আইপিএল বুলিঙ ও যুজবেন্দ্র চাহাল

ভারতীয় লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্যারিয়ার শুরু হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। এরপর তিনি বিরাট কোহলির র‌য়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলেছিলেন আট বছর। এখন অবশ্য সামলাচ্ছেন রাজস্থান রয়্যালসের স্পিন আক্রমন।

রাজস্থান ক্লাব ও ভারতীয় দলের সতীর্থ রবিচন্দ্রন আশ্বিন এবং করুন নায়ারের সাথে এক আড্ডায় যুজবেন্দ্র চাহাল এবার জানিয়েছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে থাকাকালীন তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনার কথা। ২০১৩ সালে ম্যাচ পরবর্তী পার্টিতে মদ্যপ অবস্থায় দলের বিদেশি এক খেলোয়াড় চাহাল-কে পনেরো তলায় বারান্দায় উপর থেকে ঝুলিয়ে রেখেছিল বলে জানান চাহাল। অবশ্য ওই বিদেশি’র নাম এখনও বলেননি তিনি।

চাহালের এমন বক্তব্য বেশ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট বিশ্বে; এবার এমন ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে নিজের মতামত দিয়েছেন ভারতের সাবেক কোচ রাবী শাস্ত্রী।

ক্রিকেট বিষয়ক ইসপিএনক্রিকইনফোতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শাস্ত্রী চাহালের ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এমন ঘটনায় দায়ীদের কখনো ক্রিকেটের নিকটে আসতে দেওয়া উচিত নয়।’

শাস্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি জানি না কে এসবের সাথে জড়িত, তবে সে নিশ্চিত সচেতন অবস্থায় ছিল না। যদি এমন হয় ঘটনাটি, তবে নিশ্চিত এটি উদ্বেগজনক। একজন মানুষের জীবন তখন ঝুঁকি-তে ছিল, কিছু মানুষ হয়তো এটিকে হাস্যকর ভাবতে পারে কিন্তু আমার জন্য এটি মোটেও এমন নয়।’

ভারতের সাবেক কোচ রাবী শাস্ত্রী এখন আইপিএলে ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন যে ব্যক্তি এমন কাজ করতে চেয়েছে সে নিশ্চয় সুস্থ অবস্থায় ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে এসব কাজ করতে গেলে ভুল হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে বেশি। এমন ঘটনা মেনে নেওয়া কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়।

এছাড়াও আরো বেশ কিছুদিন আগে চাহাল জানিয়েছিলেন, ২০১১ সালের আইপিএলেও তাঁর সাথে এমন ঘটনা ঘটে। মুম্বাইয়ের সতীর্থ জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন ও অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস তাঁর হাত-পা এবং মুখ বেঁধে রুমের এক কোনায় ফেলে রাখে এবং সারা রাত তার কথা ভুলেও গিয়েছিল এই দুই বিদেশি। পরদিন সকালে উদ্ধার করার আগ পর্যন্ত সারারাত চাহাল হাত-পা এবং মুখ বাঁধা অবস্থায় ছিলেন।

এমন ঘটনায় জড়িতদের আজীবন নিষেধাজ্ঞা দাবী করে রাবী শাস্ত্রী বলেন, ‘এমন নিষ্ঠুর কথা আমি প্রথম শুনেছি। আজ যদি এমন ঘটনা ঘটে, কারো জীবন সংশয়ে পড়ে যায় তবে জড়িত ব্যক্তিকে রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো উচিত এবং আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘সারা জীবন ক্রিকেটের কাছে আসতে না দিলে সেই খেলোয়াড় বুঝতে পারবে ঘটনাগুলো আদৌ হাস্যকর ছিল কি না।’

যুজবেন্দ্র চাহাল, যিনি রাবী শাস্ত্রী’র সময়েই ভারতীয় দলের স্পিনার ছিলেন, জানিয়েছেন খুব বেশি মানুষ তার এমন অভিজ্ঞতা জানে না কারন তিনি এসব নিজের কাছেই রেখেছিলেন এতদিন।

অবশ্য এমন মানসিকতার সমালোচনাই করেছেন চাহালের সাবেক কোচ রাবী শাস্ত্রী। সাবেক ভারতীয় এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘এমন দুর্ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীর উচিত আরো মর্মান্তিক কিছু ঘটে যাওয়ার অপেক্ষায় না থেকে দ্রুত রিপোর্ট করা। কেউ কখনো চায় না তাকে সচেতন করার জন্য দুর্ভাগ্যজনক কিছু ঘটে যাক৷ তাই যদি এমন কিছু ঘটে তবে এগিয়ে এসে যথাযথ কতৃপক্ষ-কে অবগত করতে হবে; যেমনটি কেউ ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেলে এন্টি করাপশন ইউনিট-কে জানাতে বলা হয়েছে।’

যুজবেন্দ্র চাহাল অবশ্য সাথে সাথে জানান নি কিছুই, বরং নয় বছর পরে রাজস্থান রয়্যালসের এক আড্ডায় নিজের কথাগুলো বলেছেন সতীর্থদের সাথে। আড্ডার ভিডিও-টি রাজস্থান নিজেদের সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার পরেই মূলত জনসম্মুখে আসে ঘটনাগুলো।

এখন দেখার বিষয়, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স অথবা ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। হয়তো এর মধ্য দিয়ে আইসিসিও ক্রিকেট বুলিঙ নিয়ে সরব হয়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link