অপেক্ষা আরও একটি রুপকথার রাতের

গেল বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল নিশ্চয়ই ভুলে যাননি পেপ গার্দিওলা। তাইতো রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ থেকে ড্র করতে পারাটাই ছিল যেন মূল চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জটা ঠিকঠাক উতরে যেতে পেরেছে ম্যানচেস্টার সিটি। তবে দ্বিতীয় লেগে ইতিহাদে চাপে থাকার কথা সিটির।

১-১ গোলে ড্র। প্রথমে কামাভিঙ্গার গতিময় ছুটে চলা। এরপর ভিনিসিয়াস জুনিয়রের পায়ের কারিকুরি। অতঃপর সজোরে এক মাপা শট। ব্যাস! তাতেই গোটা সান্তিয়াগো বার্নাব্যু যেন হয়ে যায় এক শুভ্র সমুদ্র। সেই সমুদ্রের মাঝে এক চিলতে নিলাভ আকাশকে মিলিয়ে দেন আবার কেভিন ডি ব্রুইন।

ভিনিসিয়াসের করা শ্যুটটা যদি হয় কোন ফাইটার জেটের গতি। তবে ব্রুইনের ছোড়া বলটা রীতিমত রকেট। থিবো কোর্তোয়ার যেন করবারই কিছু ছিল না। পুরো ম্যাচ জুড়েই লড়াইটা হয়েছে দূর্দান্ত। এক পেশিয়া ম্যাচ হবে বলেই ধারণা করেছিল অনেকে। তবে রিয়াল মাদ্রিদ আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বন্ধনটা যে অনেকটাই ভিন্ন।

এখন দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে দুইদলেরই সুযোগ রয়েছে ফাইনালের টিকিট নিজেদের করে নেওয়ার। সেদিক থেকে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে সিটিজেনরা। গেল আসরে এই ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়েই লস ব্ল্যাঙ্কোসরা লিখেছিল রুপকথা। এবার রুপকথা না হোক, বড্ড সাদামাটা একটা রচনা তো লিখে ফেলতেই চাইবে পেপ গার্দিওলার শীষ্যরা।

ব্যবধানটাও তো খুব একটা নেই। বরং সমান-সমান। যদিও ম্যানচেস্টার সিটির উপর একটু বাড়তি চাপ থাকবেই। প্রথমত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে সিটির সামনে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের আগে প্রিমিয়ার লিগের একটি ম্যাচ খেলতে হবে আর্লিং হাল্যান্ডদের। এভারটনের বিপক্ষে সে ম্যাচটায় চাইলেই মূল একাদশকে বিশ্রাম দিতে পারছেন না গার্দিওলা।

কেননা ম্যানচেস্টার সিটির ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে আর্সেনাল। একই দিনে ব্রাইটনের বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্সেনাল। সিটির পা হড়কে গেলেই শীর্ষে উঠে যাবে গানার্সরা। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাঙ্ক্ষিত বিশ্রামটা হয়ত কম পাবে ম্যানচেস্টার সিটির মূল একাদশের খেলোয়াড়রা।

অন্যদিকে, রিয়াল মাদ্রিদ ইতোমধ্যেই কোপা ডেল রে শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে। মাদ্রিদের লা লিগা জয়ের সুযোগ নেই। সেদিক থেকে ইতিহাদে যাওয়ার আগে, চাইলে কার্লো আনচেলত্তি মূল একাদশের খেলোয়াড়দের বিশ্রামের সুযোগ করে দিতে পারেন। সেদিক থেকে উজ্জীবিত একটা স্কোয়াড নিয়েই ইংল্যান্ডে যাবে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।

তাছাড়া, কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এডার মিলিটাও ফিরবেন মাদ্রিদের স্কোয়াডে। কিন্তু নাথান আকে ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসাটা কঠিন। যদিও কাইল ওয়াকার আকের সেই শূন্যস্থানটা পরিপূর্ণ করেছেন। ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে বেশ লড়াই করতে হয়েছে ওয়াকারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মাদ্রিদের রক্ষণের সামনে ফর্মের তুঙ্গে থাকা আর্লিং হাল্যান্ডও ছিলেন পুরোপুরি নিষ্প্রভ।

সেই বিষয়টি নিয়েও বাড়তি ছক কষতে হবে পেপ গার্দিওলার। খানিক দুশ্চিন্তা আনচেলত্তিকেও করতেই হচ্ছে। শেষ দুই ম্যাচ করিম বেনজেমা ছিলেন নিজের ছায়া হবে। দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের এমন আড়ালে রয়ে যাওয়া মোটেও এড়িয়ে যাওয়ার নয়।

সবকিছু মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় লেগে সিটির সামনে নির্ভার হয়ে খেলার সুযোগ নেই। চাপটা বেশিই থাকবে সিটিজেনদের। বরং রিয়াল মাদ্রিদ হয়ত চাপ মুক্ত থেকে নিজেদেরকে মেলে ধরতে চাইবে প্রতিপক্ষের হোম গ্রাউন্ডে। আরও একটি জম্পেশ লড়াই তবে অপেক্ষা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link