েছি, তার জন্যই পরের ১০ বছর সাফল্য পেয়েছি।
সব মিলিয়ে ৪৩৩ টি টেস্ট উইকেট তার ঝুলিতে। লঙ্কান ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। সবার ওপরে থাকা মুরালিধরন নিয়েছেন ৮০০ টি টেস্ট উইকেট। মুরালিধরন শুধু শ্রীলঙ্কার ইতিহাসেই নয়, টেস্টের ইতিহাসেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার।
২০১১ সালেই হেরাথের সুবাদেই শ্রীলঙ্কা প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট জয় পেয়েছিল। ১১টি উইকেট পেয়েছিলেন সেবার। ২০১২ সালেও ৬০ টি টেস্ট উইকেট নিয়ে টেস্ট বোলারদের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটও তাঁকে মনে রাখবে। কারণ, শততম টেস্টে মুশফিকুর রহিমের সাথে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক হিসেবে যে তিনিই নেমেছিলেন টস করতে।
ধুঁকতে থাকা লঙ্কান ক্রিকেটের বিপদ দীর্ঘায়িত করে আরেকজন মহীরূহ হয়ে তিনি বিদায় নিয়েছেন ২০১৮ সালে। এর আগে মুরালিধরণের বিদায়ের পর লঙ্কান ক্রিকেট যে হাহাকার তৈরি হয়েছিল, সেটা গায়েব হয়েছিল এই হেরাথে। তবে, হেরাথের বিদায়ের ক্ষত এখনো শুকায়নি। কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় যে, আরো একজন হেরাথ সহসাই খুঁজে পাবে না দ্বীপ রাষ্ট্রটি।